ময়মনসিংহে  মাত্র ১৫০ টাকা খরচে পুলিশে চাকরি পেলেন ১৯ নারীসহ ১৪২ জন  

ময়মনসিংহে  মাত্র ১৫০ টাকা খরচে পুলিশে চাকরি পেলেন ১৯ নারীসহ ১৪২ জন  

bmtv new No Comments

স্টাফ রিপোর্টার, বিএমটিভি নিউজঃ  ময়মনসিংহে  মাত্র ১৫০ টাকায় ঘুষ-তদবির ছাড়াই  নারীসহ ১৪২জন  পুলিশে চাকরি পেয়ে যেমন খুশি অতিসাধারণ পরিবার থেকে আসা এসব তরুণ-তরুণী, তেমনি তাদের এমন সাফল্যে আনন্দে কাঁদতে দেখা গেছে অনেক অভিভাবকদেরও। স্বচ্ছ এ নিয়োগের জন্য তারা ধন্যবাদ জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে।

ফলাফল ঘোষণার পর জেলা পুলিশ সুপার মো. আহমার উজ্জামান জানান, এবার জেলায় পুলিশ কনস্টেবল পদে ৪ হাজার ৮২২ জন আবেদনকারীর মধ্যে শারীরিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন ১ হাজার ৪০৬ জন। যেখান থেকে লিখিত পরীক্ষায় অংশ নেন ৫৬৮ জন। তাদের মধ্যে ১২৩ জন পুরুষ ও ১৯ জন নারীসহ মোট ১৪২ জন প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। ১২৩ জন পুরুষের মধ্যে সাধারণ কোটায় ৯০ জন, মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ১৬ জন, পুলিশ পোষ্য কোটায় ১২ জন, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী কোটায় ৩ জন এবং আনসার-ভিডিপি কোটায় ২ জন নির্বাচিত হয়েছেন। নারীদের মধ্যে ১৭ জন সাধারণ কোটায়, একজন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী কোটায় এবং পোষ্য কোটায় একজন রয়েছেন।


ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ের কান্দিপাড়া গ্রামের হিমেল মিয়া। ১১ বছর আগে বাবাকে হারিয়ে অভাব-অনটনের সংসারে বড় হয়েছেন। তবে কষ্ট করে চালিয়ে গেছেন পড়াশোনা। এবার সংসারের সেই কষ্ট দুর করার পালা। কেননা চাকরিটা এবার যে তিনি পেয়ে গেছেন স্বপ্নের বাংলাদেশ পুলিশে। তাইতো মাকে জড়িয়ে ধরে আনন্দে চোখের পানি ফেলেছেন হিমেল।

একই অবস্থা ময়মনসিংহের ত্রিশালের বৈলর এলাকার মরিয়ম আক্তার হ্যাপিরও। দুই মাস আগেই পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম বাবাকে হারিয়েছেন। এরপর থেকে মা-মেয়ের সংসারে একমাত্র অবলম্বন তিনি। ভাবেননি প্রথম আবেদনেই মিলে যাবে চাকরি। ফলাফলে নিজের নাম শুনে স্বভাবতই আবেগাপ্লুত হ্যাপি। বুধবার (৩০ মার্চ) দিবাগত রাত ১টায় ময়মনসিংহের পুলিশ লাইন্স মাঠে কনস্টেবল পদে নিয়োগ পরীক্ষার ফলাফল ঘোষণার পর চোখে পড়ে এমন অনেক গল্প। চাকরি পাওয়ার পর ১৪২ জন তরুণ-তরুণীসহ অভিভাবকদের বাধভাঙ্গা উচ্ছ্বাসে ভেঙে যায় মধ্যরাতের নিস্তব্ধতা। মাত্র ১২০ টাকা খরচ করে পুলিশ কনস্টেবল পদে আবেদন করেন চাকরিপ্রার্থীরা। পরবর্তীতে শারীরিক সক্ষমতা, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র যাচাই-বাছাই, লিখিত ও ভাইভা পরীক্ষার মাধ্যমে দেশের বৃহৎ এ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীতে নাম লেখান তারা। মেধার মূল্যায়নে চাকরিপাওয়া ব্যক্তিরা বলছেন, সেবা প্রদানের মাধ্যমে পুলিশের স্বচ্ছতা ফুটিয়ে তুলবেন তারা।

প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত মরিয়ম আক্তার হ্যাপি বলেন, গত জানুয়ারিতে আমার বাবা মারা যান। এরপর আমি মানসিকভাবে ভেঙে পড়ি। তারপর কয়েকজনের মুখে শুনে আমি কনস্টেবল পদে আবেদন করেছিলাম, কিন্তু ভাবতে পারিনি যে আমি টিকে যাব। আমার খুব ভালো লাগছে। এই মুহূর্তে আমার বাবা পাশে থাকলে তিনি অনেক খুশি হতেন। তবে আমার বাবার আত্মা যেন শান্তি পায় এটা দেখে যে, আমার মেয়ে দেশের জন্য ভালো কিছু করছে, মানুষের সেবা করছে।নান্দাইলের আরেক তরুণ মাহমুদুল হাসান সজীব বলেন, ২০১৯ সালে আমার বড় বোনের পুলিশের এসআই পোস্টে চাকরি হয়েছিল একদম বিনামূল্যে। সেখান থেকে আমি অনুপ্রেরণা পেয়েছিলাম যে পুলিশের চাকরি পেতে বাড়তি কোনো টাকা বা সুপারিশ লাগে না। এজন্য তখন থেকেই আমি প্রস্তুতি নিতে শুরু করি এবং এবার আমি পুলিশ কনস্টেবল পদে নির্বাচিত হয়েছে।

পুলিশ সুপার বলেন, নিয়োগবিধি সংশোধন হয়েছে এবং এটা খুবই আধুনিক প্রক্রিয়া। পুরো প্রক্রিয়ায় কোনোভাবে অনৈতিক সুবিধা নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এই পদ্ধতিতে আমরা শতভাগ স্বচ্ছতার সঙ্গে নিয়োগ দিতে পারি। তাতে করে যোগ্য লোকদেরই বেছে নেওয়া হয়। কেননা এই যাচাইয়ের ভিত্তিই হচ্ছে মেধা ও যোগ্যতা। আমার প্রত্যাশা, যারা নিয়োগ পাচ্ছে আগামী দিনের উন্নত বাংলাদেশের পুলিশি সেবাকে আরও গতিশীল করবে।##