You must need to login..!
Description
মতিউল আলম, বিএমটিভি নিউজঃ বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিএফআরআই) বিজ্ঞানীরা এবার হ্যাচারিতে দেশে প্রথমবারের মত বাণিজ্যিক গুরুত্বপূর্ণ শোল মাছের কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে পোনা উৎপাদনে সফলতা অর্জন করেছে। চলতি এপ্রিল মাসে ইনস্টিটিউটের ময়মনসিংহস্থ স্বাদুপানি কেন্দ্রে এ সফলতা অর্জিত হয়। গবেষক দলে ছিলেন মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো: শাহাআলী, উর্দ্ধতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো: আশিকুর রহমান, বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো: রবিউল আওয়াল, মালিহা খানম, ফারজানা জান্নাত আঁখি ও মো: সাইফুল ইসলাম। গবেষক দলের প্রধান ড. মো: শাহাআলী এ প্রসঙ্গে বলেন, শোল মাছের প্রজনন ও চাষ অন্যান্য মাছের তুলনায় অপেক্ষাকৃত জটিল। এরা অন্যান্য মাছের মত খৈল/কুঁড়া জাতীয় খাবার খেতে অভ্যস্ত নয়। ফলে পোনা তৈরির জন্য মা-বাবা অর্থাৎ ব্রুড মাছ তৈরি করা খুব কষ্টকর বিষয় ছিল। প্রথমে এদেরকে প্রোটিন সমৃদ্ধ দেশীয় একটি খাবারে অভ্যস্ত করা হয়েছে। অতঃপর ব্রুড তৈরি করে হরমোন ইনজেকশনের মাধ্যমে পোনা তৈরি করা হয়েছে।
এছাড়া এ মাছটি স্বজাতিভোজী হওয়ায় একটি আরেকটিকে ধরে ধরে খায়। ফলে পোনা বাঁচিয়ে রাখাও ছিল আরেকটি চ্যালেঞ্জ।
বাংলাদেশে মিঠাপানির দেশীয় প্রজাতির মাছের মধ্যে অন্যতম জনপ্রিয় মাছ শোল। এর বৈজ্ঞানিক নাম Channastriata। এ মাছটি খেতে সুস্বাদু এবং পুষ্টিগুণ সম্পন্ন হওয়ায় বাজারে এর প্রচুর চাহিদা রয়েছে। বাংলাদেশ ছাড়াও চীন, শ্রীলঙ্কা, ভারত, নেপাল, পাকিস্তানসহ দক্ষিণ পূর্ব-এশিয়ায় এ মাছ পাওয়া যায়। শোল মাছে মানব দেহের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি ও মিনারেল রয়েছে। প্রতি ১০০ গ্রাম ভক্ষণযোগ্য মাছে প্রোটিন ১৬.২ গ্রাম, আয়রন ০.৫৪ মিলিগ্রাম, ক্যালসিয়াম ৯৫ মিলিগ্রাম, ফসফরাস ০.১৯ মিলিগ্রাম, জিংক ১০৮০ মাইক্রোগ্রাম। খাল-বিল, হাওড়-বাওড়, ¯্রােতহীন জলধারা ও প্লাবনভুমিতে এক সময় শোল মাছ প্রচুর পরিমানে পাওয়া যেত। বর্তমানে জলাশয় সংকোচন, জনসংখ্যা বৃদ্ধি, পানি দূষণ এবং অতি আহরনের ফলে মাছটির বিচরণ ও প্রজননক্ষেত্র বিনষ্ট হওয়ায় এর প্রাপ্যতা সাম্প্রতিক সময়ে অনেক হ্রাস পেয়েছে। বর্তমানে এ মাছের বাজার মূল্য অনেক বেশি। এ মাছটিকে হারিয়ে যাওয়ার হাত থেকে রক্ষা করতে এবং চাষের জন্য পোনার প্রাপ্যতা নিশ্চিত করতে এর কৃত্রিম প্রজনন, পোনা উৎপাদন ও চাষ ব্যবস্থাপনা কৌশল উদ্ভাবনের লক্ষ্যে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের ময়মনসিংহস্থ স্বাদুপানি কেন্দ্রে এ মাছের কৃত্রিম প্রজনন ও পোনা উৎপাদন নিয়ে গবেষণা শুরু করা হয়। গবেষণার মাধ্যমে দেশে প্রথমবারের মত হ্যাচারিতে চলতি এপ্রিল মাসে দেশীয় শোল মাছের কৃত্রিম প্রজনন ও পোনা উৎপাদনে সফলতা অর্জিত হয়।
বিএফআরআই হতে পরিচালিত গবেষণা থেকে দেখা যায়, এ মাছের প্রজননকাল সাধারণত এপ্রিল মাস থেকে শুরু হয়ে অক্টোবরের মাঝামাঝি পর্যন্ত হলেও এপ্রিল-আগষ্ট এদের সর্বোচ্চ প্রজনন মৌসুম। পুরুষ মাছের তুলনায় স্ত্রী মাছ আকারে অপেক্ষাকৃত বড় হয়। এ মাছের ডিম্বাশয় এপ্রিল মাস থেকে পরিপক্ক হতে শুরু করে। এপ্রিল মাসে স্ত্রী মাছের জিএসআই মান গড়ে ৫.৩৬% এবং ফেকান্ডিটি (ডিম ধারণ ক্ষমতা) ১৩০০০- ২১০০০। প্রতি গ্রাম স্ত্রী মাছে গড়ে ৮০-৯০টি ডিম পাওয়া যায়।
এ প্রসঙ্গে ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. ইয়াহিয়া মাহমুদ বলেন যে, দেশীয় শোল মাছের কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে পোনা উৎপাদন করা ছিল ইনস্টিটিউটের জন্য একটি অন্যতম চ্যালেঞ্জ। দীর্ঘ গবেষণার পর চলতি এপ্রিল মাসে শোল মাছের প্রজনন বিষয়ে সফলতা আসে। শোল মাছসহ ইনস্টিটিউট এ পর্যন্ত ৩৪ প্রজাতির দেশীয় ও বিপন্ন প্রজাতির মাছের প্রজনন ও চাষাবাদ কৌশল উদ্ভাবন করতে সক্ষম হয়েছে। চলতি বছরে দেশী শোল মাছের পোনা উৎপাদন কৌশল উদ্ভাবন হওয়ায় এ মাছ চাষের ক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত উম্মোচিত হবে বলে মহাপরিচালক জানান। সকল বিপন্ন প্রজাতির মাছকে পর্যায়ক্রমে পূণরুদ্ধারের লক্ষ্যে ইনস্টিটিউট হতে স্বল্প মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা প্রচার করা হয়েছে বলে তিনি আরো জানান।
ইনস্টিটিউট সূত্রে জানা যায় যে, ভিয়েতনাম ও থাইল্যান্ডে শোল মাছের নিবিড় চাষ করা হয়। কিন্তু, আমাদের দেশে দেশীয় শোল মাছের পোনা না থাকায় এ মাছটিকে চাষের আওতায় আনা সম্ভব হচ্ছিল না। এ মাছের কৃত্রিম প্রজননের জন্য ইনস্টিটিউটটি হতে পূণঃ পূণঃ প্রচেষ্টার পর চলতি বছরে সফলতা আসে। পোনা উৎপাদিত হওয়ায় শোল মাছকে এখন চাষের আওতায় আনা হয়েছে। তথ্য মতে প্রাইভেট খামারীদের উদ্যোগে চাষের জন্য ২০১১ সালে ভিয়েতনামী শোল মাছের পোনা দেশে আমদানী করা হয় এবং চাষাবাদ শুরু করা হয়। কিন্তু বিদেশী এ মাছটি দেশে তেমন জনপ্রিয়তা পায়নি। ইনস্টিটিউট সূত্রে জানা গেছে আগামী ১/২ বছরের মধ্যে দেশীয় শোল মাছের পোনা উৎপাদন প্রযুক্তি মাঠপর্যায়ে হস্তান্তর করা হবে। চাষের মাধ্যমে এ মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি করে দেশের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় এ মাছটি রপ্তানি করা যাবে।
পরিসংখ্যান মতে ইনস্টিটিউট উদ্ভাবিত প্রযুক্তি ব্যবহার করে দেশে বর্তমানে ০৫ শতাধিক হ্যাচারিতে কৃত্রিম উপায়ে দেশীয় ছোট মাছের পোনা তৈরি করা হচ্ছে।
এতে দেশীয় মাছের পোনা প্রাপ্তির সহজতর হওয়ায় গত ১২ বছরে চাষের মাধ্যমে দেশীয় প্রজাতির ছোট মাছের উৎপাদন ৪ গুণ বৃদ্ধি পেয়ে ২.৫ লক্ষ মেট্রিক টনে উন্নীত
হয়েছে।##