You must need to login..!
Description
বিএমটিভি নিউজ ডেস্কঃ
সিলেট ও সুনামগঞ্জের ফাস্ট রেপন্স টিম হিসেবে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করছে। উদ্ধার অভিযানে সেনা সদস্যরা কখনও কোমর কিংবা গলা অবধি পানিতে নেমে শিশুদের কাঁধে তুলে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা থেকে নিরাপদে সরিয়ে নিচ্ছে। আবার কখনও পানিতে নেমে কাঁধে ত্রাণ নিয়ে বানভাসিদের কাছে খাবার পৌঁছে দিচ্ছেন সেনা সদস্যরা।ফলে প্রশংসায় ভাসছে বাংলাদেশ সেনা বাহিনী।
সেনাবাহিনীর এই উদ্ধার অভিযানের ছবি ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ভানবাসি মানুষের সহায়তায় এগিয়ে আসায় সারাদেশের মানুষের কাছে প্রশংসিত হচ্ছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার মানুষেরা সেনাবাহিনীর উদ্ধার অভিযানে সন্তুষ্টি প্রকাশ করে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছেন।সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখা যায়, সিলেট ও সুনামগঞ্জের বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে শুধু এই দুই এলাকার মানুষই নয়, সারাদেশের মানুষ তাদের জন্য দুঃখ প্রকাশ করছেন। সামাজিক যোগাযোগের বিভিন্ন প্লাটফর্মে বানভাসিদের জন্য সহমর্মিতা প্রকাশ করছেন তারা। নেটিজেনরা ফেসবুকে সিলেট ও সুনামগঞ্জে সেনাবাহিনীর কার্যক্রম নিয়ে বিভিন্ন প্রশংসামূলক পোস্ট দিচ্ছেন। এছাড়া অনেক ফেসবুক ব্যবহারকারী তাদের বিভিন্ন পোস্টে উদ্ধার অভিযান নিয়ে গর্ববোধ ও ভালোবাসা প্রদর্শন করছেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর জন্য।
টানা ভারী বর্ষণ এবং ভারতের মেঘালয় থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সিলেট ও সুনামগঞ্জ ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। দুটি জেলায় বন্যা কবলিত হয়ে লাখ লাখ মানুষ গৃহবন্দি হয়ে পড়েছেন। এসব এলাকায় বন্যার কারণে এদিকে যেমন মানুষ গৃহবন্দি হয়ে জানমালের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কায় পড়েছেন, তেমনি দেখা দিয়েছে খাদ্য সংকট। অন্যদিকে বন্যায় এই দুই জেলার বিস্তীর্ণ অঞ্চল প্লাবিত হাওয়া বিঘ্ন হচ্ছে যোগাযোগ ব্যবস্থা ও বিদ্যুৎ সরবরাহ।এমন দুর্যোগপূর্ণ অবস্থায় এই দুই অঞ্চলের মানুষের আশার আলোক বর্তিকা হয়ে পাশে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। বন্যাকবলিত এলাকায় সেনাবাহিনীর সদস্যরা নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে একদিকে যেমন গৃহবন্দি মানুষকে উদ্ধার করে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিচ্ছেন তেমনি ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করে তাদের খাবারেরও ব্যবস্থা করছেন।
এছাড়া এসব অঞ্চলে বেড়াতে গিয়ে আটকে পড়াদের উদ্ধার করে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যাচ্ছে সেনাবাহিনী। বিশেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আটকে পড়া একাধিক শিক্ষার্থীকে উদ্ধার করে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়েছে সেনাবাহিনী।
বন্যাকবলিত এলাকায় সেনাবাহিনীর উদ্ধার কার্যক্রমে দেখা যায়, সেনা সদস্যরা স্পিড বোটে করে সিলেট ও সুনামগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় বৃষ্টি ও প্রবল স্রোত উপেক্ষা করে বানভাসি মানুষের কাছে সাহায্য নিয়ে পৌঁছেছেন। সেখানে গিয়ে তারা কখনও গলা আবার কখনও কোমর অবধি পানিতে নেমে বানভাসিদের উদ্ধার করে নিয়ে আসছেন। শুধু মানুষই নয়, বানভাসিদের গৃহপালিত পশুকেও বিভিন্ন উপায়ে উদ্ধার করে সেনা সদস্যরা নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়ে আসছেন।
সেনাবাহিনীর কার্যক্রমে আরও দেখা যায়, ত্রাণের বস্তা ও প্যাকেট নিয়ে সেনা সদস্যরা ক্ষতিগ্রস্তদের দৌরগোড়ায় যাচ্ছেন। এই দুর্যোগপূর্ণ সময়ে সেনাবাহিনীর এমন কার্যক্রমে এদিকে যেমন বানভাসিরা টিকে থাকার ও লড়াই করার সাহস পাচ্ছেন, তেমনি দেশের সূর্য সন্তানদের পরম স্নেহ ও আদরময় সেবায় দুঃখী বানভাসিদের মুখে ফুটছে হাসি।
এছাড়া যেসব এলাকায় জানমাল, সম্পত্তি ও গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় অস্থায়ী বাঁধ নির্মাণের প্রয়োজন সেখানে নিজ উদ্যোগ অস্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করছেন সেনা সদস্যরা। ভানবাসি মানুষদের প্রাথমিক চিকিৎসা সেবাও দিচ্ছে সেনাবাহিনী।
অন্যদিকে সিলেট ও সুনামগঞ্জে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তার জন্য টোল ফ্রি নম্বর চালু করেছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। এসব টোল ফ্রি নম্বরে যোগাযোগ করে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থরা সেনাবাহিনীর সহায়তা নিতে পারছেন।এদিকে রোববার (১৯ জুন) বন্যাকবলিত এলাকায় সেনা সদস্যদের কার্যক্রম পরিদর্শন করতে যান সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ। এসময় তিনি সিলেটের কোম্পানীগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব হাইটেক পার্ক এলাকায় আশ্রয় নেওয়া বন্যাকবলিত মানুষের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করেন।
সেনাবাহিনীর উদ্ধার অভিযানসহ বিভিন্ন কার্যক্রম পরিদর্শন শেষে সেনাপ্রধান গণমাধ্যমের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, এমন একটা বিপর্যয়ের জন্য আমরা কেউ প্রস্তুত ছিলাম না। এটা সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিত। এটা বহু বছরের রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। এ বিপর্যয় এমন একটা পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে যেটা কাটিয়ে উঠতে আমরা সবাই সর্বাত্মকভাবে চেষ্টা করছি।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী শুধু নয়, সরকারের সব অর্গান সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছে। আমি ব্যক্তিগতভাবে এখানে এসেছি যে সেনা মোতায়েন করা হয়েছে তারা যে কষ্ট করে দুর্গম এলাকায় গিয়ে পানিবন্দি মানুষকে উদ্ধার করা, খাবার ও চিকিৎসা সেবা পৌঁছে দিচ্ছেন তা দেখতে। এছাড়া তাদের আর কী সহযোগিতা আমি সেনাসদর থেকে করতে পারি, যাতে করে এই অপারেশন আরও সুন্দর ও সাফল্যমণ্ডিতভাবে করতে পারে।
উল্লেখ্য, শুক্রবার আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, সিলেট ও সুনামগঞ্জ জেলার বন্যা পরিস্থিতি অবনতি হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে দুই জেলার বিভিন্ন উপজেলায় সেনা মোতায়েন করা হয়েছে।
আইএসপিআর জানায়, সিলেট জেলার সদর, গোয়াইনঘাট ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। সুনামগঞ্জ জেলায় সেনা মোতায়েন করা হয়েছে সদর, জামালগঞ্জ, দিরাই, দোয়ারাবাজার ও ছাতক উপজেলায়। এছাড়া জেলার খাদ্য গোডাউন রক্ষা এবং সিলেটের কুমারগাঁও পাওয়ার স্টেশনেও সেনা মোতায়েন করা হয়েছে।
পানিবন্দি মানুষদের উদ্ধার করে নিরাপদ স্থানে নেওয়া, বেসামরিক প্রশাসনের সহায়তায় অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র নির্বাচন এবং উদ্ধারকৃতদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করা, চিকিৎসা সহায়তা দেওয়ার পাশাপাশি খাদ্য গোডাউন, পাওয়ার স্টেশন ও অন্যান্য স্থাপনা রক্ষায় বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তা এবং সীমিত পরিসরে খাদ্য ও সুপেয় পানি সরবরাহে কাজ করছেন সেনা সদস্যরা।