মঞ্জুরুল ইসলামঃ একদিন পরই ঈদুল আজহা। নাড়ির টানে বাড়ি ফিরছে মানুষ। এ সুযোগে কয়েকগুণ বেশি ভাড়াও গুনতে হচ্ছে যাত্রীদের। তবে চালকদের দাবি, যানজটের কারণে বেশি সময় লাগার কারণে ভাড়া বেশি নেওয়া হচ্ছে। শুক্রবার (৮ জুলাই) দুপুর ১২টার দিকে ময়মনসিংহ মহানগরীর পাটগোদাম ব্রিজ মোড়ে ঘুরে এমনটা জানা যায়।
গাজীপুরে একটি গার্মেন্টসে কাজ করেন লিয়াকত আলী। তিনি বলেন, ‘পাটগোদাম ব্রিজ মোড় থেকে হালুয়াঘাটের বাস ভাড়া ৬০ টাকা হলেও ঈদ উপলক্ষে ৩০০ টাকা নিচ্ছে।’
রাজধানীর চাষাড়ায় নির্মাণ শ্রমিকের কাজ করেন শেরপুরের নকলা উপজেলার রাকিব মিয়া। তিনি বলেন, ‘ঢাকা থেকে ময়মনসিংহের পাটগোদাম ব্রিজ মোড় পর্যন্ত আসছি ৬০০ টাকা ভাড়া দিয়ে। এখান থেকে নকলার নিয়মিত ভাড়া ১২০ টাকা হলেও ঈদ উপলক্ষে মাহিন্দ্রার ভাড়া নিচ্ছে ৩০০ টাকা।’
আরেক নির্মাণ শ্রমিক শাকিল মিয়াও যাবেন শেরপুরের নকলা উপজেলায়। তিনি বলেন, ‘এক সঙ্গে দুজন আসছি। এখন এক সঙ্গে নকলায় যাব। কিন্তু যেভাবে অতিরিক্ত ভাড়া নিচ্ছে, এটা আমাদের মতো শ্রমিকের ওপর নির্যাতন। এসবের সঠিক সমাধান হওয়া প্রয়োজন।’
ভাড়া বেশি নেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে পাটগোদাম ব্রিজ মোড় থেকে নকলাগামী মাহিন্দ্রাচালক সাইদুল ইসলাম বলেন, ‘ঈদ ছাড়া একদিনে পাটগোদাম ব্রিজ মোড় থেকে নকলা পর্যন্ত তিনবার আসা যাওয়া করা যায়। কিন্তু এখন একবার নকলার উদ্দেশ্যে এখান থেকে গাড়ি ছেড়ে গেলে যানজটের কারণে দ্বিতীয়বার আসতে সন্ধ্যা হয়।’
রাজধানীর শফিপুরে গার্মেন্টসে কাজ করেন হুমায়ুন কবির। পাটগোদাম ব্রিজ মোড় থেকে যাবেন নেত্রকোনার জারিয়ায়। তিনি বলেন, ‘ঢাকা থেকে তিন গাড়ি পাল্টে এখানে এসেছি। এখান থেকে জারিয়ার নিয়মিত সিএনজি ভাড়া ১২০ টাকা। ঈদ উপলক্ষে মাহিন্দ্রার ভাড়া নিচ্ছে ২৫০ টাকা। হেঁটে তো আর বাড়িতে যেতে পারবো না। তাই বাধ্য হয়েই গাড়িতে উঠেছি।’
পাটগোদাম ব্রিজ মোড় থেকে জারিয়াগামী মাহিন্দ্রাচালক খোকন মিয়া বলেন, ‘ঈদ ছাড়া জারিয়ার ভাড়া ১০০ টাকা হলেও এখন ৩০০ টাকা নেওয়া হচ্ছে।’
জোসনা বেগম ঢাকার গুলশানে অন্যের বাসায় কাজ করেন। ঈদের ছুটিতে নেত্রকোনার জারিয়ায় নিজের বাড়ি যাচ্ছেন। তিনি বলেন, ‘ঢাকা থেকে বাসে এখান পর্যন্ত আসছি ৭০০ টাকায়। এখান থেকে জারিয়া পর্যন্ত যাচ্ছি ৩০০ টাকা ভাড়া দিয়ে। এমনিতে ঢাকা থেকে নেত্রকোনার জারিয়া পর্যন্ত যেতে মোট ভাড়া লাগে ৩০০ টাকা। ঈদ উপলক্ষে এ ভাড়াই লাগলো এক হাজার।’
গাজীপুরের একটি কোম্পানিতে চাকরি করেন নেত্রকোনার দুর্গাপুর উপজেলার আব্দুল কাদির। তিনি বলেন, ‘রাস্তায় অনেক যানজট। গাজীপুর থেকে ময়মনসিংহের বাইপাস মোড়ে আসছি ৫৫০ টাকা ভাড়া দিয়ে। বাইপাস থেকে ১০ টাকার ভাড়া ৫০ টাকা দিয়ে পাটগোদাম ব্রিজ মোড়ে আসছি। এখান থেকে নেত্রকোনার দুর্গাপুরে ভাড়া ১০০ টাকা হলেও ৩০০ টাকা ভাড়া দিতে হচ্ছে।’
দুর্গাপুরগামী সিএনজিচালক নাইব আলী বলেন, ‘ঈদ উপলক্ষে ভাড়া কিছুটা বেশি নেওয়া হচ্ছে। তবে কাউকেই জোর করা হচ্ছে। যারা যাচ্ছেন তাদের নিয়েই যাচ্ছি।’
ময়মনসিংহ থেকে ভৈরবগামী শ্যামলা ছায়া বাসচালকের সহকারী কাজল বলেন, ‘আমরা সরকার নির্ধারিত ভাড়া যাত্রীদের কাছ আদায় করছি। তবে মাঝে মধ্যে ৪০ থেকে ৫০ টাকা বেশি নেওয়া হচ্ছে।’
এ বিষয়ে জানতে জেলা শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি আব্দুস সালামের মোবাইল নম্বরে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি রিসিভ করেননি।
ময়মনসিংহের ট্রাফিক পরিদর্শক (প্রশাসন) জহিরুল ইসলাম বলেন, বিভিন্নজনের কাছ থেকে বেশি ভাড়া নেওয়ার অভিযোগ পেয়েছি। তবে জেলা প্রশাসনসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বৃহস্পতিবার দুপুরে পাটগোদাম ব্রিজ মোড় পরিদর্শন করেছেন। পরিদর্শন শেষে রাস্তার নানা অব্যবস্থাপনার কারণে ক্ষোভ প্রকাশ করেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফজরে রাব্বি মিয়া। এ সময় তিনি রাস্তার দুপাশে গাড়ি না দাঁড়ানো ও ভাড়া বেশি না নেওয়ার নির্দেশনা দেন।’