You must need to login..!
Description
স্টাফ রির্পোটার, বিএমটিভি নিউজঃ বদলের যাচ্ছে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিত্র। অত্যাধুনিক চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে সেবার মান বাড়াতে ও রোগীর চাপ কমাতে অধিকসংখ্যক রোগীকে বেডে রেখে , রোগীদের বিদেশমুখীতা ঠেকাতে, মেডিকেল ও নার্সিং শিক্ষার মান উন্নয়নে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালকে ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মতে, ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের (মমেক) বর্তমান জমিতেই ঐতিহ্যবাহী ভবন ও স্থান অক্ষুণ্ণ রেখে আনুমানিক ২১৬ কোটি টাকা ব্যয়ে নতুন এই মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন কাজ দ্রত গতিতে চলছে। নতুনভাবে তৈরি এ হাসপাতালের অবকাঠামোগুলো ২০২৪ সালের মধ্যে প্রাথমিকভাবে উদ্বোধেনের পরিকল্পনা রয়েছে।
ময়মনসিংহ গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী রাশেদ আহসান জানান, প্রধানমন্ত্রীর অগ্রধিকার ভিত্তিক প্রকল্প হিসেবে উন্নয়ন কাজ চলছে। এতে প্রায় ২১৬ কোটি টাকা ব্যায় নির্ধারণ করা হয়েছে।
এর মধ্যে প্রায় ১৫০ কোটি টাকা ব্যায়ে ১৭ তলা ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। ২০২১ সালের এপ্রিলে কাজ শুরু হয়ে এখন ফাউন্ডেশনের কাজ চলমান আছে। এই ভবনে ক্যন্সার, কিডনী ও কার্ডিওলজি চিকিৎসা দেওয়া হবে। এতে ক্যান্সার রোগীদের জন্য ১৮০ শয্যা, কার্ডিওলজির জন্য ১১৫ শয্যা এবং কিডনী রোগীদের জন্য থাকবে ১৬৫ শয্যা।
এছাড়াও প্রায় ৩০ কোটি টাকা ব্যায়ে কাজ শুরু হয়েছে ১০ তলা ভীত বিশিষ্ট ৫ তলা ভবনের। এতে ২৪০ শয্যা নিয়ে চালু হবে বার্ন এন্ড প্লাস্টিক সার্জারী ইউনিটের কার্যক্রম।
অপরদিকে রোগীদের সকল ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য ৫ তলা ভবনে হবে ডায়াগনোস্টিক সেন্টার। প্রায় ৩০ কোটি টাকা ব্যায়ে গত বছরের সেপ্টেম্বরে শুরু হয়েছে এই ভবন নির্মাণ কাজ।
তিনি বলেন, কাজ শুরু করেছি, আশা করছি দুই বছরের মধ্যে নির্মাণ শেষ হবে। এর মধ্যে ডায়গনোস্টিক সেন্টারের ভবন আগামী জুনের মধ্যে হস্থান্তর করা হবে। তবে বার্ন ইউনিটের কাজ শেষ করতে আরও দেড় বছর লেগে যেতে পারে। যদিও কাজের সময় রয়েছে ২০২৪ সাল পর্যন্ত। জানা যায়, বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলের প্রায় আড়াই কোটি মানুষের সরকারী বিশেষজ্ঞ চিকিৎসার একমাত্র ভরসাস্থল এই হাসপাতালটি ১৯৬২ সালে ৮৩ একর জমি নিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রথমে তিন শত শয্যা নিয়ে যাত্রা শুরু করা এই হাসপাতালটিতে বর্তমানে শয্যা সংখ্যা এক হাজার।
২০১০ সালে ৮ তলা বিশিষ্ট নতুন ভবন স্থাপনের মাধ্যমে ২০১৩ সালে জানুয়ারী মাসে বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নতুন ভবন উদ্বোধনের মাধ্যমে সম্প্রসারিত হয় হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা।
বর্তমানে হাসপাতালের ৩৭টি ওয়ার্ডের ৩৭টি বিভাগে চিকিৎসাসেবা প্রদানের মাধ্যমে ইতিমধ্যে দেশসেরা স্বীকৃতি অর্জন করছে এই হাসপাতালটি। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানান, প্রতিদিন গড়ে ২৪০০ থেকে ২৫০০ রোগী চিকিৎসাসেবা পাচ্ছে হাসপাতালে। এছাড়াও হাসপাতালের বহির্বিভাগে বর্তমানে ৩০০০ হতে ৪০০০ রোগী প্রতিদিন চিকিৎসা গ্রহন করছেন। তাদের প্রত্যেককে বিনামূল্যে দেওয়া হচ্ছে সরকারি ঔষধ।
তবে এতকিছুর পরও জনবল সংকট কাটছে না হাসপাতালের। ফলে নিয়মিত চিকিৎসাসেবা শতভাগ নিশ্চিত করতে পর্যাপ্ত জনবলের কোন বিকল্প নেই বলেও মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
তথ্যমতে, চিকিৎসা কাঠামো অনুযায়ী হাসপাতালের ৪৭৩টি চিকিৎসকের পদ থাকলেও বর্তমানে কর্মরত আছে ৩৮৭ জন, নার্স ১১১৪ মধ্যে কর্মরত আছে ১০৯০জন, ২৪০টি তৃতীয় শ্রেনীর কর্মচারী পদের মধ্যে আছে ১২৫ জন এবং চতুর্থ শ্রেনীর ৪৫৭টি পদে কর্মরত আছে ২৬৭ জন।
এর ফলে চিকিৎসক কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ মোট জনবলের ৪১৫টি পদ শূন্য রয়েছে বলে জানান হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা: মো: ওয়েজউদ্দীন ফরাজী।
তিনি আরও বলেন, ভবনগুলো নির্মাাণ হলে নতুন ডিপার্টমেন্ট চালু করা হবে। এমবিবিএস, এফসিপিএস এর যেসব কার্যক্রম চলতো সেসব চলবে। এর বাইরে পিএইচডি গবেষণার ব্যবস্থাও থাকবে এখানে। এতে আমাদের জ্ঞানের পরিধি বাড়বে। দক্ষ ডাক্তার ও স্বাস্থ্য কর্মীর সংখ্যা বাড়বে। চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে যাওয়ার প্রবণতা কমবে। স্বল্প ব্যয়ে পাওয়া যাবে উন্নত সেবা। এটাই হবে অর্জন।
ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগ্রেডিয়ার জেনারেল মো: গোলাম কিবরিয়া বলেন, “মমেক হাসপাতাল একটি ঐতিহাসিক স্থাপনা, তাই ঐতিহাসিক অংশটুকু অক্ষুণ্ণ রেখে নতুন ভবনের কাজ চলছে। হাসপাতালের আইটি সিস্টেম সম্পূর্ণ ডিজিটালাইজড করা হবে।
ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালকে একটি ‘গোল্ড স্ট্যান্ডার্ড’ হাসপাতালে উন্নীত করার আশা ব্যাক্ত করেন তিনি। এ উন্নয়নযজ্ঞ নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শেষ করাই এখন আমাদের চ্যালেঞ্জ।