শফিকুল ইসলাম, বিএমটিভি নিউজঃ ময়মনসিংহ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগের মূল্যায়নে সৃষ্টিশীল কর্মে বিশেষ অবদানের জন্য ময়মনসিংহ জেলার শ্রেষ্ঠ ইন্সট্রাক্টর (ইউআরসি) হয়েছেন মোঃ মতিউর রহমান। বর্তমানে তিনি ময়মনসিংহ সদর উপজেলার ইন্সট্রাক্টর হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ২০০২ সালে ইন্সট্রাক্টর হিসেবে মেলান্দহ উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে যোগদান করেন। জন্ম ময়মনসিংহ জেলার নান্দাইল উপজেলার পাছআনী গ্রামে। বাবার নাম, মোঃ আবুল মসসুর ও মাতা মাছাঃ ফাতেমা আক্তার । ২০১৩ ও ২০১৪ সালে জেলা পর্যায়ে ২বার জেলার শ্রেষ্ঠ ইন্সট্রাক্টর (ইউআরসি) নির্বাচিত হয়েছেন।
শ্রেষ্ঠ ইন্সট্রাক্টর হওয়ার জন্য আপনি কি ধরনের কাজ করেছেন জানতে চাইলে মোঃ মতিউর রহমান জানান, আসলে আমি শ্রেষ্ঠ ইন্সট্রাক্টর হওয়ার ইচ্ছে বা আগ্রহের জন্য কিছু করেনি । আমি নিয়মিত আমার নির্ধারিত কাজগুলোর পাশাপাশি চেষ্টা করেছি নতুন কিছু দেওয়ার বা নতুন কিছু করার জন্য। আমার মূল কাজ হল প্রাথমিক শিক্ষার মান উন্নয়নের জন্য কাজ করা আর সেগুলো সম্পূর্ণ শিশুদেরকে ঘিরে।
আমার উল্লেখযোগ্য কাজ হলো প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা থেকে শুরু প্রশিক্ষকের দায়িত্ব পালন করা। আমি বিদ্যালয় পরিদর্শন করে থাকি আমাদের বিদ্যালয় পরিদর্শন টা হল সম্পূর্ণ একাডেমি পরিদর্শন।
করোনাকালীন যখন শিশুরা স্কুলে আসতে পারতো না, তখন আমরা শিশুদের বাড়িতে বাড়িতে গিয়েছি। শিখন-শেখানোর কাজে আমরা তাদেরকে অভ্যস্ত করেছি দক্ষ করে গড়ে তুলতে।
শিক্ষকরা বাচ্চাদের ওয়ার্ক সিট এর মাধ্যমে তাদের কাজ তদারকি করেছে এবং আমি নিজেও বাচ্চাদের কাজের তদারকি করেছি। শিক্ষকদের কিভাবে ক্লাস শিক্ষায় আরো দক্ষ হিসেবে গড়ে তোলা যায় সে হিসেবেও আমি কাজ করেছি। করোনাকালীন যখন সারা বিশ্ব স্থবির তখন সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে শিক্ষা ব্যবস্থায় আমি ১৭ টি ব্যাচয়ের মাধ্যমে প্রায় ৫৪৭ জন শিক্ষককে ১৬১ জন প্রধান শিক্ষককে প্রাথমিক ইন্টারনেট ব্রাউজিং অনলাইনের কাজগুলো প্রশিক্ষণ দিয়েছি। এটাকে আমি আমার একটি একটা অর্জন মনে করি।
মাঠ পর্যায়ে একজন কর্মী হিসেবে সব সময় চেষ্টা করছি প্রাথমিক শিক্ষাকে উন্নত ও মানসম্মত করে গড়ে তুলতে।
আমাকে বিদ্যালয় পরিদর্শনের জন্য বিভিন্ন এলাকায় যেতে হয়। চেষ্টা করেছি যে এলাকায় গিয়েছি সেই এলাকার অভিভাবকদের সাথে কথা বলতে। শিশুদের কিভাবে তাদের পড়াশোনায় মনোযোগী করা যায় সে বিষয়ে কথা বলেছি।
শহরে স্কুলগুলোতে দেখবেন বাচ্চাদের ক্লাসে পাঠিয়ে মায়েরা বাহিরে অপেক্ষা করে । আমি যখন স্কুল পরিদর্শনে গিয়েছি তখন অপেক্ষমান মায়েদের সাথে নিয়ে পিছনে দাঁড়িয়ে জাতীয় সংগীত গেয়েছি।
বাচ্চাদের সাথে মায়েরা যখন জাতীয় সংগীত গেয়েছে তখন বাচ্চারা খুব আনন্দ পেয়েছে। এটা কিন্তু আমার রুটিন মাফিক কাজ না। কিন্তু তবুও আমি করেছি। যে এলাকায় পর্রিদশন করতে গিয়েছি সেই এলাকায় মায়েদের কাছে সবসময় বলেছি বাচ্চাদের মেধাবিকাশের জন্য শিক্ষকদের উপর সম্পূর্ণ নির্ভরশীল থাকবেন না। আপনারা আপনাদের সন্তানের বইগুলো ভালো করে পড়ুন বইয়ের ছবিগুলো দেখুন।
তাহলেই আপনি আপনার সন্তানকে ভালোভাবে পড়াতে পারবেন, পাশাপাশি শিক্ষকরা যখন পড়াবে তখন খুব দ্রুতই বাচ্চারা ক্লাসের পড়াগুলো আয়ত্তে নিতে পারবে।
এ সময় তিনি আরো বলেন, ইসলামপুর উপজেলায় যখন কাজ করতাম তখন প্রায় সময় আমি প্রাক- প্রাথমিক বিদ্যালয় ছাত্রদের ছবি তুলতাম এই ছবিগুলো যখন আবার বাচ্চাদের বড়স্কিনে দেখাতাম তখন তারা খুব খুশি হত । তাদের খুশি দেখে মনে হতো তারা নিজেদের ছবিগুলো মোবাইলে দেখতে খুব পছন্দ করে। পরবর্তী সময় যখন আমার ডিপার্টমেন্ট ইনোভেশনের চাহিদা চাওয়া হল আমি এই কথাগুলো বললাম যে বাচ্চারা তাদের ছবি দেখতে পছন্দ করে। আমার মাথায় এলো বাচ্চারা বড় পর্দায় যখন নিজেদের ছবি দেখতে পাবে তখন তারা স্কুলে আসতে আগ্রহী হবে। আমার এই চিন্তা সফল হয়েছে। শিশুরা তাদের ছবি দেখতে পছন্দ করে এই ইনোভেশনটা যখন আমি প্রাথমিক অধিদপ্তরে জমা দিলাম প্রাথমিক অধিদপ্তর আমার এই ইনোভেশনটা মনোনীত করেছে আমার ইনভেশন এর নাম “নিজেকে নতুন করে দেখী”।
যেহেতু আজকের শিশু আগামীদিনে ভবিষ্যৎ এবং দেশের উন্নয়ন জন্য এই শিশুরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। তাই এই শিশুদের এখন থেকে পরির্চযা করতে হবে। শিশুদের গড়ে তুলার অন্যতম ক্ষেত্র হলো প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো।
প্রাথমিক বিদ্যালয়ের যারা দায়িত্ব পালন করছে সকলে তার নিজ নিজ জায়গা থেকে সঠিক ভাবে দায়িত্ব পালন করতে হবে।
ভবিষ্যতে কেউ যদি শ্রেষ্ঠ ইন্সট্রাক্টর হতে চাই তাহলে কি ধরনে কাজ করতে হবে জানতে চাইলে মতিউর রহমান জানান,আসলে শ্রেষ্ঠ হওয়ার জন্য কেউ কাজ করে না তবে নিজ নিজ দায়িত্ব বা নির্ধারিত কাজগুলো দায়িত্বের সাথে করলেই শ্রেষ্ট হতে পারেন যে কেউ। সৃষ্টিশীল মানসিকতা থাকতে হবে। রুটির বাইরেও কিছু কাজ করতে হবে।