বহু আলোচিত লেখিকা তসলিমা নাসরিনের স্মৃতি বিজরিত ‘অবকাশ ভবন’ ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে

image

You must need to login..!

Description

স্টাফ ‍রিপোর্টার,  বাংলাদেশ থেকে নির্বাসিত বহু আলোচিত লেখিকা তসলিমা নাসরিনের জন্ম থেকে শৈশব, কৈশোর আর যৌবন ও লেখালেখির উল্লেখযোগ্য সময় কেটেছে ময়মনসিংহ নগরের টিএন রায় রোডের অনেক স্মৃতি বিজরিত ‘অবকাশ ভবন’ নামের বাড়িতে। তসলিমা নাসরিনের কারণেই নগরবাসীর কাছে বাড়িটি বেশ পরিচিত। সম্প্রতি তসলিমা নাসরিনের স্মৃতি বিজরিত ‘ সেই বাড়িটি ভেঙে ফেলা হয়েছে। এখন ওই স্থানে নির্মাণ করা হচ্ছে বহুতল অট্টালিকা। টাঙানো হয়েছে ডেভেলপার কোম্পানির বিশাল সাইনবোর্ড। বৃহস্পতিবার (১০ নভেম্বর) সকালে নগরীর টিএন রায় রোড ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে ।

এসময় দেখা যায়, ভেঙে ফেলা বাড়ির দেয়াল থেকে ইট খুলে নিচ্ছেন তিনজন শ্রমিক। পুরো বাড়িই ভাঙা শেষ। এখন ক্ষুদ্র একটি অংশ ভাঙছেন তারা। জানতে চাইলে শ্রমিকরা বলেন, স্থানীয় নয়ন নামে এক ব্যক্তি লিখিত ডকুমেন্ট করে তিন লাখ টাকায় পুরোনো বাড়িটির ইট-কাঠ ও রড কিনে নিয়েছেন। আমরা তার অধীনে শ্রমিক হিসেবে বাড়ি ভাঙছি। এর বাইরে আমাদের কিছু জানা নেই।

তসলিমা নাসরিনের ভাতিজা সাফায়েত কবীর বলেন, বাড়িটি ছিল আমার দাদা প্রয়াত ডা. রজব আলী সাহেবের। তার মৃত্যুর পর সম্প্রতি এ বাড়ির জমিটি তার উত্তরাধিকারদের মধ্যে ভাগবাটোয়ারা হয়েছে। এর মধ্যে সামনের অংশে আমার বাবা ও চাচার জায়গা। আর পেছনে রয়েছে ফুফুদের জায়গা।

সাফায়েত আরও বলেন, ভূমি বণ্টনামার নিয়ম মেনেই অংশ ভাগ করে পুরোনো বাড়ি ভেঙে নতুন ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। এটি আমাদের পারিবারিক বিষয় এবং এতে আইনগত কোনো সমস্যা নেই।

এদিকে গত কয়েকদিন আগে তসলিমা নাসরিন তার নিজের ফেসবুক আইডিতে নিজের বাড়ির শৈশব-কৈশরের নানা স্মৃতি তুলে ধরে পোস্ট করায় আলোচনায় উঠে আসে ‘অবকাশ ভবন’।

ফেসবুক পোস্টে তসলিমা লেখেন:
‘কেউ কেউ ফেসবুকে ‘অবকাশ’ ভাঙার ছবি পোস্ট করছে, দুঃখ করছে, স্মৃতিচারণ করছে। আমার শৈশব, কৈশোর, যৌবনের সেই ‘অবকাশ’। ময়মনসিংহ শহরের টিএন রায় রোডে আমার বাবার কেনা সুন্দর বাড়িটি অবকাশ। এই অবকাশ ভেঙে গুঁড়ো করার সিদ্ধান্ত যারা নিয়েছে তাদের সঙ্গে আমার কোনও যোগাযোগ নেই, আমার কোনও সম্পর্ক নেই। শুধু এইটুকু জানি, তাদের মধ্যে কেউ কেউ খুব লোভী, স্বার্থপর, ধুরন্ধর, কেউ কেউ কট্টর মৌলবাদী। সকলেরই আমি চক্ষুশূল। এককালে শহরের সাহিত্য সংস্কৃতি, জ্ঞান বিজ্ঞান আর প্রগতিশীলতার একটি কেন্দ্র ছিল যে বাড়িটি, আজ সেটি ধ্বংসস্তূপে পরিণত। ধন দৌলতের কাঙালদের কাছে প্রগতিশীলতা, উদারতা, সহমর্মিতা, স্মৃতি ও সৌন্দর্যের কোনও মূল্য নেই। শুনেছি বাড়িটিতে আমার মায়ের হাতের লাগানো সব ফল ফুল গাছ শেকড়সুদ্ধ উপড়ে ফেলে একটি আধুনিক বহুতল বিল্ডিং বানানো হচ্ছে। আমার কর্মঠ বাবার অকর্মণ্য উত্তরসুরিরা সেই বিল্ডিং-এ পায়ের ওপর পা তুলে বংশ পরম্পরায় খাবে।
ও বাড়ির এখন আমি কেউ নই। আমি তো তিরিশ বছর ব্রাত্যই।
ইট পাথরে, চুন সুরকিতে, কাঠে কংক্রিটে স্মৃতি থাকে না, স্মৃতি থাকে মনে। অবকাশ রইলো আমার মনে। যে বাড়িটিতে বসে আমি প্রথম কবিতা লিখেছি, প্রথম কবিতা-পত্রিকা ছাপিয়েছি, প্রথম কবিতার বই লিখেছি, নির্বাচিত কলাম লিখেছি, যে বাড়িটির মাঠে প্রথম গোল্লাছুট খেলেছি, যে বাড়িটির ছাদে প্রথম পুতুল খেলেছি, যে বাড়িটির ভেতর প্রথম রবীন্দ্রনাথ আওড়েছি, উঠোন জুড়ে নেচে চিত্রাঙ্গদা মঞ্চস্থ করেছি, যে বাড়িটিতে দাদা বেহালা বাজাতো, ছোটদা গিটার বাজাতো, বোন গান গাইতো, মা আবৃত্তি করতো, বাবা মানুষের মতো মানুষ হওয়ার স্বপ্ন দেখাতো, যে বাড়িটিতে বসে প্রথম প্রেমের চিঠি লিখেছি, যে বাড়িটিতে আমি একই সঙ্গে সংবেদনশীল এবং সচেতন মানুষ হয়ে উঠেছি, সে বাড়িটি রইলো আমার মনে। কোনও হাতুড়ি শাবল কুড়োলের শক্তি নেই সে বাড়িটি ভাঙে। ’
দীর্ঘদিন ধরে নির্বাসিত বিতর্কিত লেখিকা তসলিমা নাসরিন। ১৯৯৪ সালে দেশ ত্যাগের পর তিনি বর্তমানে ভারতে বসবাস করছেন। তবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তসলিমা নাসরিন বেশ সরব।

নির্বাসিত এই লেখিকার জন্মস্থান ময়মনসিংহের নান্দাইলে। তবে মা-বাবার সঙ্গে ময়মনসিংহ নগরীর আমলাপাড়ার টিএন রায় রোডের বাড়িতে বসবাস করতেন তিনি। সেই বাড়িটির নাম ছিল ‘অবকাশ’। এই বাড়িতেই কেটেছে তসলিমা নাসরিনের শৈশব-কৈশোর আর যৌবন।

মতিউল আলম

প্রধান সম্পাদকঃ
মতিউল আলম

সম্পাদক ও প্রকাশকঃ
মাকসুদা আক্তার