ফুলবাড়ীয়ায় আড়াইশ বছরের ঐতিহ্যবাহী হুমগুটি খেলা

image

You must need to login..!

Description

এনায়েতুর রহমান,ফুলবাড়ীয়া (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি : ময়মনসিংহের ফুলবাড়ীয়ায় লক্ষীপুর গ্রামের তালুক-পরগনা সীমানার বড়ই আটা বন্দে পৌষের শেষ দিনে হাজার হাজার মানুষের ঢল নামে হুমগুটি খেলায়। এ খেলা একই সময়ে একই স্থানে যুগ যুগ ধরে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে।
ফুলবাড়ীয়ার লক্ষীপুর গ্রামের বড়ই আটা বন্দে হুমগুটি খেলায় যোগ দিতে সকাল থেকেই বিভিন্ন এলাকা থেকে আসতে থাকে মানুষজন। দুপুর গড়িয়ে সন্ধ্যায় পরিণত হয় জনসমুদ্রে। এলাকাভিত্তিক একেকটি দলে শতশত খেলোয়ারের অংশগ্রহণে চলে গুটি দখলের শক্তির লড়াই। এ খেলাকে কেন্দ্র করে লক্ষীপুর, দেওখোলাসহ পার্শ্ববর্তী গ্রামগুলোতে চলে উৎসবের আমেজ।
খেলার তারিখ নির্ধারণ করা হয় বাংলা সাল হিসেব করে। পৌষের শেষদিন খেলার নির্ধারিত তারিখ। উপজেলার লক্ষ্মীপুর, বড়ই আটা, বাটিপাড়া, বালাশ্বর, চরকালিবাজাইল, তেলিগ্রাম, সারুটিয়া, ইচাইল, কাতলাসেনসহ অন্তত ১৫-২০টিগ্রামের মানুষ দিনটির জন্য অপেক্ষা করে। ঘরে ঘরে চলে নতুন আমন ধানের পিঠা-পুলির উৎসব। পিঠার মধ্যে অন্যতম নুন-মরিচের পিঠা, গুটা পিঠা, তেলের পিঠা, দুধ চিতই পিঠা, কলার পিঠা। গ্রামগুলোতে খেলার কয়েকদিন আগেই আসতে থাকে দূর-দূরান্তের আত্মীয়-স্বজন।


শুরু থেকে খেলাটি দুটি দল নিয়ে হলেও এখন চার দলে অনুষ্ঠিত হয়। খেলা শুরু থেকে উত্তর, দক্ষিণ, পূর্ব, পশ্চিম হিসেবে চারটি দল করা হয়। খেলা শুরুর নির্দিষ্ট সময় বিকেল চারটা হলেও যোহর নামাজ পর থেকেই ছুটে আসতে থাকে দর্শনার্থীরা।
জানা যায়, মুক্তাগাছার জমিদার রাজা শশীকান্ত মহারাজের সাথে ত্রিশালের বৈলরের হেম চন্দ্র রায় জমিদারের জমির পরিমাপ নিয়ে বিরোধ সৃষ্টি হয়। জমিদার আমলের শুরু থেকেই তালুকের প্রতি কাঠা জমির পরিমাপ ছিল ১০ শতাংশে। আর পরগনার প্রতি কাঠা জমির পরিমাপ ছিল সাড়ে ৬ শতাংশে। একই জমিদারের ভূখন্ডে দুই নীতির প্রতিবাদে তীব্র প্রতিবাদ গড়ে ওঠে। জমির পরিমাপ নিয়ে সৃষ্ট বিরোধ মীমাংসার জন্য লক্ষ্মীপুর গ্রামের বড়ই আটা নামক স্থানে আয়োজন করা হয় এই হুমগুটি খেলা। শর্ত ছিল, গুটি যে দিকে যাবে তা হবে তালুক..। আর পরাজিত অংশের নাম হবে পরগনা..। সে সময় গুটি খেলায় মুক্তাগাছা জমিদারের প্রজারা বিজয়ী হন।
তালুক ও পরগনার সীমান্তে জিরো পয়েন্টে ব্রিটিশ আমলে জমিদারি এই খেলার গোড়াপত্তন। আমন ধান কাটা শেষ, বোরো ধান আবাদের আগে প্রজাদের শক্তি পরীক্ষার জন্য জমিদারদের এই পাতানো খেলা চলে আসছে যুগ যুগ ধরে।
উত্তর-দক্ষিণ পূর্ব ও পশ্চিম ভাগবাটোয়ারা করে খেলা শুরু হলেও পরে আর কোন দিক থাকে না খেলোয়াড়দের। এক মণ ওজনের পিতলের গুটি মাঠে আসার পরই গুটির উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে হাজারো মানুষ। টানাহেচড়া ধাক্কাধাক্কি সবই হয় এ খেলায়। হয় না কেবল কোনো সংঘর্ষ।
গোলাকার বস্তুটি নিয়ে হাজারো মানুষের কাড়াকাড়িতে সকলের মুখে উচ্চারিত হয় ‘জিতই আবা দিয়া, গুটি ধররে হেইও…..’।
ফুলবাড়ীয়া উপজেলা সদর থেকে ৫ কিলোমিটার উত্তরে লক্ষিপুর ও দশ মাইলের মাঝামাঝি বড়ই আটা বন্ধ নামক ফসলি জমির খালি বন্দ হলো খেলাটির কেন্দ্রস্থল।
আয়োজকরা জানান, আড়াইশ বছরেরও বেশি সময় ধরে ধারাবাহিকভাবে প্রতি বছরই এই খেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। হুমগুটি খেলাকে ঘিরে বিরাজ করে উৎসবের আমেজ। খেলার ২ থেকে ৩ দিন আগে থেকেই আত্মীয়-স্বজন বেড়াতে আসেন এই এলাকায়। শুধু লক্ষীপুর গ্রামেই অন্তত ৪০/৫০টি গরু জবাই হয় এই উৎসবকে ঘিরে।
ফুলবাড়ীয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার আশরাফুল ছিদ্দিক বলেন, করোনার প্রকোপ বৃদ্ধি পাওয়াতে সরকারী বিধি নিষেধ মানা সবার জন্যই জরুরি।

প্রধান সম্পাদকঃ
মতিউল আলম

সম্পাদক ও প্রকাশকঃ
মাকসুদা আক্তার