You must need to login..!
Description
এনায়েতুর রহমান, ফুলবাড়ীয়া (ময়মনসিংহ) থেকেঃ ময়মনসিংহের ফুলবাড়ীয়ার হোগলা পাতার তৈরি পন্য যাচ্ছে বিশে^র বিভিন্ন দেশে। এ পন্য তৈরিতে কাজ করছে নারী-পুরুষ সহ বিভিন্ন বয়সের ২শতাদিক নিম্ম আয়ের মানুষ।
হোগলা পাতাকে আঞ্চলিক ভাষায় বলা হয় বুরাঙ্গা। এটি সাধারণত খাল বিলের নিঁচু জমি ছোট পুকুরে দেখতে পাওয়া যায়। বর্তমানে পণ্যে ব্যবহৃত হোগলা পাতার রশি ক্রয় করে আনা হচ্ছে নোয়াখালী হতে। স্থানীয় চাষীরা হোগলাপাতা চাষ করে রশি বানিয়ে লোকাল বাজারে বিক্রি করেন। ঐখানের ব্যবসায়ীরা রশি ক্রয় করে মওজুত করেন। চাহিদার ভিত্তিতে তারা বিক্রি করেন দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের সাপ্লাইয়ার বা উদ্যোক্তারা সেখান থেকে হোগলা পাতার রশি সংগ্রহ করেন। নিজ নিজ এলাকায় স্থানীয় দক্ষ কর্মীদের মাধ্যমে ফরমেট অনুযায়ী তৈরি করে তা সরবরাহ করেন। সেট অনুযায়ী সরবরাহ করলে রপ্তানীকারক প্রতিষ্ঠান ফিনিশিং, লেভেল লাগানো, পলিথিন মোড়ানো, প্যাকেটজাত করে রপ্তানী উপযোগী করেন। তৈরিকৃত পণ্য জাপান, সৌদি আরব, জার্মান, হংকং, শ্রীলঙ্কা, চীনসহ বিশে^র বিভিন্ন দেশে রপ্তানী করা হচ্ছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার বাক্তা ইউনিয়নের ভালুকজান, কৈয়ারচালা ও বাক্তা গ্রামের নিম্মবিত্ত পরিবারের নারী-পুরুষ মনোযোগ দিয়ে হাত নাড়িয়ে কাজ করছে। দৈনন্দিন সাংসারিক কাজের পর বেচে যাওয়া সময় টুকুকে তারা ব্যয় করেন এসব বুনন কাজে। এতে তাদের বাড়তি কিছু রোজগারের ব্যবস্থাও হচ্ছে। কৈয়াচালা গ্রামের নয়া দোকানদারের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে বাড়ির মহিলারা দুপুরের খাওয়া দাওয়া শেষে বাড়ীর উঠানে বসে বুনন কাজ করছেন। পাশাপাশি বসে আছে তার ভাতিজি ৮ম শ্রেণি পড়–য়া শিক্ষার্থী। গ্রামীণ এ শিল্পে কাজ করছে প্রায় ২শ নারী-পুরুষ। এদের মধ্যে স্কুল শিক্ষার্থীও রয়েছে। স্কুলের থেকে এসে বাড়িতে হেলায় সময় নষ্ট না করে তারা এ কাজে সময় ব্যয় করছে।
কৈয়ারচালা গ্রামের দুই সন্তানের জননী সালমা জানান, দুই তিন বছর আগে বাক্তা ইউনিয়নের জামতলায় হাতে কলমে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। এরপর থেকে সাপ্লাইয়ার শাহ আলম বাড়িতে এসে হোগলা পাতার রশি ও ফরমেট দিয়ে গেলে সে অনুযায়ী কাজ করে দেই। চাহিদা মত কাজ করেন। এখন বালতি তৈরি করছি। বালতি তৈরি বাবদ তাকে দেওয়া হবে ৩৫ টাকা। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ৩টা বালতি বানিয়েছেন। দুপুরের রান্না-বান্না, খাওয়া-দাওয়া শেষে আছরের নামাজের পর আবার কাজে লেগে গেছেন, রাত ১০ টা পর্যন্ত আরও ৪টি বালতি বুনাতে পারবেন। দৈনিক ৭ টি বুনাতে পারলে ৩৫ টাকা হারে রোজগার হবে ২৪৫ টাকা। এর আগে ওভার শপিং, ছোট বালতি, মিনি ফুটকা সহ প্রায় শতাদিক আইটেম বানিয়েছেন। তার এক ছেলে এক মেয়ে। ছেলে মাদ্রাসায় হেফজ বিভাগে লেখাপড়া করে। তার লেখাপড়ার খরচ মিটিয়ে থাকেন এই রোজগার থেকে। আমরা গরীব মানুষ সারাদিন একটা কাজে ব্যস্ত থাকি। টাকা সীমিত হলেও আমাদের জন্য অনেক।
আরেক কারিগর মমতাজ বেগম (৩৫) বলেন, সংসার সামলিয়ে ৩ বছর যাবত বুনন কাজ করছেন। ভালই লাগে বাড়ীর লোকজনের সাথে গল্প-সল্পও চলে হাত দিয়ে কাজও চলে। বাড়তি আয়ের টাকা সংসারে কিছুটা খরচ করেন আবার কিছু সঞ্চয় করছেন বৃদ্ধ বয়সের জন্য যাতে এই টাকাটা কাজে লাগে।
বুনন কাজে মা-চাচীদের সাথে অংশ নেওয়া বাক্তা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রাকিব হাসান (৮ম), সুমাইয়া (৮ম), বেলী (৮ম), তাইয়্যেবা আক্তার তন্নী (৮ম) জানান, আমরা বিকাল বেলায় বুনন কাজে অংশ নেই। এতে সামান্য কিছু আয় হয় সেটা লেখা পড়ার কাজে সহায়ক হয়। আবার সময়টাও অপচয় হয় না।
সাপ্লাইয়ার মো. শাহ আলম বলেন, আমি প্রথমমত নিজেই রশি বানিয়ে বুনন কাজটি করতাম। সেখান থেকে আমি শিখেছি। এলাকায় গরিব মানুষদের উদ্ধুদ্ধ করি তারা আগ্রহ প্রকাশ করলে তাদের প্রশিক্ষিত করে তুলি। আমাকে কোম্পানী অর্ডার দিলে সে অনুযায়ী নোয়াখালী হতে কেজি দরে রশি সংগ্রহ করি। রশি ও কোড নম্বর (ফরমেট) বলে দিলে আমি তাদের দিয়ে প্রডাকশনে কাজ করাই। এ পর্যন্ত অন্তত ১শ আইটেমের কাজ করেছি। আমরা পণ্যগুলো সেট অনুযায়ী আগে ঢাকা জয়দেবপুর সিডম্যানে পাঠাতাম এখন কারখানা লোকাল হওয়ায় ফুলবাড়ীয়া উপজেলার আছিম পাটুলী ইউনিয়নের জঙ্গলবাড়িতে পাঠাই। সেখানে কোম্পানী ফিনিশিং ও রপ্তানী উপযোগি করে তোলে। ২০২০ সালে জানুয়ারি মাসে ৩০ লাখ টাকার অর্ডার পেয়েছিলাম। এরপর থেকে অর্ডারের বাজার চাঙ্গা হয়নি। তবে বাজার চাঙ্গা হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন এখন। কাজ শেষে এসব পণ্য তিনি ভ্যান যোগে নিজ গোডাউনে একত্রিত করে সেখান থেকে পিকআপ যোগে জঙ্গলবাড়ি কারখানায় পৌঁছে দেন। সেখানে বাকী প্রসেসিং হয়। এ সব পণ্য বর্ষাকালে পৌঁছাতে খুব সমস্যা হয়, কারণ এগুলো পাতা জাতীয় বৃষ্টির পানিতে ভিজে গেলে পন্য নষ্ট হয়ে যায়। ##