স্টাফ রিপোর্টার, বিএমটিভি নিউজঃ ঈদের দিন ভােরে ময়মনসিংহ নগরী ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে দুই অটোরিকশা চালক নিহত ঘটনায় জড়িত তিন ছিনতা্ইকারীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তাদের কাছ থেকে রক্তমাখা কাপড় ও ছুরি উদ্ধার করেছে কোতোয়ালী মডেল থানা পুলিশ। গ্রেফতারকৃতরা হত্যার সাথে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে। গ্রেফতারকৃতরা হলেন, নগরীর গোহাইলকান্দি এলাকার ভজন কুমার দের ছেলে অনন্ত কুমার দে (১৯), কাজী মিল্লাত হোসেনের ছেলে কাজী মোঃ মাহিন বাদশা (১৯) ও জামতলা মসজিদ ভাড়াটিয়া মোহাম্মদ খোকনের ছেলে মামুন (১০)।তাদের মধ্যে মামুন নগরীর সৈয়দ নজরুল ইসলাম কলেজ ও অনন্ত কুমার দে ময়মনসিংহ কমার্স কলেজের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী। আজ রোববার সকালে জেলা পুলিশ সুপারের কনফারেন্স রুমে এক সাংবাদিক সম্মেলনে এতথ্য জা্নান জেলা পুলিশ মাছুম আহাম্মদ ভুঞা পিপিএম। ছিনতাইকারী তিন জনেই নেশাখোর।
পুলিশ জানায়, সদর উপজেলার দাপুনিয়া বাজারের চাঁন মিয়ার ছেলে সাদেক আলী (৩৫), একই উপজেলার চর ঘাগড়া এলাকার আক্কাস আলীর ছেলে হাবিবুর রহমান (৫১) সারারাত অটোরিকশা চালিয়েছেন। ভোরে একই ছিনতাইকারী দল গোহাইলকান্দি পশ্চিমপাড়া ও বিপিন পার্কের সামনে এসএ সরকার গলিতে তাদেরকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করে পালিয়ে যায়।
খবর পেয়ে কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহ কামাল আকন্দ ও ওসি (তদন্ত) ফারুক হোসেনের নেতৃত্বে ভোর পৌণে ৫টায় নগরীর পুলিশ বিপিন পার্ক সংলগ্ন ৯/গ ডিএন চক্রবর্তী রোড রোড থেকে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তির লাশ ও গোহাইলকান্দি পশ্চিমপাড়া পাকা রাস্তার উপর থেকে আরেকটি লাশ উদ্ধার করা হয়।
পরবর্তীতে ঘটনাস্থল থেকে আলামত জব্দকরে প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে নিহতদের লাশ সনাক্ত করেন। প্রথম ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধারকৃত লাশ সদরের ভাটি বারেরার পাড় আক্কাস আলীর ছেলে অটোরিক্সা চালক হাবিবুর রহমান (৫২) ও দ্বিতীয় ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধারকৃত লাশ শষ্যমালা গ্রামের চাঁন মিয়ার ছেলে অটো রিক্সাচালক সাদেক মিয়া (৩৫)।
লাশ সনাক্ত হওয়ার পর সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে শনিবার বিকালে নগরীর গোহাইল কান্দি জামতলা ও কাশর তিনকোনা পুকুরপাড় থেকে জড়িত উল্লেখিত ৩জনকে গ্রেফতার করে। এবং তাদের কাছ হত্যান্ডে ব্যবহৃত চাকু ও আসামীদের পরনের রক্তমাখা জামা-কাপড় উদ্ধার করা হয়। পরে আসামীরা হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত থাকার কথা পুলিশের কাছে স্বীকার করে। ছিনতাইয়ের উদ্দেশ্যে পরিকল্পিতভাবে রিক্সা ভাড়া নিয়ে কৌশলে তাদের কাঙ্খিত স্থানে নিয়ে যায় ছিনতাই কাজে বাধা দিলে একই ছুরি দিয়ে অটোচালক ও রিক্সাচালককে হত্যা করে।
পুলিশ সুপার মাছুম আহাম্মদ ভূঞা বলেন, সদর উপজেলার দাপুনিয়া বাজারের চাঁন মিয়ার ছেলে অটোরিকশা চালক সাদেক মিয়া (৩৫) ও একই উপজেলার চর ঘাগড়া এলাকার আক্কাস আলীর ছেলে রিকশাচালক হাবিবুর রহমান (৫১) ঈদের রাতে গাড়ি চালাতে বের হন। ঘটনার দিন মধ্যরাতে তিন ছিনতাইকারী গাঙ্গিনারপাড় এলাকা থেকে সাদেক মিয়ার অটোরিকশা ভাড়া করে শহরের বিভিন্ন এলাকায় ঘোরাফেরা করেন। একপর্যায়ে ভোর পৌনে ৪টার দিকে গোহাইলকান্দি এলাকায় গিয়ে ছিনতাইয়ের চেষ্টা করেন। এ সময় সাদেক মিয়া ছিনতাইয়ে বাধা ও টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে তাকে ছুরিকাঘাতে হত্যার পর টাকা নিয়ে ঘটনাস্থল থেকে আবার গাঙ্গিনার পাড়ে আসে।তিনি আরও বলেন, গাঙ্গিনার পাড় থেকে আবারও হাবিবুর রহমানের রিকশা ভাড়া করে ভোররাত সাড়ে ৫টার দিকে বিপিন পার্কের বিপরীতে ডিএন চক্রবর্তী রোডে আসে। সেখানে এসে ছিনতাইয়ের চেষ্টা করলে হাবিবুর রহমানও বাধা দেয়। এতে ছিনতাইকারীরা ক্ষিপ্ত হয়ে হাবিবুর রহমানকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করে ঘটনাস্থল থেকে চলে যায়।
আসামীদের মধ্যে অনন্ত কুমার দে এর বিরুদ্ধে কোতোয়ারী মডেল থানায় ১৮৭৮ সালের অস্ত্র আইনের ১৯ ধারায় মামলা রয়েছে মামলা নং ২০, তাং ০৬-১২-২০২০্ইং। অপর দুই জনের বিরুদ্ধে মাদকসেবনসসহ বিভিন্ন অপরাধের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। তাদের কোতোয়ালী মডেল থানায় পৃথক দুটি হত্যা মামলা রুজু করা হয়েছে।
নিহত সাদেকের বড় ভাই মোশারফ বলেন, সাদেক শুক্রবার দিনগত রাত ১২টার দিকে অটোরিকশা নিয়ে বের হয়। সকালে পুলিশ আমাদের ফোন করে জানায়, গোহাইলকান্দি এলাকা থেকে সাদেকের মরদেহ উদ্ধার করেছে। তিনি হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের কঠিন বিচার দাবী করেছেন।
পুলিশ সুপার জেলা পুলিশ মাছুম আহাম্মদ ভুঞা পিপিএম বলেন, ঈদের ছুটির পর নগরীর চিহ্নিত ছিনতাইকারী ও মাদকের জড়িতদের তালিকা করা হবে। তালিকা শেষে কোতোয়ালী থানা পুলিশ, ডিবি পুলিশ ও ডিএসবি যৌথভাবে চালিয়ে গ্রেফতার করা হবে। তিনি আরো বলেন, আমরা রোজার মাসে ২০০ ছিনতাইকারী গ্রেফতার করেছি।
কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহ কামাল আকন্দ বলেন, অটোরিকশা দুটি উদ্ধার করা হয়েছে। এ্ চক্রের সাথে্ আরো কেউ জড়িত থাকলে তাদেরকে গ্রেফতার করা হবে।