স্টাফ রিপোর্টার, বিএমটিভি নিউজঃ
রাজধানীর আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেলের পরীক্ষামূলক চলাচল শুরু করেছে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)। পরীক্ষামূলক চলাচলের তিনটি ধাপের মধ্যে এটি প্রথম। আগামী ১৫ই অক্টোবরের মধ্যে পরীক্ষামূলক চলাচল সম্পন্ন হওয়ার পর যাত্রী নিয়ে চলাচলের দিন-তারিখ ঠিক করা হবে। আজ বিকাল ৪টা ৩৫ মিনিটে পরীক্ষামূলকভাবে মেট্রোরেল চলাচলের উদ্বোধন করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। এসময় ডিএমটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এম এ এন সিদ্দিকসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এক ব্রিফিংয়ে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, আগামী অক্টোবর মাসের শেষ প্রান্তে মেট্রোরেলের আগারগাঁও থেকে মতিঝিল অংশ উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী বলেন, অক্টোবরে শেষ প্রান্তে উদ্বোধনের পর প্রথমদিকে ফার্মগেট, সচিবালয় ও মতিঝিল স্টেশনে মেট্রোরেল থামবে। পর্যায়ক্রমে বাস্তবতা বিবেচনায় নিয়ে মেট্রোরেল থামার স্টেশন সংখ্যা বৃদ্ধি করা হবে। ওবায়দুল কাদের বলেন, উত্তরা থেকে আগারগাঁও অংশে বর্তমানে প্রতিদিন গড়ে ৭০ হাজার যাত্রী যাতায়াত করছেন। এই সংখ্যা ধারাবাহিকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে এখন দৈনিক গড়ে আয় হচ্ছে ২৬ লাখ টাকা। মেট্রোরেলকে জাতির বিশাল সম্পদ উল্লেখ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, সব কাজে আমাদের রাজনীতি যুক্ত করা উচিত নয়। রাজনীতির জায়গায় রাজনীতি।আর রাজনীতি করলেই এ ধরনের পরিকল্পনা করা যায় না। ভিশন থাকতে হয়। সে ভিশন আছে বলেই শেখ হাসিনার সরকার এ ধরনের মেগাপ্রকল্প একে একে করতে পারছে। শুধু মুখে বলিনি, বাস্তবায়ন করে জাতিকে দেখাচ্ছি। ওবায়দুল কাদের বলেন, এক বছর আগেও মানুষ ভাবেনি পদ্মাসেতু এত তাড়াতাড়ি চালু হবে, মেট্রোরেল মতিঝিল পর্যন্ত প্রস্তুতি সম্পন্ন হবে। পরে মন্ত্রী আনুষ্ঠানিকতা শেষে ফ্লাগ উড়িয়ে মেট্রোরেলের আগারগাঁও থেকে মতিঝিল অংশে মেট্রোরেল চলাচল পরীক্ষণের সুচনা করেন।
এদিকে, শুক্রবার যাতে করে কোনো ধরনের সমস্যা না হয় এ জন্য বুধবার মধ্যরাতে এ রুটে মেট্রোরেল চলাচল করেছে। ১৫ই অক্টোবরের মধ্যে পরীক্ষামূলক চলাচল সম্পন্ন হওয়ার পর যাত্রী নিয়ে চলাচলের দিন-তারিখ ঠিক করা হবে। উদ্বোধনের দিন ঠিক করা হবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সময় পাওয়া সাপেক্ষে।
ডিএমটিসিএল জানায়, পরীক্ষামূলক চলাচলের প্রথম ধাপ পারদর্শিতা পরীক্ষা বা পারফরম্যান্স টেস্ট। এর পরের ধাপে হবে ‘সিস্টেম ইন্টিগ্রেশন টেস্ট’। চূড়ান্ত পর্যায়ে হবে ‘ট্রায়াল রান’ বা পরীক্ষামূলক চলাচল। এ তিন ধরনের চলাচলকেই পরীক্ষামূলক চলাচল হিসেবে বিবেচনা করা হয়। পরীক্ষামূলক চলাচল শুরুর আগে মেট্রোরেলের পথ যাচাই (ভেরিফিকেশন) করতে হয়। এর আগে প্রকৌশলীরা কয়েকভাগে বিভক্ত হয়ে হেঁটে আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত রেলপথ যাচাই করেছেন। এ সময় পরীক্ষামূলক মেট্রোরেল চলাচল শুরুর ক্ষেত্রে কোনো বাধা, চ্যালেঞ্জ কিংবা কারিগরি ত্রুটি আছে কি না, তা দেখেছেন কর্মকর্তারা। ডিএমটিসিএল কর্মকর্তারা বলছেন, মেট্রোরেলের চলাচলের পথে বাধা নেই। যাচাই করা একধরনের আনুষ্ঠানিকতা।
শুরুতে উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ২০ দশমিক ১০ কিলোমিটার পথে মেট্রোরেল লাইন নির্মাণের সিদ্ধান্ত হয়। পরে তা কমলাপুর পর্যন্ত সম্প্রসারণের সিদ্ধান্ত হয়েছে। আগারগাঁও থেকে মতিঝিল অংশে পূর্ত কাজের অগ্রগতি ৯৫ শতাংশের কিছু বেশি। মেট্রোরেল প্রকল্পের ব্যয় দাঁড়িয়েছে ৩৩ হাজার ৪৭২ কোটি টাকা। শুরুতে এ প্রকল্পের ব্যয় ছিল প্রায় ২১ হাজার কোটি টাকা। মূলত মতিঝিল থেকে কমলাপুর পর্যন্ত ১ দশমিক ৬ কিলোমিটার বাড়তি অংশ নির্মাণ, প্রতিটি স্টেশনের জন্য নতুন করে জমি অধিগ্রহণসহ বিভিন্ন নতুন অনুষঙ্গ যুক্ত হওয়ায় খরচ বেড়েছে।
২০২৫ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ করার কথা। মেট্রোরেল প্রকল্প নেয়া হয় ২০১২ সালে। জাপানের উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার (জাইকা) সঙ্গে ঋণচুক্তি হয় পরের বছর। মূল কাজ শুরু হয় ২০১৭ সালে। উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত মেট্রোরেলের পথের দৈর্ঘ্য ১১ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার। এ পথে ৯টি স্টেশন রয়েছে। উত্তরা উত্তর (দিয়াবাড়ি), উত্তরা সেন্টার, উত্তরা দক্ষিণ, পল্লবী, মিরপুর ১১, মিরপুর-১০, কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া ও আগারগাঁও। এসব স্টেশন থেকে এখন যাত্রীরা মেট্রোরেলে চড়তে পারছেন। আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত স্টেশন রয়েছে সাতটি- বিজয় সরণি, ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার, শাহবাগ, টিএসসি, প্রেসক্লাব ও মতিঝিল।