ময়মনসিংহ ও শেরপুরকে ভূমিহীন ও গৃহহীনমুক্ত জেলা হিসেবে ঘোষণা করবেন-প্রধানমন্ত্রী

image

You must need to login..!

Description

স্টাফ রিপোর্টার, বিএমটিভি নিউজঃ
সোমবার (০৭ আগস্ট) সকাল ১১ টা ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সম্মেলনকক্ষে মুজিববর্ষ উপলক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে ৪র্থ পর্যায়ে জমি ও গৃহ প্রদান কার্যক্রমের শুভ উদ্বোধনকে সামনে রেখে বিভাগীয় প্রশাসনের আয়োজনে এক প্রেসিং ব্রিফিং অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন বিভাগীয় কমিশনার উম্মে সালমা তানজিয়া।

“বাংলাদেশের একজন মানুষও গৃহহীন থাকবে না” মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর এই নির্দেশনা বাস্তবানের লক্ষ্যে মুজিব শতবর্ষে সারা দেশের ন্যায় ময়মনসিংহ বিভাগেও গৃহ নির্মাণ কার্যক্রম গৃহীত হয়। শুরু হয় গৃহ নির্মাণ উপযোগী খাস জমি চিহ্নিতকরণ, অবৈধ দখলদারদের দখল হতে খাস জমি উদ্ধার, প্রকৃত উপকারভোগী নির্বাচন, সঠিক মান ও ডিজাইন অনুসরণপূর্বক নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে গৃহ নির্মাণ সম্পন্নকরণ, ২ শতাংশ জমি বন্দোবস্ত প্রদান, কবুলিত সম্পাদন, রেজিস্ট্রেশনসহ সেমি পাকা গৃহ হস্তান্তর কার্যক্রম। এছাড়া যেখানে খাস জমি নেই সেখানে সরকারিভাবে জমি ক্রয় ও বেসরকারিভাবে জমি দানের মাধ্যমে জমির সংস্থান করে ভূমিহীনদের মধ্যে জমি বন্দোবস্ত ও গৃহনির্মাণ করে দেয়া হয়।

ময়মনসিংহ বিভাগে সর্বশেষ হালনাগাদ তালিকামতে মোট (ক-শ্রেণির) ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবার সংখ্যা ১৩,০৯৬টি। ১ম পর্যায়ে ৪,০৩৪টি, ২য় পর্যায়ে ২৫৭২টি, ৩য় পর্যায়ে অন্যভাবে (আশ্রয়ণ, গুচ্ছগ্রাম ও মালিদের) ৪২৬টিসহ মোট ১১,৫৯৭টি পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়েছে।

ময়মনসিংহ বিভাগে ১ম পর্যায়ে ০৬টি, ২য় পর্যায়ে ১৭টিসহ মোট ২৩টি উপজেলাকে প্রধানমন্ত্রী ইতিপূর্বে ভূমিহীন ও গৃহহীনমুক্ত উপজেলা ঘোষণা করেছেন। এ পর্যায়ে আরো ১০টি (ময়মনসিংহ সদর, ঈশ্বরগঞ্জ, হালুয়াঘাট, ধোবাউড়া, গফরগাঁও, মুক্তাগাছ, শেরপুর সদর, শ্রীবরদী, সরিষাবাড়ী ও ইসলামপুর) উপজেলাকে প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক আগামী ০৯/০৮/২০২৩ তারিখে ভূমিহীন ও গৃহহীনমুক্ত উপজেলা ঘোষণা করবেন। একইসাথে ময়মনসিংহ ও শেরপুর জেলাকে ভূমিহীন ও গৃহহীনমুক্ত জেলা হিসেবে ঘোষণা করবেন।

ময়মনসিংহ বিভাগে ১ম পর্যায়ে ৪,০৩৪টি “ক” শ্রেণির ভূমিতেও গৃহহীন পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী গত ২৩/০১/২০২১ খ্রি. তারিখে ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবার গৃহ প্রদান কার্যক্রম শুভ উদ্বোধন করেন। ১ম পর্যায়ে প্রতিটি গৃহের জন্য অর্থ বরাদ্দ ছিল ১,৭১,০০০ টাকা। ২য় পর্যায়ে ১,৫৭২ টি “ক” শ্রেণির ভূমিষ্ঠান ও গৃহহীন পরিবারের গৃহ নির্মাণ করা হয়েছে। ৩য় পর্যায়ে ময়মনসিংহ বিভাগে ২৬টি “ক” শ্রেণির ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়েছে। ৩য় আংশিক সংশোধন করে গৃহপ্রতি বরাদ্দ দেয়া হয় ২,৫৯,০০০/- টাকা। ৩য় পর্যায়ে (১ম ধাপে) প্রধানমন্ত্রী ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে জমি ও গৃহ প্রদান কার্যক্রম শুভ উদ্বোধন করেন। ৪র্থ পর্যায়ে ময়মনসিংহ বিভাগে মোট ৩,১৩৩টি ‘ক’ শ্রেণির ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবার পুনর্বাসনের নিমিত্ত গৃহ নির্মাণের জন্য প্রতিটি গৃহের অনুকূলে অর্থ বরাদ্দ ছিল ২,৮৪,৫০০/- টাকা।

প্রেস ব্রিফিংয়ের মাধ্যমে জানানো হয়, আশ্রয়ণ প্রকল্পের ধারাবাহিকতা ৪র্থ পর্যায়ে এবার মমনসিংহ জেলাও ৭৯৫ টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারের নিকট জমিসহ গৃহ হস্তান্তর করা হবে। একই সাথে উপকারভোগী পরিবারের নিকট জমির কবুলিত, দলিল ও খতিয়ান প্রদান করা হবে।

জমি ও গৃহ প্রদান কার্যক্রমের মাধ্যমে এ পর্যায়ে মমনসিংহ জেলার সদরের ১৭৬টি, মুক্তাগাছার ২৫২টি, গফরগাঁওয়ের ৮৮টি, ঈশ্বরগঞ্জের ৬৩টি, হালুওয়াঘাটের ১৭৮টি এবং ধোবাউড়ার ৩৮টি পরিবারের পুনর্বাসন করার মাধ্যমে এ ৬টি  উপজেলা ভূমিহীন গুহহীনমুক্ত হবে।  আগামী ০৯ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভার্চুয়াল মাধ্যমে সরাসরি যুক্ত হয়ে উদ্বোধন করবেন বলে প্রেস ব্রিফিংয়ে জানানো হয়।

ব্রিফিংয়ে আরো জানানো হয়, এলক্ষ্যে চতুর্থ পর্যায়ে বরাদ্দকৃত ১৩৩৪ গৃহের মধ্যে ৫৩৯ টি গৃহের নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করে ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারের নিকট জমিসহ গৃহ হস্তান্তর করা হয়েছে। অবশিষ্ট ৮৬০ টি পরিবারের মধ্যে ৬৫টি পরিবারকে তাদের চাহিদা অনুযায়ী আইনানুগভাবে আশ্রয়ণ প্রকল্পে খালিঘর ও প্রথম পর্যায়ে বরাদ্ধকৃত খালি ঘরে পুনর্বাসন করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, ইতিপূর্বে মমনসিংহ জেলার ভালুকা, ফুলবাড়িয়া, নান্দাইল, ফুলপুর, ত্রিশাল, গৌরীপুর ও তারাকান্দা উপজেলাকে ভূমিহীন ও গৃহহীনমুক্ত উপজেলা ঘোষণা করা হয়েছে। অর্থাৎ ইতিপূর্বে সাতটি উপজেলা মোট ১৩১৫টি পরিবারকে ভূমি ও গৃহ প্রদানের মাধ্যমে উপজেলাগুলোকে ভূমিহীন ও গৃহহীনমুক্ত উপজেলা হিসেবে ঘোষণা করা হয়। তন্মধ্যে প্রথম পর্যায়ে ১৩০৫ টি, দ্বিতীয় পর্যায়ে ৬৪৫টি, তৃতীয় পর্যায়ে ৮৪০টি, গৃহ নির্মাণের মাধ্যমে মোট ২,৭৯০ টি ‘ক’ শ্রেণির ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়েছে।

উপস্থিত মিডিয়ার সংবাদকর্মীদের প্রশ্নের উত্তরে মমনসিংহ জেলা প্রশাসক মো: মোস্তাফিজার রহমান বলেন, আমাদের এ বিশাল কর্মযজ্ঞের সাথে আপনারা সবসময় আছেন বলে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি। আপনারা সকল বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছেন, সেজন্য ধন্যবাদ জানাই। জমি সংক্রান্ত সকল কাজ সম্পন্ন হয়েছে। নির্মাণের অবশিষ্ট কাজ দ্রুতই সম্পন্ন হবে।

আমাদের মমনসিংহ পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক কামরুল হাসানের প্রশ্নের উত্তরে জেলা প্রশাসক জানান, ময়মনসিংহ জেলা আরো কেউ যদি ভূমিহীন ও গৃহহীন অর্থাৎ বাদ পড়ে থাকেন তাদেরকে, ৫ম পর্যায়ে অন্তর্ভুক্ত করা সর্বোচ্চ চেষ্টা আমাদের রয়েছে। যোগাযোগের মাধ্যমে তাদেরকে তালিকাভুক্ত করা হবে।
ময়মনসিংহ সিটি প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মতিউল আলম, বলেন, সিটি করপোরেশন এলাকার রেল লাইনের পাশে ৪৫ বছর ধরে ভাসমান মানুষ গৃহহীন ও ভুমিহীন ২৫ টি পরিবার বসবাস করে আসছে। তারা গৃহ বা জমি পায়নি। এব্যাপারে বিভাগীয় কমিশনার উম্মে সালমা তানজিয়া বলেন, সিটি করপোরেশন এলাকায় এই প্রকল্পের আওতায় আসেনি। আগামীতে বরাদ্দ আসলে পর্যায়ক্রমে কেউ যদি ভূমিহীন ও গৃহহীন অর্থাৎ বাদ পড়ে থাকেন তাদেরকে, ৫ম পর্যায়ে অন্তর্ভুক্ত করা সর্বোচ্চ চেষ্টা আমাদের রয়েছে। যোগাযোগের মাধ্যমে তাদেরকে তালিকাভুক্ত করা হবে।

আজকের বাংলাদেশ পত্রিকার বার্তা সম্পাদক বাবলি বলেন, যেহেতু এই আশ্রয়ণ প্রকল্পটি সিটি কর্পোরেশন এলাকার আওতাধীন নয় সেহেতু এখানকার সাধারণ মানুষ যেন হয়রানি না হয় সে ব্যাপারে এ প্রেস ব্রিফিংয়ের মাধ্যমে সঠিক তথ্য প্রদানের সহযোগিতা চেয়েছেন প্রশাসনের কাছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মুজিববর্ষেই শুধু প্রায় ২ লক্ষ ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে ভূমি ও গৃহ প্রদান করেছেন। প্রধানমন্ত্রী তার মেয়াদে মোট প্রায় ৫ লক্ষ ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে ভূমিহীন ও গৃহহীনমুক্ত করেছেন। এটা নিঃসন্দেহে সরকারের সাফল্য। যে স্বপ্ন তিনি দেখেছেন সেটা বাস্তবানে অক্লান্ত পরিশ্রম করছেন তিনি, উপস্থিত সাংবাদিকদের মধ্যে ময়মনসিংহ প্রেস ক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোঃ বাবুল হোসেন উল্লেখ করেন।

আঞ্চলিক তথ্য অফিসের উপপ্রধান তথ্য অফিসার মোহাম্মদ ওমর ফারুক দেওয়ান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মো. মেহেদী হাসান, ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা মো. মাহফুজুল হকসহ বিভাগীয় ও জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাবৃন্দ, বিভাগ ও জেলায় কর্মরত বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ প্রেস ব্রিফিংয়ে উপস্থিত ছিলেন।

প্রধান সম্পাদকঃ
মতিউল আলম

সম্পাদক ও প্রকাশকঃ
মাকসুদা আক্তার