You must need to login..!
Description
আপেল মাহমুদ্ঃ
বঙ্গবন্ধু ছিলেন, আছেন এবং থাকবেন বাঙ্গালী জাতির হৃদয়ে অমর হয়ে এক মানসিক সার্বভৌম শক্তি হয়ে। বাঙ্গালী জাতি হাজার বছর ধরে তাদের লালিত স্বপ্ন সাধনা শোষন মরণ, নির্যাতন-নিপীড়ন-বঞ্চনা-গঞ্জনা যাতনার যাঁতাকলে পিষ্ঠ এক নির্মম-নিষ্ঠুর অধ্যায়ের স্বীকার হয়েছিল তার পরিসমাপ্তি ঘটে বাঙ্গালিকে মুক্তির মহানায়ক বাঙ্গালির প্রাণপুরুষ বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমানের আজীবন সংগ্রামের ফলে। যার প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ এক সার্বভৌম রাষ্ট্রে পৃথিবীর মানচিত্রে স্থান করে নিল। বাংলার স্বাধীনতা হঠাৎ করে একদিনে এক বছরে এক যুগের ফসল নহে। দীর্ঘ পথ পরিক্রমা এবং সুদীর্ঘ সংগ্রামের ফসল।
বঙ্গবন্ধু হলেন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব, বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। একটিকে বাদ দিয়ে অন্যটির কল্পনা করা যায় না। বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ একই মুদ্রার এপিঠ ওপিঠ। বঙ্গবন্ধু হলেন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব।
আমরা পিছনের পাতা দেখলেই বুঝতে পারব বঙ্গবন্ধুর অবদান। আমরা যদি বঙ্গভঙ্গের কথা বলি, তখন কি দেখি তখন কি দেখি না যে, বাঙ্গালি জাতি স্বাধীন শাসন ও সংস্কৃতির লক্ষ্যে বৃটিশরা ১৯০৫ সালে ঢাকাতে রাজধানী করে আসাম ও বঙ্গদেশকে নিয়ে প্রদেশে করেছিল। এ সুযোগকে আমরা ধরে রাখতে পারিনি। লর্ড কার্জনের এ বঙ্গভাগকে ১৯১১ সনে রদ করা হলো। ১৯৪০ সালের ২৩ মার্চ যখন মুসলিম লীগের অধিবেশনে ঐতিহাসিক লাহোর প্রস্তাব শেরে বাংলা এ,কে,ফজলুল হকের উপস্থাপনায় গৃহীত হলো। যার সূত্র ধরে তখনকার এক পাকিস্তানের স্বপ্ন দ্রষ্টা করি ইকবাল ও মোঃ আলী জিন্নাহ আন্দোলনে ব্রতী হয়। ঐতিহাসিক লাহোর প্রস্তাবে ছিল, ভারতের দুই অংশে উত্তর-পশ্চিম এবং পূর্বভারতের মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চলে স্বাধীন রাষ্ট্রসমূহের সিদ্ধান্ত।
শেরে বাংলা এ প্রসঙ্গে বলেছিলেন, বাংলাদেশের শাসন ক্ষমতা বাঙ্গালী মুসলমানদের হাতে এসেছে। এ ক্ষমতা তারা কোন মতেই অজানা কর্তৃপক্ষের হাতে তুলে দিতে পারে না। হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী (বঙ্গবন্ধু যার স্নেহধন্য বলিষ্ঠ ছাত্র নেতা হিসেবে সহযোদ্ধা ছিলেন) এ প্রসঙ্গে বলেছিলেন, প্রত্যেক অঞ্চল তাদের উপযোগী শাসনতন্ত্র প্রণয়ন করবে। বাংলাদেশের মুসলমানেরা তাদের স্বাধীন ও সার্বভৌম অঞ্চল গঠন করবে। কিন্তু ধর্মভিত্তিক এক অঞ্চল গঠন করার ষড়যন্ত্রকারী জিন্নাহ গংরা গোপনে চক্রান্তের জাল ফেলতে লাগলো। তারা পূর্ব বাংলাকে উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলে সাথে একীভূত করে এক বিবৃতিতে একাধিক রাষ্ট্রের কথাই বলা হত। পরিশেষে ১৯৪৫ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ সমাপ্তির পর বৃটিশরা এ উপমহাদেশ ত্যাগ করার পরিকল্পনা নিতে থাকে। সেই লক্ষে ১৯৪৬ সনে ব্রিটিশ মন্ত্রিসভার তিনজন মন্ত্রী, স্যার স্টেফোর্ড ক্রীপস, নর্ড পেথিক লরেন্স এবং এ,ভি আলেকজান্ডার, সিমলায় কংগ্রেস মুসলিম লীগের নেতৃবৃন্দের সাথে আলোচনা করে ১৬ মে যে ঘোষনা দেন ইহাই ঐতিহাসিক ক্যাবিনেট মিশন প্লান বা মন্ত্রী মিশন পরিকল্পনা। ঐ পরিকল্পনাতে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌম অঞ্চল হিসেবে ঘোষনা ছিল।
ক্যাবিনেট মিশন প্লানে ভারতবর্ষকে তিনটি অঞ্চলে ভাগ করা হয়। এবং তিনটি স্বাধীন রাষ্ট্রের কথা ঘোষনা দেয়া হয়। (ক) গ্রুপে মাদ্রাজা, বোম্বাই,মধ্য প্রদেশ, যুক্ত প্রদেশ, বিহার উড়িষ্যা (খ) গ্রুপে বেলিচিস্তান, পাঞ্জাব, সিন্ধু ও উত্তর পশ্চিমা সীমান্ত প্রদেশ (গ) বাংলা ও আসাম নিয়ে আলাদা স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র। কিন্তু পাকিস্তানি স্বার্থান্বেষী কায়েমী স্বার্থবাদী গোষ্ঠী ১৯৪৬ সনে দিল্লির মুসলিমলীগের কনভেনশনে লাহোর প্রস্তাবের অর্থাৎ রাষ্ট্রসমূহ না বলে একক স্বাধীন রাষ্ট্রে সিদ্ধান্ত প্রবল বিরোধিতার মূখেও পাশ করে। তারা বলেন, প্রিন্টিং মিসটেকের কারণে স্টেট এর সাথে ‘এস’ যুক্ত হয়েছিল।
সেদিন শেরে বাংলা, হোসেন সরওয়ার্দী ও ছাত্র নেতা বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ছাত্র যুবসমাজ প্রবল বিরোধিতা করেন। বঙ্গবন্ধু ব্রিটিশ শাসনের শেষ অধ্যায় এবং পাকিস্তানি শাসনের শুরু থেকেই বাঙ্গালীদের স্বাধিকার স্বাধীনতার চেতনাকে ধারণ করে বলীয়ান হতে থাকেন। আত্ম নিয়ন্ত্রনাধিকার স্বাধিকার স্বাধীনতার সংগ্রামে নিজেকে উৎসর্গ করেন। পরবর্তীতে ১৯৫২’র ভাষা আন্দোলনে ৫৪’র যুক্ত ফ্রন্ট নির্বাচনে, ৫৬ সালে সাংবিধানিক কালা কানুন বাতিল। ৫৮ সালের সামরিক শাসন। ৬২’র শিক্ষা ও আইয়ুব সাহেবের পতনের লক্ষ্যে আন্দোলনে নিজকে বাংলা ও বাঙ্গালীর একমাত্র শক্তির উৎসে পরিণত করেন। পরবর্তী পশ্চিম পাকিস্তানের লাহোরের বিরোধী দলের এক সমাবেশে বঙ্গবন্ধু ঐতিহাসিক ছয় দফা ঘোষণা করেন। ১৯৬৬ সালের ১৩ ই ফেব্রুয়ারী পরে আওয়ামীলীগের কাউন্সিল অধিবেশনের মার্চ মাসের ইহা বিপুল হর্ষধ্বনি ও করতালিতে সমর্থিত হয়। ছয় দফা ছিল বাঙ্গালীদের মুক্তি সনদ। স্বাধীনতা অর্জনে পাক প্রস্তুতি। বঙ্গবন্ধু লাহোর প্রস্তাব কেবিনেট মিশন পরিকল্পনার পর নিজে ও দলীয় বাগধারায় পূর্ব পাকিস্তানকে একটি স্বতন্ত্র অঞ্চল হিসেবে চিন্তা করতে থাকেন।
ছয় দফা ভিত্তিক স্বাধিকার আন্দোলন যখন তুঙ্গে তখন পশ্চিম শোষক দল ১৯৬৮ সনে জানুয়ারী মাসে এক ষড়যন্ত্রের জাল বিস্তার করেন। বঙ্গবন্ধুকে ১নং আসামী করে আরো ৩৪ জন সামরিক ও বেসামরিক কর্মচারীর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলা “আগরতলার ষড়যন্ত্র” মামলা দায়ের করেন। ছয় দফা প্রারম্ভেই ঐতিহাসিক লাহোর প্রস্তাবের আলোকে যুক্ত রাষ্ট্রীয় সরকার পদ্ধতির কথা ছিল। মন্ত্রি পরিষদ শাসিত
সরকারের জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চয়তা ছিল। পাকিস্তানের দুই অঞ্চলের জন্য পৃথক দুই ধরণের মুদ্রা ও সম্পদের পশ্চিম পাকিস্তানের পাচার না হতে পারে সে হিসাব রাখতে হবে। প্রতিরক্ষা ও পররাষ্ট্র ব্যতীত অন্যান্য দপ্তরগুলো প্রদেশের হাতে ন্যস্ত থাকবে। প্রদেশগুলো নিজস্ব অঞ্চলে কর ধার্য্য ও অন্য রাষ্ট্রের সাথে বাণিজ্য ও চুক্তি করবে। কেন্দ্রের খরচাদির জন্য প্রদেশগুলো প্রয়োজনীয় অর্থ সরবরাহ করবে। প্রদেশগুলোর প্যারামিলিসিয়া বাহিনী গঠন করতে পারবে।
ইত্যাদি দাবিগুলো যখন বাঙ্গালী জাতির বাঁচার দাবি, প্রাণের দাবিতে পরিণত হয় তখনই স্বৈরচারী আইয়ুব শাহী বঙ্গবন্ধু ও তার সহযোগীদেরকে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় ১৯৬৮ সালে জানুয়ারী মাসে গ্রেফতার করে। আইয়ুব, মোনেন’গংদের চক্রান্ত নিপীড়ন ও দমনমূলক কার্যক্রমের এক জলন্ত নজীর এবং পূর্ব পাকিস্তানকে মুজিব ও তার সহযোগীদেরকে হত্যা করে পশ্চিম পাকিস্তানের শাসন শোষণ অব্যহত রাখার এক হীন চক্রান্ত এই “আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা” তাদের অভিযোগ শেখ মুজিব ও অন্যান্য আসামীরা আগরতলায় বসে স্বাধীন পূর্বক বাংলা প্রতিষ্ঠার ষড়যন্ত্র করেছিল। তাদেরকে সহযোগিতা করেছিল ভারতীয় সেনাবাহিনীর কর্মকর্তাবৃন্দ। বঙ্গবন্ধু পাকিস্তান থেকে পূর্ব বাংলাকে বিচ্ছিন্ন করার চিন্তা করছেন। এই অভিযোগে তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলা দায়ের করা হয়।
১৯৬৯ গণ অভ্যুত্থান, ছাত্রদের ১১ দফা, বাঙ্গালী কৃষক শ্রমিক, ছাত্র শিক্ষক, সাংবাদিক, ডাক্তার উকিল, ব্যবসায়ী, চাকুরীজীবি, কবি সাহিত্যিক সামরিক বে-সামরিক কর্মকর্তা কর্মচারী বঙ্গবন্ধুর মুক্তি ও স্বাধিকার আদায়ের লক্ষ্যে দুর্বার আন্দোলনে ঝাপিয়ে পড়ে তার বঙ্গবন্ধু জনগণের প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয় এবং আকাশে বাতাসে শুধু স্লোগান-আমার নেতা তোমার নেতা, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব, তোমার আমার ঠিকানা, পদ্মা-মেঘনা-যমুনা, পিন্ডি না ঢাকা-ঢাকা, ঢাকা।
১৯৭০ সালের ৭ ডিসেম্বর জাতীয় পরিষদের নিবার্চন হলে বাংলা ও বাঙ্গালীর প্রাণপুরুষ মহানায়ক বঙ্গবন্ধুর দল আওয়ামী লীগ পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদের সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন লাভ করে ও ইয়াহিয়া ক্ষমতা হস্তান্তর করল না। ডিসেম্বরের ১৭ তারিখ এবং ৭১”র জানুয়ারীর ৭ তারিখে প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিজয়ে পশ্চিম পাকিস্তানিরা ষড়যন্ত্রের নীল নকশা শুরু করল।
১৯৭০ এর নির্বাচনে পাকিস্তানের মৃত্যূ ঘন্টা বেজে গেছে মনে করেই ভুট্টো বঙ্গবন্ধুর হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর না করে অন্য চিন্তার বর্শবতী হয়ে বারবার জাতীয় পরিষদের অধিবেশন ঘোষণা স্থগিত করতে থাকে। বঙ্গবন্ধু ইয়াহিয়া ভূট্টোর মাঝে ঢাকায় আলোচনা হয়। ইয়াহিয়ার লক্ষ্য সময় নষ্ট করা এবং সামরিক বাহিনীকে সংগঠিত করা। সম্পূর্ণ অগণতান্ত্রিকভাবে ৩ মার্চের আহুত জাতীয় পরিষদের অধিবেশন ১ মার্চ এক ঘোষণার কবলে ক্ষুব্দ বাঙ্গালী জাতি বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। সংগ্রাম শ্লোগানে দেশের আকাশ বাতাস প্রকম্পিত হতে থাকে। পুলিশের গুলিতে বহুলোক হতাহত হয়। সরকারী ঘোষণা ও গুলির প্রতিবাদে ২ মার্চ ঢাকায় এবং ৩ মার্চ সারাদেশে হরতাল পালিত হয়। দেশের সবকিছু অচল হয়ে পড়ে। ঐতিহাসিক ৭ই মার্চে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বঙ্গবন্ধু জনসমুদ্রে তার গুরুত্বপূর্ণ ভাষণ দেন। তিনি বলেন, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। আইন অমান্য অফিস আদালত, স্কুল, কলেজ আদালত বন্ধ ঘোষণা। রেডিও টেলিভিশনে পাকিস্তানের খবর থাকবে না।
জনগণ অক্ষরে অক্ষরে নির্দেশ মেনে নেয়। পাকিস্তানি সরকারের সব নির্দেশ অধ্যাদেশ, আইন বাতিল হয়ে পড়ে। পাকিস্তানের সামরিক সরকার অকেজো এবং নাজুক অবস্থায় পড়ে। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশই কার্যকরী হতে থাকে। ঢাকাসহ সারাদেশে অসহযোগ আন্দোলনের ফলে সৃষ্ট অশান্ত রাজনৈতিক অবস্থাকে শান্ত করার লক্ষ্যে ১৫ই মার্চ ইয়াহিয়া ভূট্টো বঙ্গবন্ধুর সাথে আলোচনা করতে আসেন। এটা ছিল নিছক লোক দেখানো গোপন চক্রান্ত বাস্তবায়নই ছিলো তাদের লক্ষ্য।
মুক্তি পাগল বাঙ্গালী এসব মিথ্যা অসাড় আলোচনা প্রত্যাখ্যান করে সর্বত্র সার্বিক অসহযোগীতা চালিয়ে যেতে থাকে। ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চে ইয়াহিয়া খান পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে বাঙ্গালী জাতি নিধন কল্পে হত্যাযজ্ঞে মেতে উঠে। রাতের আঁধারে অর্ধলক্ষ নারী পুরুষ, শিশু ছাত্র শিক্ষক সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবি, ডাক্তার, বাঙ্গালী ইপিআর ও পুলিশ বাহিনীকে হত্যা করে। বঙ্গবন্ধুকে ২৫শে মার্চে রাত্রেই গ্রেপ্তার করে পাকিস্তানে নিয়ে যায়। গ্রেপ্তারের পূর্বেই বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা পূনরায় প্রদান করেন।
সাথে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও এদের দেশীয় দোসর আলবদর রাজাকার তথা বাংলাদেশের স্বাধীনতা বিরোধী চক্রের সাথে বাঙ্গালীদের লড়াই, কৃষক শ্রমিক, ছাত্র শিক্ষক, সাংবাদিক, ডাক্তার, উকিল বুদ্ধিজীবি সেনা, নৌ, বিমান বাহিনীর একাংশ, পুলিশ বিডিআর সর্বস্তরের স্বাধীনতাকামী মানুষ নিজেদের অবস্থান থেকে যুদ্ধ করে এবং ভারতে আশ্রয় ও ট্রেনিং নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে অবতীর্ণ হয়ে দীর্ঘ ৯ মাস সশস্ত্র সংগ্রামের মধ্য দিয়ে ১৯৭১ এর ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশের মাটি থেকে ভারতীয় মিত্র বাহিনীর সহায়তার পাক হানাদার মুক্ত করে। আজকের আলোচনার লক্ষ্য “বঙ্গবন্ধু এবং বাংলাদেশ”। বঙ্গবন্ধু না থাকলে বাংলায় স্বাধীনতার পূর্ণতা বা বাংলাদেশ রাষ্ট্র হিসেবে পরিগণিত হতো না।
বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের সার্বভৌম শক্তি ছিলেন, যা ব্যতীত রাষ্ট্র হয় না। পাকিস্তান সার্বভৌম ক্ষমতার পরিমন্ডলে বঙ্গবন্ধুর বাস্তবরুপী সার্বভৌম শক্তি ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পেতে থাকে। বাংলাদেশে তথা সাবেক পূর্ব পাকিস্তানে তখন পাকিস্তানের সার্বভৌমত্ব ছিল।
বঙ্গবন্ধু হাজার বছরের বাঙ্গালীর সংগ্রামী চেতনা আশা আকাঙ্খাকে লালন করে বিরাট শক্তিতে পরিণত হন। হঠাৎ করে তিনি স্বাধীনতার ডাক দেননি, লাহোর প্রস্তাব ক্যাবিনেট মিশন প্লান-ভাষা আন্দোলন ৬ দফা ভিত্তিক আন্দোলনে, তিনি বাঙালী জাতিকে ক্রমান্বয়ে অভিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছানোর সংগ্রাম দীক্ষা দিয়েছিলেন। জাতীয় আন্দোলন, স্বাধিকার থেকে স্বাধীনতা আন্দোলনে একমাত্র তার নির্দেশই জনগণ (পাকিস্তান পন্থী ছাড়া) মেনে নেয়। পাকিস্তান শাসনতান্ত্রিক আইন, অধ্যাদেশ বাংলাদেশের (সাবেক পূর্ব পাকিস্তানে) অভ্যন্তরের অচল, অমান্য হয়ে পড়ে। সুতরাং তিনি ছিলেন বাংলাদেশের সার্বভৌম ক্ষমতা, এমন ক্ষমতা যা নির্দেশ দানে, কর্তৃত্ব পালনে, অধ্যাদেশ প্রদানে অদ্বিতীয়, এটি একক এবং অবিভাজ্য। অধ্যাপক গার্নার বলেন, “যে ব্যাক্তি সাময়িকভাবে স্বীয় আদেশ রাষ্ট্রের অভ্যন্তরে বলবৎ করতে সক্ষম হয় এবং জনগণ উক্ত আদেশ মেনে নেয় এটাই বাস্তব সার্বভৌমত্ব, আইনানুমোদিত শক্তি”।
এবং জনগণ এ আদেশ মেনে নেয়। এবং আমরাও দেখি পাকিস্তান সার্বভৌমত্বাধীনে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশই আইনে পরিণত হয়েছিল।
১৯৭২ সালের ৮ জানুয়ারিতে পাকিস্তানি কারাগার হতে বাংলার মহানায়ক বাংলাদেশের সার্বভৌম ক্ষমতার উৎস জাতির জনক বঙ্গবন্ধু লন্ডন দিল্লী হয়ে ১০ই জানুয়ারী বাংলার মাটিতে প্রত্যাবর্তন করেন।
সেদিন স্বজন হারানোর ব্যথা, সম্পদ, ঘরবাড়ী পোড়ানোর কথা, আত্মত্যাগ ইজ্জত লুন্ঠনের মর্ম বেদনা বাংলার আকাশ বাতাসের বারুদের গন্ধ শহীদানের দেহের লাখ লাখ বুলেটের ক্ষত চিহ্ন। আকাশে শকুনের-চিলের ডাক, শৃগাল মরুভূমি সদৃশ বাংলার যুদ্ধের ময়দান এসব কিছু পিছনে ফেলে বাংলার লক্ষ লক্ষ মানুষ তেঁজগাও বিমান বন্দর থেকে সোহরাওয়ার্দী ময়দান পর্যন্ত তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না এ সার্বভৌমত্ব অধিকারী বঙ্গবন্ধুকে দেখা এবং পাবার জন্য।
ঢাকার বাইরে সর্বত্র জনতার মিছিল-আনন্দাশ্রু টেলিভিশন রেডিওর সামনে ছোটখাট জনসমুদ্র শ্রোতা অভাবনীয়, অকল্পনীয় সমাবেশ। ১০ই জানুয়ারী আমরা ফিরে পেলাম সার্বভৌমত্ব। হলাম স্বাধীন। ফেরত পাঠানো হলো ভারতীয় বাহিনীকে বাংলার মাটি থেকে। বঙ্গবন্ধু জাতির পিতা, এই রাষ্ট্রের স্থপতি, তাকে অস্বীকার করা বাংলাদেশকে অস্বীকার করা।
যারা এখনো না বুঝে জাতীয় ঐক্য ও সংহতিকে নষ্ট করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত তাদের মুখোশ খুলে দিতে হবে। না হয় বাংলার স্বাধীনতার ইতিহাস অন্যদিকে প্রবাহিত হবে। আমরা দেশ পেলাম , স্বাধিনতা পেলাম কিন্তু ভাগ্যের নিমর্ম পরিহাস হারালাম আপন মানুষ ,রাষ্ট্রের বাস্তব সার্বভৌম শক্তি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমানকে ।
১৫ ই আগষ্ট এ জাতির বিশ্বাসঘাতকরা বঙ্গবন্ধুকে স¦পরিবারে সরিয়ে দিলেন এই পৃথিবী থেকে ।
যার ফলে বাঙ্গালী জািত হলো দিশেহারা , বিশ্ববিবেক হলো স্তব্ধ । আর বাংলাদেশ হয়ে পড়ল চির দিনের অভিভাবকহীন । তাই যতদিন এই পৃথিবী থাকবে বাঙ্গালী জািতসহ সমগ্র মানবজাতি এই খুনীদের আত্বা থেকে ঘৃনা করবে । আর আজকের এই বেদনাক্ষনে একটি কথা না বললেই নয় তাহলো বঙ্গবন্ধুর সাথে বাঙ্গালীজাতির আত্মার সর্ম্পক । বঙ্গবন্ধুকে বাঙ্গালীজাতির হৃদয় থেকে কেউ কোন দিন মুছে ফেলতে পারবে না । বঙ্গবন্ধু ছিলেন আছেন থাকবেন বাঙ্গালী জাতির হৃদয়ে অমর হয়ে এক মানসিক সার্বভৌম শক্তি হয়ে ।
লেখক পরিচিতি: – আপেল মাহমুদ
পুলিশ সুপার, টুরিস্ট পুলিশ,
চট্টগ্রাম রিজিয়ন।