সাবেক ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমানের  ১ম নামাজে জানাযায় লাখো মুসল্লীঃ কাল ২য় নামাজে জানাযা ও দাফন

image

You must need to login..!

Description

মতিউল আলম,বিএমটিভি নিউজঃ  
ময়মনসিংহের কিংবদন্তি রাজনীতিক, সাবেক ধর্মমন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যক্ষ মতিউর রহমান (৮১) আর নেই (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। রোববার (২৭ আগস্ট) রাত পৌণে ১১ টার দিকে ময়মনসিংহ নগরীর ধোপাখোলা নেক্সাস কার্ডিয়াক হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। আজ বাদ আছর ময়মনসিংহ কেন্দ্রীয় আঞ্জুমান ঈদ ময়দানে লাখো মুসল্লীর অংশ গ্রহণে ১ম নামাজে জানাযা অনুষ্ঠিত হয়। কাল ২য় নামাজে জানাযা শেষে পারিবারিক গোরস্থানে দাফন করা হবে। মরহুমের নামাজে জানাযায় উপস্থিত থেকে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করে বক্তব্য রাখেন  কৃষি আবদুর রাজ্জাক, গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ, সমাজ কল্যাণ প্রতিমন্ত্রী আশরাফ আলী, সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ বাবু, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমেদ হোসেন, প্রধানমন্ত্রী প্রতিনিধি মশিউর রহমান হুমায়ন, ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের মেয়র ইকরামুল হক টিটু, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এহতেশামুল আলম, সাধারণ সম্পাদক এড, মোয়াজ্জেম হোসেন বাবুল প্রমুখ। পরিবারের পক্ষে মরহুমের ছেলে মোহিত-উর রহমান শান্ত বক্তব্য রাখেন  ।

রাতে সাবেক ধর্মমন্ত্রীর মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে একনজর তাকে দেখার জন্য হাজার হাজার নেতাকর্মী, বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক-সাংস্কৃতিক, পেশাজীবী ও সব শ্রেণিপেশার মানুষ হাসপাতালে ভিড় জমায়। এতে সেখানে এক শোকাবহ পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে।

বর্ষীয়ান এ নেতার মৃত্যুর খবর পেয়ে তাৎক্ষনিকভাবে হাসপাতালে ছুটে যান ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ইকরামুল হক টিটু, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এহতেশামুল আলম, সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মোয়াজ্জেম হোসেন বাবুল, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ইউসুফ খান পাঠানসহ আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতারা।প্রবীণ সমাজ সেবক ও রাজনীতিবিদ অধ্যক্ষ মতিউর রহমান ১৯৪২ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি ময়মনসিংহ সদরের আকুয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম আবদুর রেজ্জাক এবং মায়ের নাম মেহেরুন্নেসা খাতুন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শোক ও দুঃখ প্রকাশ

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সাবেক সদস্য, ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও সাবেক ধর্মমন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যক্ষ মতিউর রহমানের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

এক শোক বার্তায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, মতিউর রহমান ছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের একজন নিবেদিতপ্রাণ নেতা। শত প্রলোভনের মুখে এবং বারবার কারাবরণ করা সত্ত্বেও সারাজীবন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শ ও আওয়ামী লীগের রাজনীতির প্রতি অবিচল থেকে তিনি তাঁর সাংগঠনিক দায়িত্ব পালন করে গেছেন। তিন দশকের বেশি সময় ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের নেতৃত্বদানকারী এই নেতা মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষক ও সফল সংগঠকের দায়িত্ব পালন করেন। মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদানের জন্য ২০২২ সালে তিনি একুশে পদক লাভ করেন। তাঁর মৃত্যুতে দলের এক অপূরণীয় ক্ষতি হলো এবং আমি হারালাম একজন বিশ্বস্ত সহযোদ্ধাকে।
প্রধানমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমানের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং তাঁর শোক সন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা প্রকাশ করেন।

তার মৃত্যুতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ শোক প্রকাশ করেন।

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সাবেক সদস্য, উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য অধ্যক্ষ মতিউর রহমান ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ছিলেন। এছাড়া মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ছিলেন তিনি। মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের ঢালু যুব শিবিরের ইনচার্জ ছিলেন। ১৯৭১ সালের ১০ ডিসেম্বর ময়মনসিংহ পাক-হানাদার মুক্ত হওয়ার দিনে শহরের সার্কিট হাউজ মাঠে বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেন অধ্যক্ষ মতিউর রহমান। মুক্তিযুদ্ধে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২২ সালে একুশে পদক পান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, সামরিক স্বৈরাচারবিরোধী সব গণতান্ত্রিক আন্দোলনের অন্যতম এ নেতা।

ময়মনসিংহের মাটি ও মানুষের নেতা হিসেবে পরিচিতি পেয়েছিলেন অধ্যক্ষ মতিউর রহমান। তিনি ২০১৪ সালের নির্বাচনে মহাজোটের কাছে আসন ছাড়ার উপহার হিসেবে আওয়ামী লীগ সরকারের সে মেয়াদে ধর্মমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। এর আগে তিনি ময়মনসিংহ সদর আসন থেকে ১৯৮৬ ও ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নের সংসদ সদস্য হন।অধ্যক্ষ মতিউর রহমান ১৯৭৫ থেকে ১৯৭৭ সাল পর্যন্ত দুই মেয়াদে দীর্ঘ ২৩ মাস কারাবরণ করেন। তিনি ২০০২ সালে ময়মনসিংহের চারটি সিনেমা হলে বোমা হামলার মামলায় কারাবরণ করেন। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে অকৃত্রিম অবদানের জন্য অধ্যক্ষ মতিউর রহমান ‘মুজিব দর্শন বাস্তবায়ন পরিষদ’ কর্তৃক ২০০০ সালে ‘বঙ্গবন্ধু পদক’ লাভ করেন।

বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক এ প্রবীণ রাজনীতিক আকুয়া মডেল প্রাইমারি স্কুল থেকে ১৯৫৩ সালে প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করেন। এসময় তিনি বৃহত্তর ময়মনসিংহ জেলায় প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষায় প্রথমস্থান অধিকার করেন। ১৯৫৪ সালে ময়মনসিংহ জেলা স্কুলে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হন এবং সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত লেখা পড়া করেন। এরপর তিনি নকলা উচ্চ বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণি সম্পন্ন করেন। নবম ও দশম শ্রেণি পর্যন্ত ময়মনসিংহের মৃত্যুঞ্জয় স্কুলে পড়াশুনা করেন এবং ১৯৫৮ সালে মেট্রিকুলেশন পরীক্ষায় কৃতিত্বের সঙ্গে উত্তীর্ণ হন। ময়মনসিংহ আনন্দমোহন কলেজ থেকে ১৯৬১ সালে বিজ্ঞান বিভাগে উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করেন।

এরপর ১৯৬৪ সালে আনন্দমোহন কলেজ থেকে বিএসসি পাস করেন। এ সময় তিনি গফরগাঁও থানার পাঁচবাগ উচ্চ বিদ্যালয় এবং মনোহরদি হাতিরদিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে বিএসসি শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এরপর ১৯৬৬ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রাণিবিদ্যা বিভাগে ভর্তি হয়ে ১৯৬৭ সালে এমএসসি সম্পন্ন করেন। এমএসসি পাসের পর তিনি জামালপুর জেলার নান্দিনা কলেজ এবং ময়মনসিংহের নাসিরাবাদ কলেজে প্রাণিবিদ্যার শিক্ষক হিসেবে চাকরি করেন। তিনি স্বল্পকালীন ময়মনসিংহ কলেজেও শিক্ষকতা করেন।

সাবেক ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমান এঁর মৃত্যুতে মসিক মেয়রের শোক প্রকাশ

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সাবেক সদস্য, ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি, সাবেক ধর্মমন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যক্ষ মতিউর রহমানের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মোঃ ইকরামুল হক টিটু।

মেয়র এক শোকবার্তায় মহান মুক্তিযুদ্ধে এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগে অধ্যক্ষ মতিউর রহমানের অনন্য ভূমিকাকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন। তিনি বলেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যক্ষ মতিউর রহমান ছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের এক নিবেদিত প্রাণ । জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শকে তিনি আজীবন বুকে লালন করেছেন। মহান মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদানের জন্য তিনি ২০২২ সালে একুশে পদক লাভ করেন। ময়মনসিংহে আওয়ামী রাজনীতিতে তাঁর রয়েছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অবদান।

তিনি আরও বলেন, অধ্যক্ষ মাতিউর রহমানের মৃত্যুতে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে গেল। তাঁর মৃত্যুতে দেশ একজন আদর্শ দেশপ্রেমিক হারালো এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ হারালো বঙ্গবন্ধুর চেতনায় উজ্জীবিত এক দূরদর্শী আদর্শিক নেতাকে।

মেয়র মরহুমের রুহের মাগফিরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।

প্রধান সম্পাদকঃ
মতিউল আলম

সম্পাদক ও প্রকাশকঃ
মাকসুদা আক্তার