You must need to login..!
Description
ফুলবাড়ীয়া প্রতিনিধি, ময়মনসিংহের ফুলবাড়ীয়া উপজেলার ভবানীপুর ফাজিল মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মোবারক আলীর বিরুদ্ধে মাদ্রাসার টাকা আত্বসাৎসহ নানা অভিযোগ। শিক্ষার্থীদের বেতন, পরীক্ষার ফিস ও ফরম ফিলাপের টাকা আদায়ে কোন রশিদ দেয়া হয় না প্রায় দুই যুগ ধরে। নিয়ম নিতির কোন বালাই নেই মাদ্রাসাটিতে। অভিযোগ উঠেছে, এসব অনিয়ম এবং দুর্নীতির অভিযোগের কোন তোয়াক্কা না করে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ বেতন ভাতা উত্তোলন করছেন নিয়মিত।
উপজেলার ভবানীপুর ইউনিয়নে ‘ ভবানীপুর ফাজিল মাদ্রাসা’ একটি প্রাচীনতম শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। স্থানীয় সচেতন মহল আলোকিত সমাজ গড়ার লক্ষ্যে ১৯৪৪ সনে মাদ্রাসাটি প্রতিষ্ঠা করেন। স্থাবর অস্থাবর মিলে ৫ দশমিক ৪৯ একর জমি রয়েছে মাদ্রাসার নামে। এছাড়াও মাদ্রাসাটিতে অতিরিক্ত রয়েছে আরো প্রায় ৭২ শতাংশ জমি। শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে সুবিশাল একটি খেলার মাঠ।
দীর্ঘ প্রায় ৪ বছর যাবত মাদ্রাসায় কোন কমিটি না থাকায়, ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মোবারক আলী বীরদর্পে মাদ্রাসার দুটি পুকুর, খেলাধুলার বিশাল মাঠ ভাড়া দিয়ে অর্থ আত্বসাৎ করেছে। এছাড়াও সনদ বিক্রি করে সব টাকা লুটপাট করেছে।
স্থানীয় ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল বলেন, মাদ্রাসায় শিক্ষার কোন পরিবেশ নাই। চলছে হ য ব র ল অবস্থা। মাদ্রাসায় শিক্ষার্থীর কোন বালাই নেই। প্রথম শ্রেনী থেকে পঞ্চম শ্রেনী পর্যন্ত কক্ষ গুলোর তালাই খোলা হয় না। এসব অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষকে কেই কিছু বলতে সাহস পায় না। কেউ এসব প্রতিকারের জন্য তার কাছে গেলে অপমান করে তাড়িয়ে দেন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ। মাদ্রাসার খেলার মাঠ ভাড়া দেওয়ায় খেলাধূলা বঞ্চিত শিক্ষার্থীরা। নেই কোন আভ্যন্তরিন অডিট কমিটি। চলছে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের রাজত্ব।
সরেজমিনে বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা গেছে, কাগজে-কলমে এবতেদায়ী ১ম হতে ৫ম শ্রেণি হতে পর্যন্ত ১৩০ জন শিক্ষার্থী থাকলেও ক্লাশে কোন শিক্ষার্থীকে উপস্থিত পাওয়া যায়নি। দাখিল, আলিম, ফাজিলসহ অন্যান্য শ্রেণী কক্ষগুলোতে ৫ থেকে ১০জন শিক্ষার্থী দেখা গেছে। প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা বলেন স্কুল ফিডিং না থাকায় ক্লাশে আসে না। স্থানীয়দের অভিযোগ প্রতিষ্ঠানে (এবতেদায়ী) ১ম থেকে ৫ম শ্রেণী কোন ছাত্র/ছাত্রী নেই, মাস গেলেই তারা বেতন উত্তোলণ করছেন কিভাবে।
মাদ্রাসায় প্রতিবছর সেশন ফি, পরীক্ষার ফি, রেজি: ফি, ফরম পূরণ ফিসহ নানাবিধ ফিস রশিদের মাধ্যমে আদায় করা হয় না। ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ তার ইচ্ছামত খরচ দেখিয়ে মাদ্রাসার এসব আয়ের টাকা খরচ দেখিয়ে আত্বসাৎ করেছে।
মাদ্রাসা থেকে দাখিল, আলিম পাশ করা শিক্ষার্থীরা অন্যত্র লেখাপড়া করার জন্য মার্কসিট ও প্রত্যয়নপত্র চাইতে গেলে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ শিক্ষার্থীকে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র না দিয়ে তাদের ঐ মাদ্রাসায় ভর্তি করাতে বাধ্য করে। শেষ পর্যন্ত যারা মাদ্রাসা থেকে চলে যায়, তাদের গুণতে হয় মোটা অংকের টাকা। প্রত্যয়নপত্রের জন্য গেলে অভিভাবকদের সাথে খারাপ আচরণের সাথে গুণতে হয় অতিরিক্ত টাকা, না দিলে মিলে না প্রত্যয়নপত্র।
ফাজিল পরীক্ষার্থী হালিমা খাতুনের মা রাহেলা খাতুন বলেন, আমার মেয়ে একজন প্রতিবন্ধি হওয়ার পরও উপবৃত্তি ও সরকারী সকল সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত। উপবৃত্তির আবেদনের জন্য একটা প্রত্যয়নপত্রের প্রয়োজন হলে আমি মাদ্রাসায় গিয়েছিলাম। তিনি (ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ) আমার সাথে খারাপ আচরণ করে অতিরিক্ত টাকা দাবী করেন। রাগে আমি প্রত্যয়নপত্র আনি নাই।
স্থানীয়রা অভিযোগ করেন,অধ্যক্ষের খামখেয়ালীর জন্য এই মাদ্রাসায় কোন উন্নয়ন হয়নি।
মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মোবারক আলী বলেন, প্রতিষ্ঠানের নামে একাধিক মামলা থাকায় আমরা উঠে দাড়াতেই পারছি না। নিয়মিত এডহক কমিটিই করা যাচ্ছে না মামলা থাকায়। আমি ২০১৪ সালে উপাধ্যক্ষ হিসাবে যোগদান করেছি। আমি কোন রশিদ বই পাইনি। অজোপাড়াগায়ে প্রতিষ্ঠান তেমন কোন আয় নেই। ছাত্ররা ফিস -ই দিতে চায় না। অন্য আয় পাব কোথায়? কিছু কিছু আয় দিয়ে মাদ্রাসার দরজা জানালা মেরামত করি।
তিনি বলেন, আভ্যন্তরিক কোন অডিট কমিটি নেই। কমিটি না থাকায় ব্যাংকে টাকা জমা দেওয়া হয় না। যেগুলো জমা আছে সেগুলো উঠানো যায় না। গত বছর মে মাসে নবায়নের জন্য আবেদন করা হয়েছে। প্রকাশনীর সিংহভাগ টাকা পিকনিকে খরচ করা হয়েছে।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো.বেলায়েত হোসেন বলেন, ফাজিল মাদ্রাসাগুলো এডিসি মহোদয় দেখেন। এত অনিয়ম খুবই দু:খজনক। প্রতিষ্ঠানে গিয়ে সার্বিক বিষয়ে খোঁজখবর নিতে হবে।
ময়মনসিংহের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মাহফুজুল আলম মাসুম বলেন, আর্থিক অনিয়মের ব্যাপারে অভিযোগ পাইনি। লিখিত অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন ও মাদ্রাসার আদায়কৃত অর্থ ব্যাংকে জমাদানের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।###