ঈশ্বরগঞ্জে অগ্নিকাণ্ডে আট গরু ও সাত ঘর পুড়ে ছাই

image

You must need to login..!

Description

ঈশ্বরগঞ্জ (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি

ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জে অগ্নিকান্ডের ঘটনায় ৮ টি গরু ও ৭ ঘর পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছে। বৃহষ্পতিবার মধ্যরাতে উপজেলার রাজিবপুর ইউনিয়নের  উজানচর নওপাড়া গ্রামে ওই ঘটনা ঘটে।

সরজমিনে জানা যায়, আগুনে পুড়ে ঘরগুলির শেষ চিহ্নটুকুও আর নেই। যেখানে ঘরগুলি ছিল বর্তমানে সেখানে ভিটের ওপর পড়ে আছে শুধু ছাই। এক কোনায় পড়ে আছে আধাপোঁড়া চাল। রয়েছে গৃহস্থালীর নানান কিছু। এর পাশেই ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে দশ, বিশ, একশ, পাঁচশ ও হাজার টাকার বেশ কয়েকটি আগুনে ঝলসানো নোট। আর অনেক নোট পুড়ে ছাই।

পাশের একটি গোয়াল ঘরে চার ভাই মিলে লালন-পালন করতেন দেশী বিদেশী জাতের গরু। সেখানের ২০টি গরু হতাহত হয়েছে। নিজেদের পোড়া ঘরের মধ্যে নির্বাক বসে আছেন চার ভাই সালাম (৫৪), শহীদ (৫৫), হেলাল (৪৮) ও গিয়াস উদ্দিন (৬৫) ও তাঁদের পরিবার। বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে পুড়ে গেছে তাঁদের সংসার। বৃদ্ধ মা ছাড়া ছোট ছোট শিশুদের নিয়ে থাকতেন তাঁরা। এখন কোথায় যাবেন, কি খাবেন দিশেহারা পরিবারের সবাই।

এলাকাবাসী জানায়, বৃহস্পতিবার গভীর রাতে আগুনে পুড়ে গেছে চার ভাইয়ের বসতঘর ছাড়াও এক সাথে লালন-পালন করা ২০টি গরুর মধ্যে ৮টি বিভিন্ন জাতের গরু। বাকী গুলির অবস্থাও আশঙ্কাজনক।
হেলাল মিয়া জানান, সারাদিন কাজকর্ম করে স্ত্রী সন্তান নিয়ে সকলেই ঘুমিয়ে পড়ে। হঠাৎ রাত ১২ টার দিকে পোড়া গন্ধ পেয়ে উঁকি দিয়ে দেখা যায় পাশের বড় ভাই গিয়াস উদ্দিনের ঘরের এক পাশে আগুন জ্বলছে। আর তা মহুর্তেই ছড়িয়ে পড়ে বাকী ঘরগুলিতে। তখন বাঁচাও বাঁচাও বলে চিৎকার দিলে লোকজন ছুটে এলে ততক্ষনে আগুনে চারটি বসত ঘর পুড়ে যায়। সেই সাথে পাশেই একটি গোয়াল ঘরে ছিল চার ভাইয়ের যৌথ উদ্যোগে লালন পালন করা ২০টি গরু। সকলেই গরুগুলির উপর নির্ভরশীল। এ অবস্থায় গোয়াল ঘরে আগুন লেগে গেলে আগুন নিভানোর আগেই সকল গরুই দ্বগ্ধ হয়। এরমধ্যে ৮টি গরু পুড়ে ছাই হয়ে যায়। বাকীগুলির অবস্থা ভালো নয়।

ক্ষতিগ্রস্থ আরেক ভাই মো.শহীদ মিয়া জানান, ধারদেনা করে পুজি নিয়ে গরু কিনে তা লালন-পালন করে বাজারে বিক্রি করেন। আর তা লভ্যাংশ ভাইদের মধ্যে ভাগ করে নেন। এভাবেই চলছে গত প্রায় দশ বছর ধরে। বিদেশী জাতের গরু ছাড়া রয়েছে দেশী জাতের। একটি গরুর সর্বোচ্চ মূল্য রয়েছে প্রায় ৩ লাখ টাকা। তার মধ্যে অনেক গাভী গরু থেকে দুধ বিক্রি করা হতো। এখন সকল কিছু হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন। তিনি আরও বলেন, গত বুধবার একটি গরু বিক্রি করেন ৬০ হাজার টাকায়। সেই টাকা তাঁর কাছেই রক্ষিত ছিলো। আর কিছু লাগিয়ে আরেকটি গরু কিনার পরিকল্পনা ছিলো। কিন্তু নগদ টাকাগুলিও পুড়ে গেছে।

চার ভাইয়ের পরিবারের মোট সদস্য সংখ্যা প্রায় ৩০জন। আগুনে সর্বস্ব হারিয়ে এখন খোলা আকাশের নিচে। ক্ষতিগ্রস্থ সালামের স্ত্রী ফরিদা বেগম(৪০) জানান, গত প্রায় ২০ বছর ধরে তিল তিল করে জমানো তাঁর সব সঞ্চয় আর গৃহস্থালী পণ্য এক রাতের আগুনে মাত্র আধা ঘন্টায় পুড়ে গেছে। বিলাপ করতে করতে তিনি বলেন, চোখের সামনে সব শেষ অইতাছে কিন্তু কিচ্ছু করতাম পারছি না। খালি নিজের জান ও পোলাপাইনডি লইয়া বাইর অইছি।

জানা যায়, বৈদ্যুতিক মিটার থেকে আগুনের সুত্রপাত হয়। খবর পেয়ে ঈশ্বরগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের একটি টিম সেখানে গেলেও ততক্ষনে সকল কিছুই পুড়ে ছাই হয়ে যায়। রক্ষা করা যায়নি কিছুই।

এ ব্যাপারে ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোসা. হাফিজা জেসমিন বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে একজন কর্মকর্তাকে পাঠানো হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্থদের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

প্রধান সম্পাদকঃ
মতিউল আলম

সম্পাদক ও প্রকাশকঃ
মাকসুদা আক্তার