ময়মনসিংহ অঞ্চলে প্রাথমিক স্তরে শিক্ষার্থী কমেছে ২ লাখ ৪২ হাজারঃ বেড়েছে মাদ্রাসা শিক্ষার্থী

image

You must need to login..!

Description

স্টাফ রিপোর্টার, বিএমটিভি নিউজঃ 

প্রাথমিক শিক্ষায় সরকার গুরুত্ব দিয়ে অবকাঠামো উন্নয়ন করলেও ময়মনসিংহ অঞ্চলে গত ৩ বছরের ব্যবধানে প্রাথমিক স্তরে শিক্ষার্থী কমেছে ২ লাখ ৪২ হাজার ৪৭ জন। এসময়ে বেড়েছে মাদ্রাসা শিক্ষার্থী।
করোনাকালে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো বন্ধ থাকায় এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে দাবি সংশ্লিষ্টদের। তবে বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থী ফেরাতে চেষ্টা চালানো হচ্ছে বলে জানিয়েছে শিক্ষা বিভাগ।শিক্ষা বিভাগের তথ্য বলছে, ময়মনসিংহের ১৩টি উপজেলায় প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে ২ হাজার ১৪০টি। সরকারি এই বিদ্যালয়গুলোতে চলতি বছর শিক্ষার্থী আছে ৫ লাখ ৩২ হাজার ৬৪০ জন। এর পাশাপাশি কিন্ডারগার্টেন, এনজিও পরিচালিত স্কুল, ইবতেদায়ি মাদ্রাসা, বেসরকারি বিদ্যালয়সহ প্রাথমিক স্তরের আরও ২ হাজার ৫৮৯টি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থী রয়েছে ২ লাখ ৪০ হাজার ৭৮০ জন। সরকারি-বেসরকারি মিলে প্রাথমিক স্তুরের ৪ হাজার ৭২৯টি প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থী আছে ৭ লাখ ৭৩ হাজার ৪২০ জন।

অথচ ২০১৯ সালে প্রাথমিক স্তরের সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান শিক্ষার্থী ছিল ১০ লাখ ১৫ হাজার ৪৬৭ জন। তিন বছরের ব্যবধানে প্রাথমিক স্তরে শিক্ষার্থী কমেছে ২ লাখ ৪২ হাজার ৪৭ জন।সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ২০২০ সালের শুরুর দিকে দেশে করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দিলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়। কিন্তু নতুন উদ্যমে গ্রামে কওমি মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা হয়। স্কুল বন্ধ থাকায় শিশুরা বাড়িতে কর্মহীন বসে থাকার চেয়ে মাদ্রাসাগুলোতে ভর্তি করে দেয় অভিভাবকরা। করোনার পর স্কুল চালু হলেও ওইসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অভ্যস্ত হয়ে যাওয়ায় শিক্ষার্থীরা আর ফেরেনি।

এছাড়া আধুনিক ও বিজ্ঞান সম্মত পড়ালেখার পদ্ধতি আরোপ করা হলেও নতুন এ বিষয় অভিভাবকরা ভালোভাবে গ্রহণ করছে না। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী প্রাথমিকে পরীক্ষা পদ্ধতি উঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে চালু আছে পরীক্ষা পদ্ধতি। গতানুগতিক যেভাবে প্রতিষ্ঠানগুলো চলে আসছে অভিভাবকদের আগ্রহ বহাল রয়েছে। প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে স্কুল ফিডিং কর্মসূচির আওতায় জেলার ১০টি উপজেলায় স্কুল ফিডিং কর্মসূচি গত বছর থেকে বন্ধ রয়েছে। ফিডিং চালু থাকলে শিক্ষার্থী কিছুটা বাড়তে পারে ধারণা সংশ্লিষ্টদের।একাধিক শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নতুন নিয়ম অনুযায়ী প্রাক-প্রাথমিক ও প্রথম শ্রেণি পর্যন্ত কোনো ধরনের পরীক্ষা নেই। তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত পরীক্ষা পদ্ধতি বাতিল করা হয়েছে। কিন্তু শিক্ষার্থীদের প্রাত্যহিক ও সাপ্তাহিক মূল্যায়ন করা হয়। নতুন এ পদ্ধতির কারণে অভিভাবকরা মনে করে প্রাথমিকে কোনো পড়ালেখা হয় না, যেহেতু আনুষ্ঠানিক পরীক্ষা নেই। সে কারণে কিন্ডারগার্টেন বা মাদ্রাসাগুলোতে আগ্রহী হচ্ছে অভিভাবকরা।

সম্প্রতি ময়মনসিংহের তারাকান্দা উপজেলার বালিখা ইউনিয়নের মালিডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে জানা যায়, বিদ্যালয়টিতে প্রাক-প্রাথমিক থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থী আছে ২৪৬ জন। বিদ্যালয়টিতে ২০১৯ সালে শিক্ষার্থী ছিল ৩৬৪ জন। স্কুলের পঞ্চম শ্রেণিতে ১৩ জন শিক্ষার্থীর উপস্থিতি পাওয়া যায় মাত্র দু’জন। স্কুলের বোর্ডের হিসেবে মতে পঞ্চম শ্রেণিতে ছেলের সংখ্যা ৭ জন। প্রধান শিক্ষক শিউলী নাছরিন জানান, বিদ্যালয়টির পরিবেশ নান্দনিক করা হয়েছে। এলাকায় ছেলের সংখ্যাই কম। বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী বাড়াতে নিয়মিত বাড়ি বাড়ি গিয়ে চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে।

বানিহালা ইউনিয়নের গাজিয়াপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণিতে গিয়ে সাতজন শিক্ষার্থী পাওয়া যায়। বর্তমানে বিদ্যালয়টিতে শিক্ষার্থী ১৪৪ জন। ২০১৯ সালে শিক্ষার্থী ছিল ২২২ জন। বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক শারমিন ফজল বলেন, স্কুলের শিক্ষার্থী হঠাৎ কমে গেছে। শিক্ষার্থী ফেরাতে উঠান বৈঠক, অভিভাবকদের বুঝানো হচ্ছে।

শুধু এই উপজেলার স্কুলই নয়, অন্যান্য উপজেলাতেও কমেছে শিক্ষার্থী সংখ্যা। তবে কি কারণে কমছে শিক্ষার্থী এমনটি জানতে চাইলে ময়মনসিংহ জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. শহীদুল ইসলাম বলেন, শিক্ষার্থী কমার কারণ অনেক। শিক্ষার্থী ফেরাতে শিক্ষকদের হোম ভিজিট, চেষ্টা ও পরিশ্রমের তুলনায় সফল হচ্ছে না। তারপরেও আমাদের চেষ্টা অব্যাহত আছে।

তিনি আরও বলেন, অভিভাবকরা সরকারি সুযোগ সুবিধার জন্য প্রাথমিকে ভর্তি রেখে অন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠ নেওয়ায়। ওই শিক্ষার্থীরা যে আমাদের স্কুলে নেই তাও বলা যাবে না। এই শিক্ষার্থীদের নিয়মিত করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন মাধ্যম থেকে অভিভাবকদের সচেতন করতে পারলে শিক্ষার্থী আরও বাড়তে পারে।

প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগের ময়মনসিংহ বিভাগীয় উপপরিচালক মোহাম্মদ আলী রেজা বলেন, করোনাকালীন সময়ে স্কুল বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীরা মাদ্রাসায় চলে গেছে। উপস্থিতি বৃদ্ধির জন্য কাজ চলমান রয়েছে। এ অবস্থা কেটে যাবে।

তিনি আরও বলেন, নতুন শিক্ষা পদ্ধতিতে অনেকে মানিয়ে নিতে পারছে না। প্রতিদিন ও সাপ্তাহিক মূল্যায়ন করা হচ্ছে। মানুষের মধ্যে ভুল ধারণা ভাঙতে একটু সময় লাগবে।###

মতিউল আলম

প্রধান সম্পাদকঃ
মতিউল আলম

সম্পাদক ও প্রকাশকঃ
মাকসুদা আক্তার