You must need to login..!
Description
উবায়দুল হকঃ বিএমটিভি নিউজঃ
ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি প্রকাশ করা হয়েছে গত ২৫ সেপ্টেম্বর। এক সপ্তাহের মাথায় সেই কমিটি বাতিলের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেছেন পদবঞ্চিতরা। সোমবার (২ অক্টোবর) মানববন্ধন ও মঙ্গলবার (৩ অক্টোবর) অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন তারা। আন্দোলনকারীদের অভিযোগ, জেলা থেকে পাঠানো প্রস্তাবিত তালিকা থেকে ত্যাগী নেতাদের বাদ দিয়ে কেন্দ্রীয় দায়িত্বশীল নেতারা সুবিধা নিয়ে বিতর্কিতদের অন্তর্ভুক্ত করেছেন। এ কারণে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি ও সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেলকে ময়মনসিংহে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়েছে।
কমিটিতে বহিরাগত, বহিষ্কৃত, প্রবাসী ও বিতর্কিত অন্তত ২৬ জনকে অন্তর্ভুক্ত করার অভিযোগ উঠেছে। তাদের মধ্যে ১৬ জনের নাম স্থানীয় আওয়ামী লীগসহ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মানববন্ধন কর্মসূচি থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা হয়েছে।প্রকাশ করা একটি তালিকায় বলা হয়েছে, ময়মনসিংহে বাড়ি নয়, এমন ব্যক্তিও কমিটিতে স্থান পেয়েছেন। কার্যনির্বাহী সদস্য মৃনাল মুর্মুর বাড়ি ময়মনসিংহে নয়, নেত্রকোনার দুর্গাপুরে। কার্যনির্বাহী সদস্য অ্যাডভোকেট আব্দুল মোতালেব লাল বিপ্লবী ছাত্র মঞ্চের সাবেক সদস্য। তিনি সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) উপজেলা সভাপতি ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক আব্দুর রব জাসদের সাবেক নেতা। তিনি আওয়ামী লীগের প্রাথমিক সদস্যও নন। সহসভাপতি ওবায়দুল্লাহ আনোয়ার বুলবুলের বাবা রাজাকার ছিলেন। তিনি কখনো জেলা আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না। সাংগঠনিক সম্পাদক জিয়াউল হক সবুজ ত্রিশালের রাজাকার ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আদিল চেয়ারম্যানের জামাতা।
এতে আরও দাবি করা হয়, গফরগাঁওয়ের রাজাকার চান মিয়ার ছেলে অ্যাডভোকেট কায়সার আহমেদকে উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য করা হয়েছে। অথচ কেন্দ্রীয় যুবলীগ তাকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করেছে। ত্রিশাল পৌর নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ায় বহিষ্কৃত এবিএম আনিছুজ্জামানও কার্যনির্বাহী সদস্য হয়েছেন। সাংস্কৃতিক সম্পাদক অধ্যাপক মফিজুন নুর খোকাও দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে নির্বাচন করায় বহিষ্কৃত হন। সহসভাপতি এম এ ওয়াহেদ প্রবাসী। তার বাবা ভালুকা উপজেলার ডাকাতিয়া ইউনিয়ন কৃষক দলের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। কার্যনির্বাহী সদস্য ছাড়া একই ব্যক্তির দলের দুই পদে থাকার নিয়ম না থাকলেও অধ্যাপক দিলরুবা শারমীনকে মহিলা বিষয়ক সম্পাদক করা হয়েছে। তিনি জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি। কার্যনির্বাহী সদস্য নুরজাহান মিতু জেলা মহিলা আওয়ামী লীগে সহসভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। দলে প্রাথমিক সদস্য পদ নেই শিল্প ও বাণিজ্য সম্পাদক আবু সাহাদাত সায়েমের। উপদপ্তর সম্পাদক মোস্তফা মামুনুর রায়হান অসীমেরও দলের প্রাথমিক সদস্যপদ নেই। তিনি মাদক ব্যবসায় জড়িত। পরিবেশ ও বন সম্পাদক ড. সিরাজুল ইসলামও দলীয় রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন না। দলে তার প্রাথমিক সদস্যপদ নেই। সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে নিষ্ক্রিয় অ্যাডভোকেট আব্দুর রাজ্জাককে সহসভাপতি করা হয়েছে। উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ড. আবুল হোসেন দীপুর বাবা রাজাকার। মানববন্ধন থেকে দাবি করা হয়েছে বিতর্কিত এই ব্যক্তিদের কমিটিতে রাখায় ময়মনসিংহে আওয়ামী লীগ ঘরানার রাজনীতিতে ক্ষোভ ও অসন্তোষ তৈরি হয়েছে।
জেলা শ্রমিক লীগের আহ্বায়ক রাকিবুল ইসলাম শাহীন বলেন, জেলা কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের অগোচরে প্রস্তাবিত কমিটির ২৬ জনকে বাদ দিয়ে বিতর্কিত, অনুপ্রবেশকারী এবং প্রাথমিক সদস্যপদ নেই- এমন ব্যক্তিদের কমিটিতে রাখা হয়েছে। যারা দীর্ঘদিন দলীয় রাজনীতির সঙ্গে জড়িত, তাদের কমিটিতে রাখা হয়নি। তিনি এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য দলের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে দাবি জানিয়েছেন।
আ.লীগের সাংগঠনিক টিমকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা
নবগঠিত কমিটিতে টাকার বিনিময়ে বিতর্কিত লোকজনকে ঢুকানোর প্রতিবাদে কেন্দ্রীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত বিভাগীয় সাংগঠনিক টিমকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়েছে। একই সঙ্গে অবিলম্বে বিতর্কিতদের বাদ দেওয়ার দাবি জানিয়ে কমিটি সংশোধন না করা পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়। মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৩টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত ময়মনসিংহ প্রেসক্লাবের সামনে ঘণ্টাব্যাপী অবস্থান কর্মসূচি পালন করে পদবঞ্চিত নেতারা এ ঘোষণা দেন।
অবস্থান কর্মসূচিতে পদবঞ্চিত নেতা, বীর মুক্তিযোদ্ধা ছাড়াও ছাত্রলীগ ও যুবলীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত এমন নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। অবস্থান কর্মসূচিতে নেতারা আবেগঘন বক্তব্য দেন। এতে নিজের বক্তব্যে মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সদস্য ও শহর যুবলীগের সাবেক সভাপতি রফিকুল ইসলাম জাহাঙ্গীর বলেন, জেলা কমিটি থেকে কেন্দ্রীয় কমিটিতে ময়মনসিংহের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের কাছে কমিটি জমা দেওয়ার পর শেখ হাসিনাকে তোয়াক্কা না করে ২৬ জনের নাম কেটে মনমতো লোকজনকে কমিটিতে স্থান করে দিয়েছেন। এসব লোকজন রাজাকারপুত্র, বারবার দল থেকে বহিষ্কৃত। আমরা ময়মনসিংহবাসী এই কমিটি মানি না। আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল, অসীম কুমার উকিলদেরকে আমরা ময়মনসিংহে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করছি।
জেলা যুবলীগের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি প্রদীপ ভৌমিক বলেন, সাংগঠনিক টিমের দায়িত্ব থাকা শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি ও সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল ত্যাগী নেতাকর্মীদের বাদ দিয়ে উনাদের মনমতো, অনেকেই বলে পয়সার বিনিময়ে কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। আমরা নেত্রীর কাছে বলতে চাই অবিলম্বে এই সাংগঠনিক টিমকে ময়মনসিংহ থেকে বিদায় করেন। তা না হলে ময়মনসিংহে আওয়ামী লীগ খণ্ডবিখণ্ড হয়ে যাবে।
জেলা যুবলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আতাউর রহমান টিটুর সঞ্চালনায় এতে আরও বক্তব্য দেন জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সহ-সভাপতি মিনার হোসেন, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সদস্য রাহাত হোসেন টিটো, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মাসুদ আহমেদ রানা, মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক উপ-প্রচার সম্পাদক আরিফুল হক লিটন, জেলা যুবলীগের সাবেক অর্থবিষয়ক সম্পাদক রেজাউল আলম ভুলু, জেলা শ্রমিক লীগের আহ্বায়ক রাকিবুল ইসলাম শাহীন, মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী মঞ্জুর মোর্শেদ প্রমুখ।
এদিকে কমিটিতে বিতর্কিতদের রাখা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এহতেশামূল আলম বলেন, অনুমোদনের জন্য কেন্দ্রে পাঠানো প্রস্তাবিত কমিটি থেকে ত্যাগী নেতাদের কয়েকজনকে বাদ দিয়ে বিতর্কিতদের যুক্ত করা হয়েছে। এ নিয়ে পদবঞ্চিত নেতাদের মধ্যে অসন্তোষ ও ক্ষোভের সৃষ্টি হওয়ায় তারা আন্দোলন করছেন। এই কমিটি গ্রহণ করবেন না বলেও জানিয়েছেন তিনি।
তবে নতুন কমিটি নিয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির বক্তব্যের বিষয়ে একমত নন জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মোয়াজ্জেম হোসেন বাবুল। তিনি বলেন, প্রস্তাবিত তালিকা থেকে দু-একজনের নাম বাদ পড়েছে। তবে কমিটিতে দু-একজন নিষ্ক্রিয় ব্যক্তি থাকলেও বিতর্কিত কেউ নেই।
উল্লেখ্য, ২০২২ সালের ৩ ডিসেম্বর ময়মনসিংহ সার্কিট হাউস মাঠে জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলন হয়। গত ২৫ সেপ্টেম্বর কেন্দ্র থেকে পূর্ণাঙ্গ কমিটির অনুমোদন দেওয়া হয়।