You must need to login..!
Description
উবায়দুল হক, রিপোর্টার, বিএমটিভি নিউজঃ
ময়মনসিংহে এক দিনের বৃষ্টিতে অন্তত সাড়ে ৭০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার (৫ অক্টোবর) দিন ও রাতভর রেকর্ড বৃষ্টিতে পুরো জেলাজুড়ে এই ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ২৪ ঘণ্টায় ৩৭৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয় এ জেলায়। এর আগে ১৯৭১ সালে ৩৮১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছিল।
ইতিহাসের দ্বিতীয়তম রেকর্ড বৃষ্টিপাতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে মৎস্য খাতে। এই খাতে প্রায় সাড়ে ৬০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা মৎস্য কর্মকর্তা দীলিপ কুমার সাহা। এছাড়া আমন ধান, সবজি, রাস্তা, কালভার্ট, ময়মনসিংহ শহর রক্ষা বাঁধ ভেঙে আরও ১০০ কোটি টাকার বেশি ক্ষতি হয়েছে।
ময়মনসিংহ জেলায় বড় আকারের বাণিজ্যিক খামার রয়েছে অন্তত ৭৪ হাজার। অবাণিজ্যিক ও ছোট আকারের পুকুর আছে এক লাখ ৬৩ হাজার। মাছচাষি আছে প্রায় এক লাখ ১২ হাজার। চলতি বছর চার লাখ মেট্রিক টন মাছ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল মৎস্য বিভাগের। যার বাজার মূল্য অন্তত ১০ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু এক দিনের বৃষ্টিতে ৪১ হাজার পুকুর তলিয়ে ২৪ হাজার মেট্রিক টন মাছ ভেসে গেছে। এতে ৪৯০ কোটি টাকার মাছ ও অবকাঠামো ক্ষতি হয়েছে ১৫৫ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে এ খাতে ৬৪৫ কোটির ক্ষতি হয়েছে।জেলার ফুলবাড়িয়া উপজেলার আছিম ইউনিয়নের লাঙল শিমুল গ্রাম আব্দুল হক ৫০০ শতক পুকুরে বিভিন্ন প্রজাতির মাছে ৩৫ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছিলেন। কিন্তু একরাতে পানিতে তার অন্তত ১০ লাখ টাকার মাছ চলে গেছে। ফলে ক্ষতির পাল্লা এবার ভারি হয়েছে তার। একই এলাকার আব্দুল আউয়াল তিন হাজার শতাংশ জমিতে ১০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছিলেন। কিন্তু তার পুকুরের অনেক মাছই চলে গেছে।
শুধু এই চাষিরা নয় ঋণের টাকা কিংবা ফিড কোম্পানি থেকে বাকিতে খাদ্য নিয়ে মাছে বিনিয়োগ করে হাজারো মাছচাষি পথে বসেছেন। মৎস্য খামারগুলো থেকে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ বেরিয়ে পড়ায় জেলাজুড়ে মাছ ধরার হিড়িক পড়েছে। চারদিকে পানি থৈ থৈ করায় সাধারণ মানুষ জাল পেতে মাছ ধরছেন।জেলা মৎস্য কর্মকর্তা দীলিপ কুমার সাহা ঢাকা পোস্টকে বলেন, এ বৃষ্টিতে ২২ হাজার চাষি ক্ষতির মুখে পড়েছেন। এই অর্থবছরে মৎস্য উৎপাদনের ক্ষেত্রে এটি বেশ প্রভাব ফেলবে। আমরা ইতোমধ্যে আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে হিসাব দিয়েছি।
এদিকে চলতি আমন মৌসুমে ময়মনসিংহ জেলায় ২ লাখ ৬৮ হাজার ৪৯৫ হেক্টর জমিতে আমন ধান এবং প্রায় ১১ হাজার হেক্টর জমিতে সবজির আবাদ হয়েছে। বৃষ্টির পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে ১১ হাজার ৪২০ হেক্টর জমির আমন ধানের চারা ও ৬৯০ হেক্টর জমির সবজি। পানিতে আর কয়েক দিন ফসল নিমজ্জিত থাকলে চাষিদের ক্ষতির মাত্রা বাড়বে কয়েকগুণ।
ময়মনসিংহ কৃষি অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মতিউজ্জামান বলেন, আমন ধানের মাঠ ও সবজিখেত পানিতে নিমজ্জিত আছে। ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা নির্ণয় করতে কাজ চলমান রয়েছে। বৃষ্টিতে ময়মনসিংহ শহর রক্ষা বাঁধের ৯ কিলোমিটারে অন্তত ১৫টি স্থান ধসে গেছে। এতে বিভিন্ন পয়েন্টে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে এলাকাগুলো।নগরীর জয়নুল আবেদিন সংগ্রহশালা সংলগ্ন এলাকায় একটি বড় রেইন্ট্রি গাছের গোড়ার দিক থেকে বিশালাকৃতির ভাঙন তৈরি হয়েছে। বৃষ্টি বাড়লে ভাঙন বড় আকার ধারণ করবে। ধসেপড়া অংশগুলো মেরামতে অন্তত দেড় কোটি টাকা লাগতে পারে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। ময়মনসিংহ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আখলাক উল জামিল বলেন, বাঁধের ১৫টি অংশ ধসে গিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতির মাত্রা ও মেরামতের জন্য একটি প্রস্তাবনা তৈরি করে অনুমোদনের জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হবে।
অপরদিকে বৃষ্টিতে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ (এলজিইডি) ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের কালভার্ট ও রাস্তার ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। জেলার ঈশ্বরগঞ্জে এলজিইডি ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা দপ্তরের অন্তত তিনটি কালভার্ট ভেঙে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়েছে প্রান্তিক এলাকার।
ঈশ্বরগঞ্জ-তারুন্দিয়া সড়কে একটি ও উচালিখার মরিচারচর এলাকায় চারটি কালভার্ট ভেঙে গেছে। কালভার্ট ও রাস্তা ভেঙে বিচ্ছিন্ন আছে যোগাযোগ। উপজেলা প্রকৌশলী তৌহিদ আহমেদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, কালভার্ট ও রাস্তা ভেঙে অন্তত দুই কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।
এছাড়া জেলার অন্যান্য উপজেলাগুলোতে রাস্তা ভেঙে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতির মাত্রা দাঁড়াতে পারে অন্তত ২৫ কোটি টাকায়। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোতে ক্ষতির মাত্রা নির্ণয় করে তালিকা প্রণয়ণের কাজ চলমান রয়েছে বলে জানিয়েছেন সিনিয়র সহকারী প্রকৌশলী সৈয়দ আবদুর সবুর।
জেলা ত্রাণ ও পূণর্বাসন কর্মকর্তা ছানোয়ার হোসেন বলেন, বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়ে সব এলাকায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে তার তালিকা তৈরি করতে সংশ্লিষ্ট উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এদিকে ময়মনসিংহ নগরীর বেশির ভাগ এলাকার পানি নেমে গেলেও কয়েকটি এলাকা পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে। পানিবন্দি মানুষ গত তিন দিন ধরে চরম দুর্ভোগে দিন কাটাচ্ছেন মানুষ।
ময়মনসিংহ সিটি মেয়র মো. ইকরামুল হক টিটু জানান, নগরীর সব ড্রেন আধুনিকায়নের কাজ চলমান রয়েছে। ইতোমধ্যে অধিকাংশ ড্রেনের কাজ সম্পন্ন হওয়ায় দ্রুত পানি নেমে গেছে। এছাড়া গত তিন মাস ধরে খালগুলোতে উচ্ছেদ অভিযান চালিয়ে অন্তত ১২ কিলোমিটার খাল পুনরুদ্ধার করা হয়েছে। যার ফলে মানুষকে বেশি সময় পানিবন্দি থাকতে হয়নি। ড্রেনেজ ব্যবস্থার কাজ শেষ হলে আগামী বর্ষায় আর জলাবদ্ধতা সমস্যা থাকবে না।
মাছ ধরতে গিয়ে প্রাণ গেছে তিনজনের
ময়মনসিংহে বৃষ্টিতে বহু মৎস্য খামারের মাছ বেরিয়ে গেছে। মাছচাষিদের কোটি কোটি টাকার মাছ ঘুরে বেড়াচ্ছে উন্মুক্ত পানিতে। এসব মাছ ধরতে গিয়ে পানিতে ডুবে জেলার ত্রিশালে দুইজন ও ঈশ্বরগঞ্জে একজনের মৃত্যু হয়েছে। নিহতরা হলেন- ত্রিশাল উপজেলার কানিহারি উপজেলার তালতলা গ্রামের আবদুল কদ্দুস (৩৮), বালিপাড়া ইউনিয়নের আমিয়ান ডাঙ্গুরি গ্রামের গোলাম মোস্তফা মণ্ডলের ছেলে রিমন হোসেন মনা (৩৫) ও রাজিবপুর ইউনিয়নের ভাটিচর নওপাড়া গ্রামের বাচ্চু মিয়া (২৪)।