ময়মনসিংহ বিভাগীয় কর্মশালায় মতামত স্মার্ট বাংলাদেশের জন্য স্মার্ট পরিসংখ্যান জরুরি

image

You must need to login..!

Description

বিএমটিভি নিউজ ডেস্কঃ

স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে যেমনটা স্মার্ট সিটিজেন, স্মার্ট সোসাইটি, স্মার্ট ইকোনমি, স্মার্ট গভর্নমেন্ট দরকার তেমনি স্মার্ট পরিসংখ্যানও আমাদের প্রয়োজন বলে মতামত ব্যক্ত করা হয় জাতীয় পরিসংখ্যান উন্নয়ন কৌশলপত্র সংশোধন ও হালনাগাদকরণ সংক্রান্ত ময়মনসিংহ বিভাগীয় স্টেকহোল্ডার কনসালটেশন কর্মশালায়।

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের অধীন বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো’র এনএসডিএস ইমপ্লিমেন্টেশন সাপোর্ট প্রজেক্ট এর আওতায় এবং সার্বিক ব্যবস্থাপনায় মঙ্গলবার (১০ অক্টোবর) ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সম্মেলনকক্ষে এ কর্মশালার আয়োজন করা হয়।

কৌশলপত্রে এনএসডিএস এ চলমান ডাটা গ্যাপ এবং ভবিষ্যৎ ডাটার প্রয়োজনীয়তা বিবেচনায় এনে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম বা কম্পোনেন্ট অন্তর্ভুক্ত করতে এ কর্মশালার আয়োজন। গত ১০ বছরে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আর্থসামাজিক ও জনমিতিক ক্ষেত্রে বহু পরিবর্তন বা রূপান্তর ঘটেছে- যেমনটা এমডিজি শেষে এসডিজি গৃহীত হয়েছে, বাংলাদেশে ৮ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা, ব-দ্বীপ পরিকল্পনা ও প্রেক্ষিত পরিকল্পনা (২০২১-৪১) গৃহীত হয়েছে। এসবের প্রেক্ষাপটেও বিভাগীয় পর্যায়ে এ ধরনের কর্মশালার আয়োজন করা হয়।

কর্মশালায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব ড. শাহনাজ আরেফিন। বিশেষ অতিথি হিসেবে ময়মনসিংহ বিভাগীয় কমিশনার উম্মে সালমা তানজিয়া, ময়মনসিংহ রেঞ্জ ডিআইজি দেবদাস ভট্টাচার্য্য উপস্থিত ছিলেন। কর্মশালায় ময়মনসিংহের সরকারি দপ্তরের বিভাগীয় ও জেলা পর্যায়ের কর্মকর্তাগণ, বেসরকারি সংস্থার প্রতিনিধি, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক, গবেষক, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, মুক্তিযোদ্ধাগণ অংশগ্রহণ করেন।

স্বাগত বক্তব্যে ময়মনসিংহ বিভাগীয় পরিসংখ্যান কার্যালয়ের যুগ্মপরিচালক মোঃ মাহ্‌মুদুজ্জামান বলেন, ইতঃপূর্বে প্রণীত এনএসডিএস এর মেয়াদ শেষ হওয়ায় ও উন্নয়ন পরিকল্পনায় বর্তমান প্রেক্ষাপট বিবেচনায় নতুন বিষয় অন্তর্ভুক্তি এবং ভবিষ্যতের সম্ভাব্য প্রয়োজনীয়তাসমূহ বিবেচনায় এনে এনএসডিএস পূনর্বিন্যাস বা হালনাগাদ আবশ্যক হয়েছে। পরিসংখ্যানের চলমান ধারা বজায় রাখতে এ কর্মশালা।

তিনি আরো বলেন, সময়োচিত, নির্ভুল ও নির্ভরযোগ্য পরিসংখ্যান প্রণয়নের লক্ষ্যে এনএসডিএস প্রণয়ন প্রক্রিয়া অন্তর্ভুক্তিমূলক হওয়া প্রয়োজন। সে কারণে সকল অংশীজনের মতামত আবশ্যক। অগ্রাধিকার গুলো চিহ্নিত করে কৌশলগত লক্ষ নির্ধারণ করত: প্রয়োজনীয় কার্যক্রম অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। পাশাপাশি স্থানীয় পর্যায়ে পরিসংখ্যান প্রণয়ন ও এর ব্যবহার বৃদ্ধির বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে।

কর্মশালায় এনএসডিএস সংশোধন ও হালনাগাদকরণ সংক্রান্ত উপস্থাপনা উপস্থাপন করেন বিবিএস’র এনএসডিএস ইমপ্লিমেন্টেশন সাপোর্ট প্রজেক্ট এর প্রকল্প পরিচালক মোঃ দিলদার হোসেন। উপস্থাপনায় জাতীয় পরিসংখ্যান উন্নয়ন কৌশলপত্র সংশোধন ও হালনাগাদকরণ সংক্রান্ত প্রয়োজনীয়তার রুপরেখা বা চিত্র বর্ণনা করে এ আয়োজনের প্রেক্ষাপট তুলে ধরেন। দেশের সার্বিক উন্নয়ন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রমাণক নির্ভর পরিকল্পনা গ্রহণের ক্ষেত্রে গুণগত উপাত্ত ব্যবস্থাপনা এবং টেকসই পরিসংখ্যান প্রণয়নের প্রতি গুরুত্বারোপ করেন। কৌশলপত্র প্রণয়নের পরিকল্পনা, বর্তমান পরিস্থিতি ও বাস্তবায়নের চ্যালেঞ্জ উল্লেখ করেন তার উপস্থাপনায়।

মুক্ত আলোচনা ও মতামত গ্রহণ পর্বে আলোচক হিসেবে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি ও ফলিত পরিসংখ্যান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো: ফোয়াদ হোসেন বলেন, গত ১০ বছরে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো অনেক এগিয়েছে। বিবিএস ওয়েবসাইটের ডাটা অনেকই গবেষণায় কাজে লাগায়। বিবিএস এর ডাটা বিশ্বে গ্রহণযোগ্য। তারপরও কিছু কিছু জায়গায় সংযোজন ও পরিবর্তন আনা প্রয়োজন। সরকার বেসরকারি প্যানেল ডাটাসার্ভেগুলোকে বিবিএস এর আওতায় নিতে পারে বলে মতামত ব্যক্ত করেন। আরো বিশুদ্ধ তথ্য পেতে জাতীয় পর্যায়ে সমন্বয় দরকার বলে তিনি উল্লেখ করেন।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের বিভাগীয় কার্যালয়ের পরিচালক সালমা আক্তার বলেন, অনেক সময় কৃষি দপ্তরের সাথে পরিসংখ্যান দপ্তরের তথ্যগত কিছুটা পার্থক্য হয়ে যায়। এ ধরনের পার্থক্য যেন সৃষ্টি না হয় সে কারণে জরিপ কার্যক্রমে সকলকেই সতর্ক থাকা জরুরি। সেই সাথে জরিপ কার্যক্রমে দক্ষ জনবল রাখাও প্রয়োজন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, কৃষি বিপণন অধিদপ্তর, নির্বাচন কার্যালয়, জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার প্রতিনিধিসহ আরো অনেকেই কৌশলপত্র সংশোধন ও হালনাগাদকরণের গুরুত্বপূর্ণ মতামত ব্যক্ত করেন।

ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো: ইউসুফ আলী বলেন, ডাটা পরিসংখ্যান খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ডাটার সঠিক প্রয়োগ হলে এর গুরুত্ব বাড়বে। সময়মত ডাটা সরবরাহ করতে পারলে এর প্রায়োগিক ব্যবহার বৃদ্ধি পাবে।

স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে যেমনটা স্মার্ট সিটিজেন, স্মার্ট সোসাইটি, স্মার্ট ইকোনমি, স্মার্ট গভর্নমেন্ট দরকার তেমনি স্মার্ট পরিসংখ্যানও আমাদের প্রয়োজন। প্রতিটি কাজের জন্য আমাদের ডাটা ব্যাংক থাকা আবশ্যক। ব্যক্তি, পারিবারিক, সামাজিক বা রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে তথ্যের কোনো বিকল্প নেই। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত পরিসংখ্যান দরকার। যেকোনো পরিকল্পনার পূর্বশর্ত বস্তুনিষ্ঠ সঠিক পরিসংখ্যান। ময়মনসিংহ বিভাগীয় কমিশনার বিশেষ অতিথির বক্ত্যবে এসব মতামত ব্যক্ত করেন।

প্রধান অতিথি তার বক্তব্যে বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু বুঝেছিলেন পরিসংখ্যান ছাড়া অনেক কিছুই চলে না। তাই পরিসংখ্যানের মূল বিষয়টি তাঁর হাত দিয়ে তৈরি। আমরা দেশের ভেতরের পরিসংখ্যান পরিচালনার পাশাপাশি বাহিরেরও প্রবেশের চেষ্টা করছি। আমাদের স্বার্থে পরিসংখ্যানকে সম্প্রসারিত করার জন্য আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে কাজ করছি। বর্তমান ডাটাবেজের কৌশলপত্রটি কীভাবে আরো সমৃদ্ধ করা যায় সে ব্যাপারে আপনাদের কাছে মতামত আশা করছি। আপনাদের সহযোগিতা ছাড়া বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো’র পক্ষে একা সব ডাটা সংগ্রহ করা সম্ভবপর হয়ে ওঠে না। পরিসংখ্যানকে সমৃদ্ধ করতে অন্য মন্ত্রণালয়গুলোর সহযোগিতা প্রয়োজন। প্রশাসনিক ডাটাগুলোকে পরিসংখ্যান কাঠামোতে আনতে হয়। অনেকের কাছেই তথ্য আছে কিন্তু সবাই পরিসংখ্যানিক তথ্য তৈরি করে না। সিদ্ধান্ত পর্যায়ে মতামতগুলো আমাদেরকে সহায়তা করবে। ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনে আমরা তথ্য দিয়েছি। স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে স্মার্ট পরিসংখ্যান দিতে চাই। সকলের সমন্বিত প্রচেষ্টায় ২০৪১ সালের স্মার্ট বাংলাদেশ তৈরিতে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।

সভাপতির বক্তব্যে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো’র মহাপরিচালক মোঃ মতিয়ার রহমান বলেন, আমরা অন্য দেশের সাথে তাল মিলিয়ে কাজ করছি পরিসংখ্যান ব্যুরোর উপর পূর্ণ আস্থা রাখা জরুরি। পুরুষ কোন সকলের সমন্বিত কাজ এটা শুধু একার নয়। ডাটা তৈরি করার ক্ষেত্রে আমরা যথাসম্ভব সবাইকে সতর্ক থাকতে বলি এবং সবাইকে যথাসম্ভব রাখার চেষ্টা করি কিছু জায়গায় সমন্বয়ের ঘাটতি রয়েছে সেটা পূরণ করতে আমরা চেষ্টা করছি।

প্রধান সম্পাদকঃ
মতিউল আলম

সম্পাদক ও প্রকাশকঃ
মাকসুদা আক্তার