You must need to login..!
Description
উবায়দুল হক, বিএমটিভি নিউজঃ
ময়মনসিংহ কেন্দ্রীয় কারাগারের ধারণক্ষমতা ৯৯৬ জন হলেও বন্দি রয়েছে প্রায় দেড়গুণ বেশি। চাপ সামলাতে আট বছর আগে শুরু হয়েছিল ‘কারাগার সম্প্রসারণ ও আধুনিকীরণ প্রকল্পের’ কাজ। তবে নির্ধারিত সময় পেরিয়ে গেলেও কয়েক দফা সময় বাড়িয়েও শেষ হয়নি কাজ।পরবর্তীতে প্রকল্পে সংশোধনী এনে চলতি বছর দ্বিগুণ ব্যয় বাড়িয়ে নতুন করে কাজ শুরুর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে টেন্ডার প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে বলে জানিয়েছে প্রকল্পটির বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান গণপূর্ত অধিদপ্তর। আর যথাসময়ে কারাগারের কাজ শেষ না হওয়ায় বন্দিদের রাখতে হিমশিম অবস্থায় পড়তে হচ্ছে কারা কর্তৃপক্ষকে।
১৭৯২ সালে অবিভক্ত বাংলায় ময়মনসিংহ কারাগারের যাত্রা শুরু হয়। ১৯৯৭ সালে এটি কেন্দ্রীয় কারাগারে উন্নীত হয়। ২০১৫ সালে ‘ময়মনসিংহ কারাগার সম্প্রসারণ ও আধুনিকীকরণ’ শীর্ষক প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়। দুই হাজার বন্দি ও আনুষঙ্গিক অবকাঠামো নির্মাণের জন্য প্রায় ১২৭ কোটি ২৭ লাখ টাকা ব্যয়ে প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০১৮ সালের জুন মাসে। কিন্তু পরে সময় বাড়িয়েও তা শেষ করা যায়নি। প্রকল্পের কাজ শুরু হতেই লেগে যায় দুই বছর। ২০১৭ সালের দিকে কাজ শুরু হলেও কাজ করতে গিয়ে ধরা পড়ে প্রকল্পের পরিকল্পনা ত্রুটিও। যথাসময়ে কাজ শেষ না হওয়ায় পরবর্তীতে করোনাকালীন সময়ে বন্ধ হয়ে যায় পুরো কাজ। এরপর আর হয়নি থেমে থাকা কাজ।
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে প্রকল্পে বেশ কিছু সংশোধনী এনে নতুন একটি প্রকল্প অনুমোদন করা হয়। এতে ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ২৪০ কোটি ১৫ লাখ টাকা। প্রথমে ১৩টি প্যাকেজে কাজ হলেও তা বৃদ্ধি হয়ে এখন ৩০টি প্যাকেজে কাজ হবে। পৃথক ঠিকাদার এসব কাজ করবেন। ২০২৫ সালের জুনের মধ্যে কাজ শেষ করার সময় নির্ধারণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে টেন্ডার প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে বলে জানিয়েছে প্রকল্পটির বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান গণপূর্ত অধিদপ্তর।গণপূর্ত অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানায়, শুরুতে প্রকল্পটিতে নানা ত্রুটি ছিল। কোনো মাস্টার প্ল্যান ছিল না। দুই হাজার বন্দির জন্য অবকাঠামো, কর্মকর্তা-কর্মচারিদের আবাসন, গোডাউন, ওয়াচ টাওয়ারসহ বেশ কিছু কাজ রয়েছে প্রকল্পে। ভবনগুলোর আয়তন বৃদ্ধি ও নকশার অনেক পরিবর্তন করে মাস্টার প্ল্যানের কাজ শুরু হয় ২০১৮ সালে। সেটি নানা ধাপ পেরিয়ে প্রকল্প ব্যয়ে কাটছাঁট করে চলতি বছর অনুমোদন হয়। প্রকল্প শুরুর আট বছর পেরিয়ে গেলেও এখন পুরো কাজটি শেষ না হওয়ায় কর্তৃপক্ষের উদাসীনতাকে দায়ী করছেন স্থানীয়রা।
সম্প্রতি কারাগার ঘুরে জানা গেছে, কারাগারে ৭০ থেকে ৮০ জনের একটি কক্ষে মাত্র দুটি টয়লেট। আবাসনের অপর্যাপ্ততায় একসঙ্গে বেশি পরিমাণ বন্দি থাকছেন। কারাগারে বন্দিদের মধ্যে অধিকাংশ মাদক মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আছেন। পাশাপাশি রাজনৈতিক মামলাতেও প্রতিদিন গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে যাচ্ছেন নেতাকর্মীরা। কারাগারের মূল অংশের সামনে কিশোর ব্যারাক, পুরুষ বন্দি ব্যারাক এবং কনডেম সেল, নিরাপত্তা অন্যান্য সেল নির্মাণে কাজের তথ্য সম্বলিত একটি বোর্ড রয়েছে। তাতে দেখা যায় ২০১৯ সালের ১৭ জানুয়ারি কাজটির কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছিল।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স নূরানী কনস্ট্রাকশন। ১১ কোটি ১৪ লাখ টাকায় কাজটি পরবর্তী ছয় মাসের মধ্যে শেষ করার কথা ছিল। কিন্তু এখনও ঝুলে আছে কাজ। এমন অবস্থা পুরো প্রকল্পেরই।
গণপূর্ত অধিদপ্তরের ময়মনসিংহের নির্বাহী প্রকৌশলী জিল্লুর রহমান সিদ্দিকী বলেন, ইতোমধ্যে ৪০ শতাংশের মতো কাজ হয়েছে।শুরুতে টেন্ডার প্রক্রিয়া শেষ করে কাজ শুরু করতে কিছুটা সময় চলে যায়। পরবর্তীতে প্রকল্পের নানা সংশোধনের প্রয়োজন হওয়ায় কাজ আটকে থাকে। এরপর করোনা পরিস্থিতিও সামনে আসে। প্রকল্পটির নানা পরিবর্তন এনে একটি মাস্টার প্ল্যান তৈরি করে প্রকল্প সংশোধন হয়ে অনুমোদন হয় চলতি বছর। এখন টেন্ডার প্রক্রিয়া শেষ করে কাজ শুরুর প্রক্রিয়া চলছে। আগে প্রকল্পে ১৩ টি প্যাকেজ থাকলেও এখন ৩০টি প্যাকেজ রয়েছে। আশা করছি যথা সময়ের মধ্যে কাজটি শেষ করা যাবে।
ময়মনসিংহ কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার শাহ রফিকুল ইসলাম বলেন, বন্দিদের যাতে কষ্ট না হয় সে জন্য সকল ব্যবস্থা করা হয়েছে। তাদের যেন কোনো কষ্ট না হয় সে দিকে সার্বক্ষণিক নজর রাখা হচ্ছে। যথা সময়ে কারাগার সম্প্রসারণের শেষ হলে এমন পরিস্থিতিতে পড়তে হতো না।