You must need to login..!
Description
জামালপুর সংবাদদাতা
অনুমোদন ছাড়াই জামালপুরে একের পর এক গড়ে উঠছে বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার। এগুলোর বেশিরভাগেরই নেই অনুমোদন। জেলার সাতটি উপজেলার চিত্র কমবেশি একই।
বাহারি নাম ও পরিপাটি সাজসজ্জার কারণে এসব সেবাকেন্দ্রে চিকিৎসা নিতে গিয়ে হয়রানির শিকার হচ্ছেন রোগীরা। গলাকাটা চিকিৎসা ব্যয় ও কাঙ্ক্ষিত সেবা না পেলেও স্বাস্থ্য বিভাগের নেই কোনো পদক্ষেপ।খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জামালপুর শহর ছাড়াও জেলার সবকটি উপজেলায়ই ব্যাঙের ছাতার মতো যত্রতত্র গড়ে উঠছে বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র বা হাসপাতাল। বিভিন্ন রাস্তার মোড়ে ও অলিগলিতে গজিয়ে উঠেছে ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও প্যাথলজি পরীক্ষাগার। হাতেগোনা কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের অনুমোদন থাকলেও বেশিরভাগেরই নেই।
অনেকে অনুমোদন নিয়ে কার্যক্রম চালু করলেও পরে আর নবায়ন করেননি।জেলার স্বাস্থ্য বিভাগের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, জেলায় অনুমোদনপ্রাপ্ত হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সংখ্যা ১২৭টি হলেও বাস্তবে এর সংখ্যা আরও বেশি। জামালপুর শহরেই যেখানে সেখানে অর্ধশতাধিক বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার গড়ে উঠেছে। এসব স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে খোঁজ নিয়ে অনুমোদন না থাকার সত্যতা মিলেছে। পাশাপাশি রয়েছে সেবা নিয়ে নানাবিধ অভিযোগ।
আকর্ষণীয় নাম, অত্যাধুনিক সাইনবোর্ড ও সাজসজ্জা দেখে বোঝার উপায় নেই এসব প্রতিষ্ঠানে সেবার নামে চলে রমরমা ব্যবসা। রোগীদের চিকিৎসার জন্য চিকিৎসকের সঙ্গে সাক্ষাৎ, বিভিন্ন প্যাথলজি পরীক্ষা ও অপারেশনের জন্য সাধারণ মানুষকে গুনতে হয় হাজার হাজার টাকা। ঢাকা-ময়মনসিংহ থেকে বড় বড় ডিগ্রিধারী চিকিৎসকদের চিকিৎসা দেওয়ার কথা প্রচার করা হলেও সেবা দেন অন্য কেউ।এসব নামিদামি চিকিৎসকদের নাম ভাঙিয়ে ও প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে হাজার হাজার টাকার পরীক্ষা-নিরীক্ষা দিয়ে রোগীদের কাছ থেকে হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে মোটা অঙ্কের ফি। এসব হাসপাতাল বা ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ স্বাস্থ্য বিভাগের কোনো নিয়মনীতির তোয়াক্কা করছে না। এদের নেই জরুরি বিভাগ, রোগ নির্ণয়ের মানসম্মত কোনো যন্ত্রপাতি বা ল্যাব টেকনোলোজিস্ট।
রোগীদের অভিযোগ, খণ্ডকালীন কিছু চিকিৎসক দিয়ে চলছে জটিল অপারেশনসহ নানা চিকিৎসা। একই চিকিৎসক ঘুুরে ফিরে বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে সেবা দিয়ে থাকেন। এসব না বুঝেই গ্রামের সহজ-সরল অসহায় মানুষগুলো তাদের পাতা ফাঁদে আটকে যাচ্ছেন। জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে কোনো ধরনের মনিটরিং বা জবাবদিহিতা না থাকায় অবৈধ হাসপাতাল ও ক্লিনিকের দৌরাত্ম দিন দিন বেড়েই চলছে।
সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, অনুমোদিত ১২৭টি হাসপাতাল ও ক্লিনিকের মধ্যে ২০২৩-২৪ পর্যন্ত লাইসেন্স নবায়ন আছে ৩০টির। বাকিগুলো অনুমোদন ছাড়াই চলছে।সোহেল নামের একজন ভুক্তভোগী জাগো নিউজকে বলেন, ‘বেশিরভাগ হাসপাতালেই চিকিৎসার নামে চলছে গলাকাটা ব্যবসা। এসব দেখার যেন কেউ নেই।’মেলান্দহে ১০ শয্যার আলহাজ এম এ রশিদ জেনারেল হসপিটালটি প্রায় চার বছর ধরে চলছে অবৈধভাবে। হাসপাতালটির প্রশাসনিক কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন নয়ন জানান, পরিবেশগত ছাড়পত্র না থাকায় আবেদন করে দীর্ঘদিনেও লাইসেন্স পাচ্ছেন না।জামালপুর কলেজ রোডের আল-মদিনা ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিক ডা. আহম্মদ আলী আকন্দ। সেখানে তিনি নিয়মিত যক্ষ্মা রোগীর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ব্যবস্থাপত্র দেন। নিজে একজন চিকিৎসক হয়েও কেন অবৈধভাবে ডায়াগনস্টিক সেন্টার চালাচ্ছেন তার কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।
নাগরিক অধিকার কর্মী অ্যাডভোকেট ইউসুফ আলী বলেন, জামালপুরের যত্রযত্র গড়ে ওঠা অনুমোদনহীন হাসপাতালে ভুল চিকিৎসায় রোগীর মৃত্যুসহ প্রায়ই হয়রানির ঘটনা ঘটছে। নামমাত্র দু-একটি অভিযান করা হলেও প্রশাসনকে ম্যানেজ করে কয়েকদিন পর থেকে আবারও আগের মতো ব্যবসা শুরু করে অবৈধ হাসপাতালগুলো।সিভিল সার্জন ডা. ফজলুল হক জাগো নিউজকে বলেন, নবায়নের জন্য হাসপাতালগুলোকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। নবায়ন না করলে পরবর্তী সময়ে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পাশাপাশি জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের নিয়মিত পরিদর্শন অব্যাহত আছে।