You must need to login..!
Description
স্টাফ রিপোর্টার, ময়মনসিংহ
ময়মনসিংহে এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফল প্রত্যাখ্যান করে শিক্ষাবোর্ড ঘেরাও, বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধ করে আন্দোলন করছেন অকৃতকার্য শিক্ষার্থীরা। এসময় সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে ও বসে অবরোধ করে। এ সময় বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীরা ২০২৪ সালের এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফল পুনর্বিবেচনা করে অকৃতকার্যদের অটো পাসসহ ৪ দফা দাবি জানান। ঘেরাও কর্মসূচি চলাকালীন শিক্ষার্থীরা বলেন, আমাদের সঙ্গে ময়মনসিংহ শিক্ষা বোর্ড বৈষম্যমূলক আচরণ করেছে। এই অবস্থায় আমরা চার দফা জানিয়েছি।দাবি মেনে না নেওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলমান থাকবে বলে হুঁশিয়ারি দেন শিক্ষার্থীরা। বিষয়ে জানতে চাইলে ময়মনসিংহ শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবু তাহের বলেন, শিক্ষার্থীদের দাবি শিক্ষাবোর্ডের আন্তঃমন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। শিক্ষার্থীদের দাবির বিষয়ে তারা সিদ্ধান্ত নেবেন। এতে আমাদের কিছু করার নেই।
রবিবার (২০ অক্টোবর) দুপুরে ময়মনসিংহ মুক্তাগাছা সড়কের কাঠগোলা এলাকায় শিক্ষা বোর্ডের সামনে সড়ক অবরোধ করে। পরে রাত পৌনে ৮ টা পর্যন্ত চলে অবরোধ কর্মসুচি চলছে বলে জানিয়েছেন কোতোয়ালি মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. সাইফুল ইসলাম।
এর আগে বেলা ১১টায় নগরের টাউন হল মোড়ে বিভিন্ন এলাকা থেকে এইচএসসিতে অকৃতকার্য শতাধিক শিক্ষার্থী এসে জড়ো হন। পরে তারা কিছুক্ষণ অবস্থান শেষে শিক্ষা বোর্ডের উদ্দেশ্যে রওনা করেন।
শিক্ষার্থীদের দাবি, সাবজেক্ট ম্যাপিং গড়মিল করে ফলাফল তৈরি করা হয়েছে। এসএসসির ফলাফল অনুযায়ী সকল বিষয়ের ম্যাপিং করে বৈষম্যহীন ফলাফল প্রকাশের দাবি জানানো হয়।
বৈষম্যহীন রেজাল্ট চাই-এই দাবিতে শিক্ষার্থীরা তাদের কর্মসূচির ব্যানারে উল্লেখ করে, আমরা রেজাল্টে কোন রকম বৈষম্য চাই না। যাদেরকে বৈষম্য রেজাল্ট দেওয়া হয়েছে তাদের মৃত্যুর বিনিময়ে আমরা এমন বৈষম্য রেজাল্ট মানবো না। শিক্ষা বোর্ডের বৈষম্যমূলক সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে গণমিছিল করে।
পরে শিক্ষা বোর্ড ভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় শিক্ষা বোর্ডের প্রধান ফটকে পুলিশ অবস্থান নেয়। শিক্ষার্থীরা ফলাফল বাতিল চেয়ে শ্লোগান দিতে থাকেন। বেলা সাড়ে ১২ টার দিকে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা শিক্ষা বোর্ডের সামনের সড়কে ইট ফেলে ও রাস্তায় বসে অবরোধ করে। এতে ময়মনসিংহ-টাঙ্গাইল সড়কে যানচলাচল বন্ধ হয়ে পড়ে।
বেলা ১২ টা ৪০ মিনিটের দিকে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের বুঝাতে আসেন শিক্ষা বোর্ডের সচিব মো. সফিউদ্দিন সেখ। কিন্তু শিক্ষার্থীরা তাদের দাবির পক্ষে অনড় থেকে জোরপূর্বক শিক্ষা বোর্ড ভবনের প্রধান ফটকের বাধা উপেক্ষা করে ভেতরে প্রবেশ করে। পরে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বোর্ড চেয়ারম্যান মো. আবু তাহের আলোচনা করেন।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার শিক্ষার্থীরা বোর্ড চেয়ারম্যানের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছিল। বোর্ড চেয়ারম্যানের সঙ্গে আলোচনা চলার সময় যাত্রীদের বিষয় বিবেচনা করে পৌনে একঘণ্টা পর বেলা সোয়া ১ টার দিকে ব্যারিকেট তুলে নিলেও পুনরায় বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে রাস্তা ব্যারিকেট দিয়ে আন্দোলন শুরু করেন। টায়ারে আগুন ধরিয়ে আন্দোলন করায় রাস্তার দুপাশে তীব্র যানজটে মানুষের ভোগান্তি বেড়েছে।
আন্দোলনে অংশ নেওয়া নাসিরাবাদ কলেজের শিক্ষার্থী মো. রাফিউল করিম বলেন, এবারের ফলাফলে সাবজেক্ট ম্যাপিংএ গরমিল করেছে। কোন বিষয়ের প্রেক্ষিতে কোন বিষয় ম্যাপিং করেছে তা বলতে পারেনি। পরীক্ষায় এটেন্ড না করেই অনেকে পাস করেছেন।
জামালপুরের আশেক মাহমুদ কলেজের বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থি মনিষা আক্তার বলেন, আমি সব পরীক্ষায় অংশ নিলেও আমার ফলাফল আসেনি।
ময়মনসিংহ গর্ভমেন্ট কলেজের মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থী সাবিকুন নাহার, আনন্দ মোহন কলেজের কামরুন নাহার ইংরেজিতে ফেল করেছেন। তাদের দাবি, এ প্লাসের বদলে ফেল এসেছে আমাদের। এটি কোনো ভাবেই হতে পারে না। বোর্ডের ভুলে আমাদের শিক্ষা জীবন নষ্ট হতে পারে না।
ফুলপুর উপজেলার বওলা ডিগ্রি কলেজের মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থী রফিকুল ইসলাম আইসিটিতে ও মোমেনশাহী ইসলামিয়া একাডেমি এন্ড কলেজের সাজ্জাদ হোসেন ইংরেজিতে ফেল করেছে। তারা দুজন বলেন, এবার মূল্যায়ণ সঠিক ভাবে হয় নি। যার কারণে এ বিপর্যয়।
নগরের মুসলিম গার্লস কলেজের মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থী হাসিবা আক্তার আইসিটিতে অকৃতকার্য হয়েছে। তিনি বলেন, আমি ফেল করার মতো পরীক্ষা দেইনি। কিন্তু ফেল দেখানো হয়েছেন। এ ফলাফল আমরা মানিনা। আজকের মধ্যে সমাধান না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে।
আন্দোরনকারীরা বোর্ড চেয়ারম্যানের সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনা শেষে শিক্ষার্থীরা পুনরায় এইচএসসির ফলাফল প্রকাশের জন্য বেলা তিনটার দিকে আবেদন করে বোর্ডে।
এতে বলা হয়, ১৫ যে ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে তা ত্রুটিপূর্ণ এবং বৈষম্যযুক্ত। আবেদনে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা তিনটি দাবি করেন। দাবি গুলো হলো, গত ১৫ অক্টোবর প্রকাশিত ত্রুটিপূর্ণ এবং বৈষম্যযুক্ত ফলাফলকে বাতিল ঘোষণা করতে হবে। দেশের সকল বোর্ডের সাথে সমভাবে সাবজেক্ট ম্যাপিং করে পুনরায় বৈষম্যহীনভাবে ফলাফল প্রকাশ করতে হবে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড ময়মনসিংহের সকল বিষয়ে অধিকাংশ শিক্ষার্থী অকৃতকার্য হওয়ায় সবাইকে উত্তীর্ণ হিসেবে বিবেচিত করা হোক। সকল শিক্ষার্থীর এসএসসি পরীক্ষার রেজাল্ট থেকে এইচএসসির সকল সাবজেক্ট ম্যাপিং করা হোক।
গত ১৫ অক্টোবর ঘোষিত ফলাফল শিক্ষা বোর্ড থেকে জানানো হয়, চলতি বছর ময়মনসিংহ বোর্ডে পরীক্ষার্থী ছিলেন ৭৭ হাজার ৬২১ জন। এর মধ্যে ছাত্র ৩৭ হাজার ৪৫৩ ও ছাত্রী ৪০ হাজার ১৬৮ জন। পরীক্ষায় পাস করেছেন ৪৯ হাজার ৬৯ জন; পাসের হার ৬৩ দশমিক ২২। এর মধ্যে ছাত্র পাস করেছেন ২২ হাজার ৯৩৫ জন এবং পাসের হার ৬১ দশমিক ২৪ শতাংশ। আর ছাত্রী পাস করেন ২৬ হাজার ১৩৪ জন এবং তাঁদের পাসের হার ৬৫ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ।
শিক্ষা বোর্ডটিতে জিপিএ–৫ পাওয়া মোট পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ৪ হাজার ৮২৬। তাঁদের মধ্যে ২ হাজার ১০৯ জন ছাত্র ও ২ হাজার ৭১৭ জন ছাত্রী। বোর্ডে বিগত চার বছরের মধ্যে সর্বনিম্ম পাসের হার এবার। এ বছর আইসিটি ও ইংরেজি বিষয়ে বেশি সংখ্যক শিক্ষার্থী অকৃতকার্য হয় জানান বোর্ড চেয়ারম্যান।
ময়মনসিংহ শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. আবু তাহের বলেন, শিক্ষার্থীদের দেওয়া স্মারকলিপি আমরা আন্ত:বোর্ডে পাঠিয়ে দেব। শিক্ষার্থীরা যদি পরীক্ষকদের কারণে কোন ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকে তা আমরা দেখবো। সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে আমরা পুনঃনিরীক্ষণ করব। আমরা সর্বোচ্চ সহমর্মী হয়েই এ ব্যাপারে কাজ শুরু করেছি। কিন্তু অনেক শিক্ষার্থী অটোপাশ দাবি করছে এটি আমাদের হাতে নেই।##
মতিউল আলম