You must need to login..!
Description
আশরাফুল ইসলাম, কিশোরগঞ্জ থেকে:
কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদের দান সিন্দুকে এবার বস্তার হিসেবে রেকর্ড ২৯ বস্তা টাকা দান হিসেবে পাওয়া গেছে। এছাড়া পাওয়া গেছে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা ও স্বর্ণালঙ্কার। শনিবার সকাল ৭টায় মসজিদটির ১০টি দানসিন্দুক এবং একটি ট্রাঙ্ক খোলার মধ্য দিয়ে টাকা গণনার কাজ শুরু করা হয়। এখন গণনা চলছে। পাগলা মসজিদ মাদরাসা ও আল জামিয়াতুল ইমদাদিয়ার মোট ২৮৫ জন ছাত্র এবং রূপালী ব্যাংকের ৭৫ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী মিলিয়ে মোট ৩৬০ জন টাকা গণনার কাজ করছেন। সেনাবাহিনী, র্যাব, পুলিশ ও আনসার সদস্যরা ছাড়াও মসজিদ-মাদরাসার ৪৫ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী তাদের সহায়তা করছেন। এবার তিন মাস ১৩ দিন পর মসজিদের দানসিন্দুক খোলা হয়। এর আগে সর্বশেষ গত ১৭ই আগস্ট এ মসজিদের দানসিন্দুকগুলো খোলা হয়েছিল। তখন ২৮ বস্তা টাকা পাওয়া গিয়েছিল। পরে টাকা গণনা করে ৭ কোটি ২২ লাখ ১৩ হাজার ৪৬ টাকা পাওয়া গিয়েছিল। এছাড়া পাওয়া যায় বৈদেশিক মুদ্রা, সোনা, রূপা ও হীরার গয়না। তবে এ মসজিদের দানসিন্দুক থেকে গত ২০শে এপ্রিল বৈদেশিক মুদ্রা, সোনা, রূপা ও হীরার গয়না ছাড়া এ যাবৎকালের সর্বোচ্চ ৭ কোটি ৭৮ লাখ ৬৭ হাজার ৫৩৭ টাকা পাওয়া গিয়েছিল। এবার টাকার এই অঙ্ক ছাড়িয়ে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কেননা এবার মসজিদের ৯টি দানসিন্দুক অন্তত দুই সপ্তাহ আগেই দানের টাকায় পূর্ণ হয়ে গিয়েছিলো। পরে দান অব্যাহত রাখার সুবিধার্থে আরো একটি দানসিন্দুক এবং একটি ট্রাঙ্ক যুক্ত করা হয়। এছাড়া বস্তার হিসাবেও এবার সর্বোচ্চ ২৯ বস্তা টাকা পাওয়া গেছে।
শনিবার সকাল ৭টায় কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক ফৌজিয়া খান ও মোহাম্মদ হাছান চৌধুরীর নেতৃত্বে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও দানবাক্স খোলা কমিটির আহ্বায়ক মিজাবে রহমত এর উপস্থিতিতে দান সিন্দুক খোলা হয়। এ সময় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) রুবেল মাহমুদ, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মোহাম্মদ নাহিদ হাসান খান, কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. এরশাদ মিয়া, রূপালী ব্যাংকের এজিএম রফিকুল ইসলাম, মসজিদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা শওকত উদ্দিন ভূইয়া এবং দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটগণসহ মসজিদ কমিটির সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
জেলা শহরের নরসুন্দা নদী তীরের ঐতিহাসিক এ মসজিদটিতে নয়টি লোহার দান সিন্দুক আছে। প্রতি তিন থেকে চার মাস পর পর এই সিন্দুক খোলা হয়। এবার সকাল ৭টা থেকে সিন্দুকগুলো খোলার কাজ শুরু হয়। প্রথমে টাকাগুলো লোহার সিন্দুক থেকে বস্তায় ভরা হয়। পরে মসজিদের দোতলায় নিয়ে মেঝেতে ঢালা হয়। এরপর শুরু হয় টাকা গণনার কাজ। সর্বশেষ গত ১৭ই আগস্ট টাকা গণনা করতে ৩২০ জনের প্রায় ১২ ঘন্টা লেগেছিল। এবার টাকা গণনা আরো দ্রুত করতে আরো ৩৫ জন শিক্ষার্থী এবং রূপালী ব্যাংকের ৫ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে গণনার কাজে যুক্ত করা হয়েছে।
জানা যায়, প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ এসে এই মসজিদে দান করছেন। যারা দান করতে আসেন তারা বলে থাকেন, এখানে দান করার পরে নাকি তাদের মনের আশা পূরণ হয়েছে। আর এ কারণেই দিন দিন দানের পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
জেলা প্রশাসক ও মসজিদ কমিটির সভাপতি ফৌজিয়া খান বলেন, গণনা শেষ হলে টাকার পরিমাণ জানা যাবে। দানসিন্দুক থেকে পাওয়া সব টাকা ব্যাংকে জমা রাখা হবে। জেলা প্রশাসক আরো জানান, পাগলা মসজিদ ও ইসলামী কমপ্লেক্সের খরচ চালিয়ে দানের বাকি টাকা ব্যাংকে জমা রাখা হয়। এ থেকে জেলার বিভিন্ন মসজিদ, মাদরাসা ও এতিমখানায় অনুদান দেওয়ার পাশাপাশি অসহায় ও জটিল রোগে আক্রান্তদের সহায়তা করা হয়ে থাকে।
পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাছান চৌধুরী জানান, সকাল থেকে টাকার সিন্দুক খোলা, বস্তায় ভরে এনে গণনা শেষে ব্যাংক পর্যন্ত সমস্ত টাকা নিরাপদে পৌঁছে দেওয়া পর্যন্ত সার্বিক নিরাপত্তার কাজে তিনিসহ তাঁর পুলিশ সদস্যরা যথাযথ দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া গণনার দিন ছাড়াও বাকি দিনগুলোতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লোকজন সিন্দুক নিরাপত্তায় দায়িত্ব পালন করেন।
কিশোরগঞ্জ শহরের ঐতিহাসিক স্থাপনার মধ্যে পাগলা মসজিদ অন্যতম একটি প্রতিষ্ঠান। শহরের পশ্চিমে হারুয়া এলাকায় নরসুন্দা নদীর তীরে মাত্র ১০ শতাংশ ভূমির ওপর এই মসজিদটি গড়ে উঠেছিল। সময়ের বিবর্তনে আজ এ মসজিদের পরিধি যেমন বেড়েছে, তেমনি বেড়েছে এর খ্যাতি ও ঐতিহাসিক মূল্যও। বর্তমানে ৩.৮৮ একর ভূমির উপর সম্প্রসারিত পাগলা মসজিদ এলাকায় মসজিদকে কেন্দ্র করে একটি অত্যাধুনিক ধর্মীয় কমপ্লেক্স প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। স্বভাবতই ঐতিহাসিক এই মসজিদকে নিয়ে জেলার ধর্ম-বর্ণ-সম্প্রদায় নির্বিশেষে সকলেই গর্ববোধ করেন।