You must need to login..!
Description
স্টাফ রিপোর্টার, বিএমটিভি নিউজঃ
বসতি ও শহর এলাকায় সিসা কারখানা করার বিধি-নিষেধ থাকলেও ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের ৩২ নম্বর ওয়ার্ডের চরকালীবাড়ি চায়নামোড় এলাকায় ‘মন্ডল করপোরেশন’ নামে গড়ে উঠেছে সিসা তৈরির করেছে এই কারখানাটি। কারখানা থেকে নির্গত বর্জ্য কৃষিজমিতে পড়ায় কমছে ফসল উৎপাদন। বিষাক্ত সিসা গলানোর সময় এর ধোঁয়া ও দুর্গন্ধ আশপাশের গ্রামগুলোয় ছড়িয়ে পড়ছে। ফলে শ্বাসকষ্টসহ নানা জটিলতায় ভুগছেন স্থানীয় ও আশেপাশের লোকজন। অকালেই ঝরে পড়ছে গাছের পাতাসহ ফলদ বৃক্ষের ডাব, নারকেল ও আম-জামসহ বিভিন্ন ফলের গাছ। কারখানাটি বন্ধ করতে এলাকাবাসী মানববন্ধন করেছেন, কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানিয়েছেন। তবুও বন্ধ হচ্ছে না কারখানাটি। জানাগেছে, গত বছরের জুনে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র পায় কারখানাটি এবং এর আগে কয়েকবছর ছাড়পত্র ছাড়াই কারখানা চালু রাখা হয়। চলতি বছরের জুনে ছাড়পত্র মেয়াদোত্তীর্ণ হলেও বর্তমানে নবায়ন ছাড়াই দেদারসে চলছে ‘মন্ডল করপোরেশন’ নামে গড়ে উঠেছে সিসা তৈরির কারখানা।
সেখানে গিয়ে দেখা যায়, কারখানার সামনের সড়কটি বিভাগীয় শহর ময়মনসিংহে প্রবেশের একমাত্র সড়ক। সড়কটি ব্যবহার করেঅগণিত মানুষ চলাচল করছে। কারখানার ভেতরে প্রবেশ করতেই চোখে পড়ে-শ্রমিকরা পুরোনো ব্যাটারির ওপরের অংশ খুলে প্লেট (ব্যাটারির ভেতরে থাকা পাত) বের করছেন। পরে ব্যাটারি থেকে অ্যাসিড বের করে সংরক্ষণ করছেন।
চুল্লির মধ্যে কাঠ ও কয়লায় অ্যাসিড মিশ্রিত ব্যাটারির বর্জ্য বা প্লেট সাজানো হচ্ছে। এরপর আগুন ধরিয়ে তা গলানোসহ বিভিন্ন
প্রক্রিয়ায় সিসা তৈরি করা হচ্ছে। স্থানীয়রা জানান, প্রতিদিন সন্ধ্যা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চালু থাকে কারখানাটি। মাঝেমধ্যে বিকেল
থেকেই চালু করা হয়। বিষাক্ত সিসা গলানোর সময় এর ধোঁয়া ও দুর্গন্ধ চরকালীবাড়ি, চরঝাউগড়া, দক্ষিণপাড়া, চরগোবদিয়া, চর ঈশ্বরদিয়া, শম্ভুগঞ্জ বাজার ও রঘুরামপুরসহ আশপাশের গ্রামগুলোয় ছড়িয়ে পড়ছে।
তখন দুর্গন্ধে থাকা যায় না। দুর্গন্ধে অনেকের বমি হয়। কারখানার ধোঁয়া ও বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থের প্রভাবে শ্বাসকষ্টসহ নানা রোগে
আক্রান্ত হচ্ছে এলাকার মানুষ। চরকালীবাড়ি এলাকার বাসিন্দা সাইদুল মিয়া বলেন, দুর্গন্ধ ও ধোঁয়ার কারণে বাসার দরজা-জানালা খোলা যায় না। এলাকার অনেকের শ্বাসকষ্ট দেখা দিয়েছে। কয়েক বছর ধরে এলাকার লোকজন এই কারখানা বন্ধের দাবি জানাচ্ছে। কিন্তু আশ্বাস ছাড়া মেলেনি স্থায়ী সমাধান। চরঝাউগড়া এলাকার কৃষক আব্দুল কুদ্দুস বলেন, কারখানার বিষাক্ত ধোয়া পড়ছে কৃষিজমিতে। এতে জমিতে ফসল কম হচ্ছে। জমির ঘাস খেয়ে অনেকের গবাদিপশু অসুস্থ হয়েছে। শম্ভুগঞ্জ ইউ সি উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক ইসমাইল হোসেন বলেন, গত কয়েক বছরৎ ধরে আমাদের এলাকার গাছের নারকেল, আম-জাম, কাঁঠাল ও নানা ফল টিকছে না। গাছের পাতা পর্যন্ত ঝরে পড়ছে। পরিবেশ রক্ষায় এই কারখানা দ্রুত বন্ধ করা প্রয়োজন।
এদিকে মন্ডল করপোরেশনের মালিক মোশাররফ হোসেন বলেন, চাহিদার সব কাগজপত্র জমা দিয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমোদন নিয়েই কারখানা পরিচালনা করছেন। নিয়ম মেনে কারখানা গড়ে তুলেছি।
ময়মনসিংহের সিভিল সার্জন ডা. মো. নজরুল ইসলাম বলেন, সিসা তৈরির কারখানার ধোঁয়ায় হেভি মেটালযুক্ত ও জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর বিষাক্ত উপাদান থাকায় মানুষের শ্বাসকষ্টসহ নানা রোগ দেখা দিতে পারে। কারখানার ধোঁয়া ও বর্জ্য থেকে মানুষের ক্যান্সার হতে পারে।
চিকিৎসকরা বলছেন, চুল্লিতে গলানো সিসা মানবদেহ ও পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। ব্যাটারির বর্জ্য পুড়িয়ে সিসা তৈরি করলে তা আশপাশে থাকা মানুষের শরীরে পয়জনিং (রক্তকণিকা ও মস্তিস্কের কোষ ক্ষতি করা) সৃষ্টি করে। ফলে মানসিক বিকৃতি, রক্তশূন্যতা ও মস্তিস্কের ক্ষতিসাধন হতে পারে।
এ বিষয়ে পরিবেশ অধিদফতর ময়মনসিংহ বিভাগীয় কার্যালয়ের পরিচালক শেখ মো. নাজমুল হুদা সাংবাদিকদের বলেন, এর আগে কারখানার মালিককে জরিমানা করা হয়েছে। এবার স্থায়ীভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে প্রধান কার্যালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। ###