এনায়েতুর রহমান, বিএমটিভি নিউজঃ
শীত থেকে বাঁচার মতো ন্যূনতম গরম কাপরও নেই তার। কখনও বিত্তবানদের কেউ আবার কোন সংঘের উদ্যোগে শীতবস্ত্র বিতরণ করলেও কপালে জুটেনি একটি শীতবস্ত্র।
বাঁশের কয়েকটি খুঁটির উপর দাঁড় করানো ছোট্ট একটি ঝুপরি ঘর। ঘরের চালে কয়েকটি টিন থাকলেও নেই কোন বাধ। একপাশে টিনের বেড়া থাকলেও বাকি অংশ পলিথিনে মোড়ানো। বাতাস ছাড়লেই কনকনে শীতে কাপতে থাকেন ৭৫ বছর বয়সী বৃদ্ধা ছাহেরা খাতুন।
কনকনে শীতে ঝুপরি ঘরে একাই বসবাস করেন ছাহেরা খাতুন। এই কনকনে শীতেও সরকারি কোন কম্বল পায়নি। একে তো কনকনে শীত, আবার রাত হলে ভাঙা বেড়া দিয়ে শিয়াল এসে টেনে নেয়ার ভয়ে রাত পার করছেন ছাহেরা।
বৃদ্ধা ছাহেরা খাতুন ময়মনসিংহ জেলার ফুলবাড়ীয়া পৌরসভার ৪ নং ওয়ার্ডের কুশমাইল সাহেদ্দাপাড়ার কোরবান আলীর মেয়ে। ছাহেরা খাতুন ছেঁড়া কাঁথা মুড়িয়ে ভাঙা ঝুপরি ঘরে মানবেতর জীবনযাপন তার।
বয়সের ভারে ন্যুব্জ এই অসহায় নারী দুই যুগ আগে স্বামীকে সঙ্গে নিয়ে রাজমিস্ত্রী শ্রমিকের কাজ করেছেন। কয়েক বছর আগে স্বামী মারা যাওয়ার পর পিতা-মাতা ও সন্তানহীন এ নারী বিভিন্ন বাসা বাড়ি, ছাত্রাবাসে মাসিক বেতনে কাজ করে তার জীবিকা নির্বাহ করতেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ছাহেরা খাতুনরা তিন বোন। ছাহেরার বাবার কোন জায়গা জমি নেই। আগে তারা অন্যের বাড়িতেই থাকতো। মানুষের বাড়িতে কাজ করে ছাহেরা ও তার দুই বোন আছিয়া (৫৫) এবং জামিলা (৪৫) খাতুন মিলে সাড়ে ৩ শতাংশ জমি কিনে। ছাহেরার স্বামী, সন্তান কিছুই নেই। ওই জমিতেই ছাহেরা, আছিয়া ও জামিলা খাতুনের বসবাস।
বৃদ্ধা ছাহেরা খাতুন আক্ষেপ করে বলেন, শীতের ঠ্যালাই বাইচত্যাছি না, শীতে মইরা যাইতাছি, তাও কেউ একটা কম্বল দেয় না। তুমি আইচ্যাও ফটো তুইলব্যার। ফটো তুইল্যা কি অইবো।
ছাহেরা খাতুনের সাথে কথা হয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে বলেন, আমি প্রায়ই অসুস্থ থাকি কাম কাজ করতে পারি না। মানুষের কাছে পান, পাতা বেচে ও ভিক্ষা করে কোনরকম চলতেছি। এই দুনিয়ায় এই ভাঙা ঘরই আমার একমাত্র সম্বল। ভাঙা ঘরে শীতে কষ্ট করতেছি। বৃষ্টির দিনে ঘরে পানি পড়ে। তাই আপাতত ছোট বোনের কেনা টিন দিয়ে ঝুপড়ি দিয়েছি। রাতের বেলায় শিয়ালে টেনে নেয়ার ভয়ে রাত কাটে। কষ্ট হলেও তো কিছু করার নাই। কেউ যদি একটা ঘরের ব্যবস্থা করে দিতো তাহলে খাই আর না খাই অন্ততপক্ষে শান্তিতে ঘুমাইতে পারতাম৷ সারাদিন পান পাতা বিক্রি করে মানুষের কাছে হাত পেতে এক দেড়শ টাকা রোজগার হয়। তা দিয়ে খাবার যোগাড় করি। শীত পোশাক কেনার মতো টাকা যোগাড় সম্ভব হয় না।
জীবনযুদ্ধে অনেকটা ক্লান্ত ছাহেরা খাতুন ভালো একটি বাসস্থানেই সুখের ছোঁয়া খুঁজে চলেছেন। মানুষ দেখলেই বলেন ঘর নির্মাণের আবদার। সরকারি কর্মকর্তাসহ মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরে ঘর নির্মাণের আশ্বাস পেলেও তা আদৌও বাস্তবায়ন হয়নি বলেও দাবি করেন তিনি।
প্রতিবেশী সুফিয়া খাতুন বলেন, ছাহেরা আগে মানুষের বাসা বাড়িতে কাজ করতো। বয়স বাড়ায় এখন আর কোন কাজ করতে পারে না। বৃষ্টি ঝড় তুফানে মানুষের ঘরে উঠলেও শীতের মধ্যে ভাঙা ঘরে সে খুব কষ্টে মানবেতর জীবন যাপন করছে।
সদ্য সাবেক কাউন্সিলর ছাইফুল ইসলাম বলেন, ছাহেরা খাতুন অনেক কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন। আমি যতটুকু পারি সাহায্য সহযোগিতা করি। তার থাকার ঘর নেই। ঝুপরি ঘরে তার দিন কাটছে। তার কষ্ট দেখে আমি তাকে বয়স্ক ভাতার ব্যবস্থা করে দিয়েছি। সরকারি অথবা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন তার পাশে দাঁড়ালে হয়তো তার কষ্ট কিছুটা লাগব হত।
ফুলবাড়ীয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আরিফুল ইসলাম বলেন, আমি কয়েকদিন হলো যোগদান করেছি, এই মূহুর্তে ঘরের কোন বরাদ্দ নেই। সরকারি ভাবে কোন বরাদ্দ আসলে অবশ্যই তাকে সহায়তা করা হবে। তবে, সাময়িক সময়ের জন্য ওই বৃদ্ধাকে কিছু সহায়তা করা হবে।