
You must need to login..!
Description
স্টাফ রিপোর্টার, বিএমটিভি নিউজঃ
জ্ঞাত আয় বর্হিভূত সম্পদ অর্জন ও মানিলন্ডারিং এর দায়ে ময়মনসিংহ কোতোয়ালি মডেল থানার প্রাক্তন ওসি গোলাম সরওয়ার ও তার ৩ পুত্রের বিরুদ্ধে অবশেষে আদালতে অভিযোগপত্র দায়েরের মঞ্জুরী অনুমোদন দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদকের প্রধান কার্যালয়। গত ২০২৪ সালের ৩০ ডিসেম্বর এই মঞ্জুরী অনুমোদন দেয় দুদক।
বিষয়টি নিশ্চিত করে দুদক ময়মনসিংহ বিভাগীয় কার্যালয়ের পরিচালক জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, অভিযোগের তদন্ত, অনুসন্ধান, যাচাই ও প্রমাণের পর দুদক মঞ্জুরীর অনুমোদন দিয়েছে। চাঞ্চল্যকর এই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুদক পরিচালক তালেবুর রহমান জানান, মঞ্জুরী অনুমোদনের পর আদালতে অভিযোগপত্র দাখিলের প্রক্রিয়া চলছে। অভিযোগপত্র দাখিলের পাশাপাশি ময়মনসিংহ নগরীসহ রাজধানী ঢাকা ও টাঙ্গাইলে ওসি গোলাম সরওয়ারের অগাধ সম্পদ ক্রোকেরও আবেদন করা হবে।
দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদকের দায়ের করা মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের দীর্ঘ এক বছর পর ময়মনসিংহের কোতোয়ালি মডেল থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা-ওসি গোলাম সরওয়ার ও তাঁর ৩ পুত্রের বিরুদ্ধে চার্জসীটের মঞ্জুরী আদেশ অনুমোদন দিয়েছে দুদক। ক্ষমতার অপব্যবহার, দুর্নীতি ও মানিলন্ডারিংয়ের অপরাধ সংক্রান্ত অভিযোগের দীর্ঘ অনুসন্ধান শেষে দুদকের বিভাগীয় কার্যালয় ময়মনসিংহের সাবেক উপ পরিচালক তালেবুর রহমান মামলা সমূহের তদন্ত প্রতিবেদন মঞ্জুরীর আদেশের জন্য গত ২০২৪ সালের জানুযারি মাসে ঢাকায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে পাঠান। গত আগষ্টে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর অভিযোগ ধামাচাপা দিতে ভোল পাল্টে নানা মহলে দৌড়ঝাপ ও স্থানীয় নেতাদের ধরাধরির কারনে মঞ্জুরি কিছুটা বিলম্বিত হলেও অবশেষে দুদক গত ২০২৪ সালের ৩০ ডিসেম্বর মঞ্জুরি অনুমোদন দেয়। এর আগে গোলাম সরওয়ার ও তার ৩ পুত্রের বিরুদ্ধে দুদক ময়মনসিংহ জেলা কার্যালয়ের সাবেক উপ পরিচালক রাম প্রসাদ মন্ডল বাদী হয়ে তদন্ত নম্বর ১২(ময়মন) তারিখ ২৯/০৫/২২, তদন্ত নম্বর ১৩(ময়মন) তারিখ ২৯/০৫/২২, তদন্ত নম্বর ১৪(ময়মন) তারিখ ৩০/০৫/২২ ও তদন্ত নম্বর ১৫(ময়মন) তারিখ ৩০/০৫/২২ দায়ের করেন। সব অভিযোগ অস্বীকার করে সাবেক ওসি গোলাম সরওয়ার জানান, ‘আমি আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। আদালতে কোন অভিযোগই প্রমাণ করতে পারবেনা দুদক’। বৈধভাবে উপার্জিত সমুদয় সম্পদের বিবরনী আদালতে তুলে ধরা হবে বলেও জানান তিনি।
পারিবারিকভাবে পাওয়া সম্পদ বিক্রি ও পেনশনের টাকা দিয়েই সব সম্পদ অর্জন করেছেন বলে বরাবরই দাবি করে আসছেন তিনি।
স্থানীয় সূত্র জানায়, জ্ঞাত আয় বর্হিভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে গত ২০২২ সালের ২৯ ও ৩০ মে ময়মনসিংহ কোতোয়ালি মডেল থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) গোলাম সরওয়ার এবং তাঁর তিন পুত্র এনামুল হক মাসুম, নাজমুল হক মারুফ ও মঞ্জুরুল হক মামুনের বিরুদ্ধে ময়মনসিংহের বিশেষ জজ আদালতে মামলা দায়ের করে দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক। দুদকের সমন্বিত ময়মনসিংহ জেলা কার্যালয়ের সাবেক উপ পরিচালক রাম প্রসাদ মন্ডল বাদী হয়ে এই মামলা দায়ের করেন।
মামলায় গোলাম সরওয়ার ও তার ৩ পুত্রের বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয় বর্হিভূত সম্পদ অর্জন ও মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগ আনা হয়। প্রাথমিক তদন্তে ৩ কোটি ৪৫ হাজার ৩৫৪ টাকার জ্ঞাত আয় বর্হিভূত সম্পদ অর্জনসহ মানিলন্ডারিংয়ের প্রমাণ পায় দুদক। এর মধ্যে গোলাম সরওয়ারের এক কোটি ৮৪ লাখ ৯৯ হাজার ৩৩ টাকা, পুত্র এনামুল হকের ৫৫ লাখ ৮৬ হাজার ৪৬৭ টাকা, নাজমুল হক মারুফের ৩০ লাখ ৫৬ হাজার ৯২৮ টাকা ও মঞ্জুরুল হক মামুনের নামে ২৯ লাখ ২ হাজার ৯২৬ টাকার জ্ঞাত আয় বর্হিভূত সম্পদের সন্ধান মেলে দুদকের অনুসন্ধ্যানে। অনুসন্ধানে দেখা যায় পুত্র এনামুল, নাজমুল ও মঞ্জুরুল অপ্রাপ্ত বয়স ও বেকার অবস্থায় এই সম্পদের মালিক হন। গত ২০২২ সালের গত ১৫ জুন ময়মনসিংহের জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক হেলাল উদ্দিন এর আদালতে গোলাম সরওয়ার আত্মসমর্পন করতে গেলে বিজ্ঞ বিচারক তাকে জেল হাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন। বতর্মানে গোলাম সওরয়ার ৩ পুত্রসহ বর্তমানে জামিনে রয়েছেন। পুলিশের কনস্টেবল থেকে পদোন্নতি পাওয়া ওসি গোলাম সরওয়ার ময়মনসিংহ কোতোয়ালি ও ভালুকা মডেল থানায় কর্তব্যরত অবস্থায় সম্পদের এই পাহাড় গড়ে তোলেন। ওসি গোলাম সরওয়ার ও তিন পুত্রের জ্ঞাত আয় বর্হিভূত এই সম্পদ সরকারের জব্ধ করার দাবি উঠে।
জানা গেছে, সাবেক পুলিশ পরিদর্শক গোলাম সরওয়ার রাজধানী ঢাকার আদাবরের শেকেরটেক এলাকার শ্যামলী হাউজিং এর ছয় নম্বর সড়কে বি-৪৮ হোল্ডিংয়ে আট তলা বিলাস বহুল বাড়ি নির্মাণ করেছেন। স্থানীয়রা পুলিশ কর্মকর্তার বিলাসবহুল এই বাড়ি নির্মাণ নিয়ে নানা প্রশ্ন তুলেছেন। ফ্য¬াটের বেশিরভাগ ভাড়া দেয়া হয়েছে। ময়মনসিংহে কর্মরত অবস্থায় গোলাম সরওয়ার এই বাড়িটি নির্মাণ করেন বলে জানায় স্থানীয়রা। ঢাকার আদাবরের মতো এলাকায় জায়গা কিনে আটতলার বাড়ি করতে ২০-৩০ কোটি টাকা কী করে পেলো ওসি গোলাম সরওয়ার সেটিই বড় রহস্য। ঢাকার বাইরে ময়মনসিংহ নগরীর চরপাড়া নয়াপাড়া এলাকার ১০ তলা সৌহার্দ্য টাওয়ারে নিজ ও ৩ পুত্র এনামুল হক মাসুম, নাজমুল হক মারুফ ও মঞ্জুরুল হক মামুনের নামে ১২টি ফ্ল্যাট কিনেছেন। এসবের বাইরে ময়মনসিংহ নগরীর কৃষ্টপুর দৌলতমুন্সি রোডে ৪ শতাংশ জমিতে বাড়ি, বলাশপুর এলাকায় ১৫ শতাংশ জমি, শিকারীকান্দা এলাকায় ২০ শতাংশ জমি এবং টাঙ্গাইলের কালিহাতি উপজেলা সাব রেজিষ্ট্রার অফিসের পাশে ২০ শতাংশ জমিতে বাড়ি নির্মাণ করেছেন গোলাম সরওয়ার। নিজ গ্রামেও প্রচুর জমি কিনেছেন বলে জানিয়েছে এলাকাবাসী। এসব সম্পদের মূল্য অর্ধ শত কোটি টাকা বলে জানিয়েছে স্থানীয় সূত্র। এসবের বাইরে স্ত্রী সন্তানসহ নামে বেনামে আরও অগাধ সম্পদ রয়েছে সাবেক পুলিশ পরিদর্শক গোলাম সরওয়ারের।
পুলিশের এই কর্মকর্তা সর্বশেষ গত ২০১৫-২০১৬ সালে ময়মনসিংহ কোতোয়ালি মডেল থানায় পুলিশ পরিদর্শক(ওসি) হিসেবে অবসরে যান।