পাগলা মসজিদের দান বাক্সে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে দানের পরিমাণঃ মিললো ৯ কোটি ১৭ লাখ টাকা

image

You must need to login..!

Description

আশরাফুল ইসলাম, কিশোরগঞ্জ থেকে

কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদের দান সিন্দুকগুলো যেন টাকার খনি হয়ে ওঠেছে। প্রতিবার খুললেই পাওয়া যায় কয়েক কোটি টাকা। সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে দানের পরিমাণ। এ কারণে প্রতিবারই বাড়ানো হয় দান সিন্দুকের সংখ্যা। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। নির্ধারিত ১০টি দানসিন্দুক খোলার আগেই পূর্ণ হয়ে যাওয়ায় দানবাক্স হিসেবে যুক্ত করা হয় একটি ট্রাঙ্ক। এসব উপচে পড়ে কাড়ি কাড়ি টাকায়। ফলে এবারও দানবাক্সের টাকার নতুন রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে। পাওয়া গেছে ৯ কোটি ১৭ লাখ ৮০ হাজার ৬৮৭ টাকা। দান সিন্দুকগুলো শুধু টাকাতেই পূর্ণ ছিলো না। ছিলো স্বর্ণালঙ্কার ও বৈদেশিক মুদ্রাও। সেসবও অন্যান্যবারের চেয়ে বেশি পরিমাণে পাওয়া গেছে। শত ভরির উপরে স্বর্ণালঙ্কারের মধ্যে রয়েছে সোনা, রূপা ও হীরে। দিনার, ইউরো, ডলারসহ বিভিন্ন দেশের মুদ্রার সংখ্যাও ছিলো এবার সর্বোচ্চ। এছাড়া মিলেছে মানতকারীদের ইচ্ছেপূরণের হাজারো চিঠি। এবার এসব চিঠিতে ছিলো রাজনৈতিক বিভিন্ন আকাঙ্ক্ষার কথাও। শনিবার পাগলা মসজিদের এসব দানসিন্দুকগুলো খোলা হয়। সকাল ৭টায় মসজিদটির ১০টি দানসিন্দুক এবং একটি ট্রাঙ্ক খোলার মধ্য দিয়ে টাকা গণনার কাজ শুরু করা হয়। প্রথমে টাকাগুলো লোহার সিন্দুক থেকে বের করে বস্তায় ভরা হয়। এবার বস্তার হিসাবে বড় বস্তায় মোট ২৮ বস্তা টাকা পাওয়া যায়। পরে বস্তাগুলো মসজিদের দোতলায় নিয়ে মেঝেতে ঢালা হয়। এরপর শুরু হয় টাকা গণনার কাজ। এবার টাকা গণনার কাজেও সর্বোচ্চসংখ্যক মানুষকে যুক্ত করা হয়। মোট ৪৯৪ জনের একটি বিরাট টিম টাকা গণনার কাজে সম্পৃক্ত ছিলেন। পাগলা মসজিদ মাদরাসা ও আল জামিয়াতুল ইমদাদিয়ার মোট ২৮৬ জন ছাত্র এবং রূপালী ব্যাংকের ৮০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী মিলিয়ে মোট ৩৬৬ জন টাকা ভাজ করা ও গণনার কাজ করেন। সেনাবাহিনী, র‌্যাব, পুলিশ ও আনসারের ৭৫ জন সদস্য ছাড়াও মসজিদ-মাদরাসার ৩৫ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী তাদের সহায়তা করেন। টাকা গণনার এ এলাহী কাণ্ড তদারকি করেন ১৪ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। এরপরও গণনা শেষ হয় বিকাল পৌনে ৬টায়।এবার চার মাস ১২ দিন পর এ মসজিদের দানসিন্দুকগুলো খোলা হয়। এর আগে সর্বশেষ গত বছরের ৩০শে নভেম্বর দানসিন্দুক খোলা হয়েছিল। তখন রেকর্ড ২৯ বস্তা টাকা পাওয়া গিয়েছিল। পরে টাকা গণনা করে তৎকালীন সর্বোচ্চ ৮ কোটি ২১ লাখ ৩৪ হাজার ৩০৪ টাকা পাওয়া গিয়েছিল। এছাড়া পাওয়া গিয়েছিলো বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা, সোনা, রূপা ও হীরার গয়না। এবার মসজিদের নির্দিষ্ট ১০টি দানসিন্দুক অন্তত এক সপ্তাহ আগেই দানের টাকায় পূর্ণ হয়ে গিয়েছিলো। পরে দান অব্যাহত রাখার সুবিধার্থে গত বৃহস্পতিবার একটি ট্রাঙ্ক যুক্ত করা হয়। সকাল ৭টায় কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক ফৌজিয়া খান ও পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাছান চৌধুরীর নেতৃত্বে দান সিন্দুক খোলা হয়। অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও দানবাক্স খোলা কমিটির আহ্বায়ক জেসমিন আক্তার এবং ওয়াক্ফ হিসাব নিরীক্ষক মো. আলাউদ্দিন এ সময় উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মিজাবে রহমত, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোহাম্মদ নাহিদ হাসান খান, কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. এরশাদ মিয়া, রূপালী ব্যাংকের এজিএম মোহাম্মদ আলী হারেছী এবং দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটগণসহ মসজিদ কমিটির সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন মো. মোস্তাফিজুর রহমানের নেতৃত্বে সেনাসদস্যরাও এ সময় উপস্থিত ছিলেন।