ত্রিশালে ধান কাটার মৌসুমেও মিলছে না ভর্তুকির কম্বাইন হারভেস্টার

image

You must need to login..!

Description

ত্রিশাল (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি
ময়মনসিংহের ত্রিশালে বোরো ধান কাটার মৌসুম শুরু হলেও খোঁজ মিলছে না সরকারি ভর্তুকিতে বিতরণ করা আটটি কম্বাইন হারভেস্টারের। কৃষি যান্ত্রিকীকরণ প্রকল্পের আওতায় ৫০ শতাংশ ভর্তুকিতে বিতরণ করা যন্ত্রগুলো ন্যায্য কৃষকের হাতে না পৌঁছে চলে গেছে ভিন্ন খাতে। অভিযোগ উঠেছে, প্রকৃত কৃষক না হয়েও একদল প্রভাবশালী ব্যক্তি এসব যন্ত্র আত্মসাৎ করেছেন কেউ কেউ আবার বিক্রি করে দিয়েছেন অন্য জেলায়। ২০২০-২১ থেকে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের মধ্যে ত্রিশাল উপজেলায় প্রায় ২ কোটি ৪৮ লাখ টাকা মূল্যের আটটি কম্বাইন হারভেস্টার সরবরাহ করা হয়। এর মধ্যে সরকারের ভর্তুকি ছিল প্রায় ১ কোটি ২৪ লাখ টাকা। কিন্তু মাঠপর্যায়ে দেখা গেছে, কৃষকের চেয়ে ভ্যানচালক, ট্রাকচালক, এমনকি ওয়ার্কশপ মিস্ত্রির নামেই বরাদ্দ দেয়া হয়েছে এসব যন্ত্র।
কাঁঠাল ইউনিয়নের বিলবোকা গ্রামের ভ্যানচালক মোসলেম উদ্দিন জমি না থাকা সত্ত্বেও ২০২০-২১ সালে একটি কম্বাইন হারভেস্টার পান। তার ছেলে আলম মিয়া এনজিও ও আত্মীয়স্বজনের কাছ থেকে ধার করে ১০ লাখ টাকা পরিশোধ করলেও, এক বছরের মাথায় কোম্পানি যন্ত্রটি তুলে নেয়। অথচ এখনো কোম্পানির কাছে পড়ে আছে ২৪ লাখ টাকা। যার কোনো ব্যাখ্যা দিতে পারেনি কৃষি বিভাগ। একই ইউনিয়নের হাসেম উদ্দিন বাঁশ দিয়ে পণ্য তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করেন। জমির মালিক না হয়েও ২০২১-২২ অর্থবছরে তার নামে বরাদ্দ হয় একটি যন্ত্র। অভিযোগ রয়েছে, তার ভাগনি জামাই মনোয়ার কাদের ভোটার আইডি কার্ড ব্যবহার করে এই বরাদ্দ গ্রহণ করেন। মনোয়ার কাদেরের নাম একাধিকবার উঠে এসেছে। জানা যায়, তিনি শেরপুর জেলার বাসিন্দা, পেশায় ট্রাকচালক। কিন্তু ত্রিশালের কৃষি অফিসের একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে সম্পর্ক রেখে একাই দু’টি কম্বাইন হারভেস্টার নিজের দখলে নিয়েছেন। মৌসুমে তিনি এসব যন্ত্র নিয়ে চলে যান অন্য জেলায় চুক্তিভিত্তিক ধান কাটতে। স্থানীয় কৃষকরা অভিযোগ করছেন, এর ফলে তারা সুলভ মূল্যে যন্ত্র ব্যবহার করতে পারছেন না। এমনকি যেসব যন্ত্র দুর্ঘটনার কবলে পড়েছে, সেগুলোর ক্ষেত্রেও নেই কোনো দায়-দায়িত্বের স্পষ্টতা। শেফালি বেগমের নামে বরাদ্দ পাওয়া একটি যন্ত্রের নিচে পিষ্ট হয়ে এক নারী নিহত হওয়ার পর সেই যন্ত্র কোম্পানি তুলে নেয়। বছর দেড়েক পরও এর কিস্তি ও বকেয়া টাকা ঝুলে আছে। আরও জানা গেছে, মোক্ষপুর ইউনিয়নের যুবলীগ নেতা আমিমুর এহসান, সাখুয়া ইউনিয়নের রমজান আলী, হরিরামপুর ইউনিয়নের আনিছুজ্জামানসহ আরও কয়েকজনের নামে বরাদ্দ হওয়া যন্ত্রগুলোর হদিস মিলছে না। কেউ কেউ বলছেন, তারা কোনোদিন এই যন্ত্র নিজের চোখেও দেখেননি।
সবচেয়ে বিস্ময়কর তথ্য হলো- উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তানিয়া রহমানই জানেন না ঠিক কয়টি কম্বাইন হারভেস্টার বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। তিনি দাবি করেন, কাগজপত্র যাচাই করে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়, ভর্তুকির অর্থ সরাসরি যন্ত্র সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানে পাঠানো হয়। টাকা-পয়সার বিষয়ে তার কোনো হাত নেই।
উল্লেখ্য, সরকারি নীতিমতে এসব যন্ত্র বরাদ্দের পর তিন বছরের মধ্যে বিক্রি বা হস্তান্তর করা যাবে না। এমনকি কৃষিকাজে ব্যবহার না হলে বা যাচাইয়ে ব্যর্থ হলে ভর্তুকির টাকা সরকারি কোষাগারে ফেরত দিতে হবে এবং প্রয়োজনে আইনি ব্যবস্থাও নেয়া যেতে পারে। ত্রিশালে চলতি বছর ১৯ হাজার ৯৪৫ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। অথচ ভর্তুকির হারভেস্টার ব্যবহার করতে পারছেন না স্থানীয় কৃষকরা। ফলে একদিকে শ্রমিকের খরচ, অন্যদিকে যন্ত্র সুবিধা থেকে বঞ্চিত হওয়া উভয় সংকটেই রয়েছেন তারা। এ অনিয়মের সুষ্ঠু তদন্ত ও দায়ীদের শাস্তির দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় কৃষক ও সচেতন মহল।