বিএনপির নতুন সদস্য করতে হবে বুঝে শুনে – নজরুল ইসলাম খান

image

You must need to login..!

Description

এনায়েতুর রহমান, ময়মনসিংহ প্রতিনিধি :

ময়মনসিংহে বিএনপির নতুন সদস্য সংগ্রহ কার্যক্রম বুঝেশুনে করার আহবান জানিয়েছেন দলটির স্থায়ী কমিটির অন্যতম সদস্য মো: নজরুল ইসলাম খান। তিনি বলেন, দেশের প্রতি জেলা, মহানগর এবং প্রতিটি গ্রামে সদস্য সংগ্রহ ও নবায়ন কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে। তবে নতুন সদস্য বুঝে শুনে করতে হবে। জানতে হবে- তারা বিএনপির নীতি আদর্শ বিশ্বাস করে কী-না। যিনি নতুন সদস্য হতে চান- তিনি কী বিপদে এড়ে এসেছেন, না-কী ক্ষমতায় লোভে এসেছেন তাও বিবেচনায় নিতে হবে। এক্ষেত্রে নতুন সদস্য করার আগে পুরোনোদের মতামত নিতে হবে। যারা দীর্ঘদিন দলে সক্রিয় থেকে ত্যাগ স্বীকার করেছেন, তারা সামনে যাবেন। আর যারা পড়ে আসছেন তারা পিছনে থাকবেন। কারণ নেতা তাকে মানতে হবে, যার দলে অবদান বেশি।

বুধবার (২১ মে) দুপুর ২টায় ময়মনসিংহ নগরীর তারেক স্মৃতি অডিটরিয়ামে বিভাগীয় বিএনপির প্রাথমিক সদস্য সংগ্রহ ও নবায়ণ কর্মসূচির শুভ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

বিএনপির এই নেতা আরও বলেন, ফ্যাসিবাদের পতনের পর আমরা যারা ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলনে ছিলাম, তারা সবাই মিলে একটি অন্তবর্তীকালীন সরকারের কাছে দায়িত্ব দিয়েছি। বিগত সাড়ে ৯ মাসে ধরে বর্তমান অন্তবর্তী সরকারের দায়িত্বে আছে। এই সময়ে এখনো আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের সাফল্য বা ব্যর্তথা নিয়ে কোন প্রশ্ন তুলি নাই। কিন্তু কিছু কিছু বিষয়ে জনগনের মধ্যে প্রশ্ন উঠেছে, সরকারে থেকে বিশেষ কোন রাজনৈতিক দলের পক্ষে কাজ করার অভিযোগ উঠেছে। বিষয়টি ভালো লক্ষণ নয়। এটা আমাদের ভালো লাগে না।

বিএনপি নেতা ইশরাকের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, নির্বাচনী ট্রাইবুনাল রায় দেওয়ার পরও প্রশানসিক ক্ষমতায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে যিনি মেয়র পদে দায়িত্ব পেয়েছেন তাকে দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে না। যে নির্বাচন কমিশনকে এই সরকার নিয়োগ দিয়েছেন, সেই নির্বাচন কমিশন স্বাধীনভাবে তাদের মতামত ব্যক্ত করলেও তাদেক হুমকি দেওয়ার জন্য ঘেরাও কর্মসূচি ঘোষনা দেওয়া হচ্ছে। বিষয়টি ভালো লক্ষণ না। দেশের বৃহৎ রাজনৈতিক দল হিসাবে আমরা বিভিন্ন সময় এই অন্তবর্তী সরকারের সঙ্গে স্বাক্ষাৎ করে আমরা আমাদের মতামত ব্যক্ত করেছি। কিন্তু অনেক কথাই কার্যকর হচ্ছে না।

সংস্কার ও নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, দীর্ঘ লড়াই সংগ্রামে দেশের লক্ষ লক্ষ মানুষ জেল-জুলুম সহ্য করে যে ক্ষেত্রে প্রস্তুত করেছিল। সেই ক্ষেত্রে জুলাই-আগষ্টের ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ফ্যাসিবাদের পতন হয়েছে। কিন্তু ফ্যাসিষ্ট সরকার পালিয়ে গেলেও এখনো আমাদের আন্দোলনের মূল লক্ষ পূরণে হয়নি। আংশিক দাবি আদায় হয়েছে। এখন প্রয়োজন জাতীয় সংসদ র্নিবাচনের। যেখানে আইন প্রনয়ন করে সংস্কার করা যায়। স্থানীয় সরকার গনতন্ত্র পুন:প্রতিষ্ঠার মাধ্যম হতে পারে না। আমরা বলেছি- ডিসেম্বরে জাতীয় সংসদ নির্বাচন দেওয়া হোক। নির্বাচন কমিশন বলছে- জুনের মধ্যে তারা প্রস্তুত। আবারও সংস্কারও চায়। বিএনপির ৩১ দফায় রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের কথা বলা হয়েছে।
ক্ষমতার ভারসাম্য নিয়ে আসতে হবে জানিয়েছে এই বিএনপি নেতা আরও বলেন, বিএনপি যখন সংস্কারের কথা বলেছে তখন বাংলাদেশের কোন দল সংস্কারের প্রস্তাব করেনি। তখন অনেক দলের জন্মও হয়নি। কিন্তু তারা এখন আলোচনা করে বিএনপি সংস্কারের পক্ষে না। তাদের জানতে হবে, বিএনপির জন্ম হয়েছে রাষ্ট্রের সংস্কারের জন্য। বর্তমান অন্তবর্তী সরকার যতগুলো সংস্কার কমিশন গঠন করেছে তা সব বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ঘোষিত ৩১ দফায় আছে। বরং অনেক বাদ পড়েছে। আগামী দিনে বিএনপি জনগনের ভোটে রাষ্ট্র ক্ষমতার দায়িত্ব পেলে এসব সংস্কার করবে। বিএনপি থেকে বলা হয়েছে যে- আমাদের থেকে ভালো কোন প্রস্তাব কেউ করলে বিএনপি তা সাদরে গ্রহন করবে।

বিএনপির কর্মী হিসাবে গর্ববোধ করার অনেক কিছু আছে জানিয়ে নজরুল ইসলাম খান বলেন, বিএনপির কর্মী হিসাবে গর্ব করার অনেক কিছু আছে। বিচার বিভাগ স্বাধীন করেছে বিএনপি। মিডিয়ার স্বাধীনতা অবাধ করেছে। রুদ্ধ অর্থনীতিকে মুক্ত অর্তনীতিতে পরিণত করেছে। খাদ্য উৎপাদনের সূচনা, পোষাক, রেমিটেন্সের সূচনা বিএনপির হাত ধরে। পল্লীবিদ্যুৎ, সমুদ্রে মাছ আহরণ, নারী শিক্ষা, উপবৃত্তি, শিক্ষার জন্য খাদ্য, সমবায় প্রতিষ্ঠা, গ্রাম সরকার গঠন সব করেছে বিএনপি। এ সময় বিএনপি নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আল্লাহর ওয়াস্তে আপনারা একটু পড়াশোনা করেন। বিএনপির কর্মকান্ড সর্ম্পকে অনেক জানার আছে। তাহলে বিএনপি নিয়ে কারো কথা বলার সাহস হবে না।

এ সময় নজরুল ইসলাম খান বলেন, যারা দেশের জন্য জীবন দিয়েছে, তাদের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে আমরা শান্তিপূর্নভাবে ক্ষমতার পরিবর্তন চাই। কিন্তু কেউ কেউ সরকারকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করছে। দেশের মানুষের আকাঙ্খার দিকে তাকান। বুঝুন তারা কী চায়।

অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মো: শরীফুল আলম বলেন, পতিত স্বৈরাচারের কোন লোক বিএনপির সদস্য হতে পারবে না। তারা কোনভাবেই গ্রহনযোগ্য হতে পারে না। তারা খুনি, তাদের হাতে রক্তের দাগ এখনো লেগে আছে। তাদের কোন সদস্যের ঠাঁয় বিএনপিতে হতে পারে না। যদি কেউ জেনে বা না জেনে ভুলে ফ্যাসিষ্ট দোসরদের দলের সদস্য করেন এবং তা নিয়ে যদি অভিযোগ উঠে, সেই অভিযোগ প্রমাণ হলে তাঁর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ কারণেই সতর্কতার সহিত বিএনপির সদস্য সংগ্রহ এবং নবায়ন কার্যক্রম সম্মন্ন করতে হবে।

এ সময় বিএনপির নির্বাহী কমিটির সহসাংগঠনিক সম্পাদক শাহ ওয়ারেস আলী মামুন এবং আবু ওয়াহাব আকন্দ ওয়াহিদের যৌথ সঞ্চালনায় বিশেষ অতিথি হিসাবে বক্তব্য রাখেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির কোষাধক্ষ মো: রাশিদুজ্জামান মিল্লাত। এছাড়াও বক্তব্য রাখেন মহানগর বিএনপির আহবায়ক অধ্যাপক একেএম শফিকুল ইসলাম, দক্ষিণ জেলা বিএনপির সভাপতি আলহাজ্ব জাকির হোসেন বাবলু, উত্তর জেলা বিএনপির আহবায়ক অধ্যাপক একেএম এনায়েত উল্লাহ কালাম, সদস্য সচিব মোতাহার হোসেন তালুকদার, দক্ষিণ জেলা বিএনপির সদস্য সচিব রোকনুজ্জামান সরকার রোকন, সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক আলমগীর মাহমুদ আলমসহ নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ, জামালপুর এবং শেরপুর জেলা বিএনপির শীর্ষ নেতৃবৃন্দ।

উদ্বোধন শেষে উপস্থিত বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদল ও মহিলা দলসহ অঙ্গ সংগঠনের নেতৃবৃন্দ অতিথিবৃন্দের কাছে সদস্য ফরম ও ২০ টাকা জমা দিয়ে তাদের সদস্য পদ নবায়ন করেন। পর্যায়ক্রমে ময়মনসিংহ মহানগরসহ বিভাগের প্রতিটি জেলায় অনুষ্ঠানিকভাবে সদস্য সংগ্রহ ও নবায়ণ কার্যক্রম চলমান থাকবে, বলেও জানান সংশ্লিষ্টরা।