উমর ফারুক সেলিম, শেরপুর থেকে,
শেরপুর থেকে ময়মনসিংহ যাতায়াতের একমাত্র প্রধান সড়ক হলো শেরপুর-নকলা-ফুলপুর-ময়মনসিংহ। এই সড়কে দুই জেলার দূরত্ব ৬৯ কিলোমিটার। এই দূরত্ব কমিয়ে আনতে শেরপুর জেলা শহরের কানাশাখোলা বাজারের সংযোগ সড়ক থেকে শুরু হয়ে ভীমগঞ্জ বাজার-নারায়ণখোলা-রামভদ্রপুর-পরানগঞ্জ হয়ে ময়মনসিংহ মহানগরের রহমতপুরের সঙ্গে মিলিত হচ্ছে নতুন মহাসড়ক। এই নতুন বিকল্প সড়কে শেরপুর-ময়মনসিংহের দূরত্ব হবে ৪৯ কিলোমিটার। অর্থাৎ নতুন মহাসড়কটি নির্মিত হলে শেরপুর-ময়মনসিংহ যেতে দূরত্ব কমবে ২০ কিলোমিটার। ময়মনসিংহ পাটগুদাম ব্রহ্মপুত্র নদের চীন মৈত্রী সেতুর যানজটে অনেক সময় আটকে রোগীদের অনেক দুর্ভোগ পোহাতে হয়। কখনো এ যানজটের ফলে গাড়িতেই রোগীর মৃত্যু হয়। নতুন সড়কটি হলে শেরপুর চরাঞ্চলের মানুষের কষ্টটা লাঘব হবে।’
সরকারের পরিকল্পনা বিভাগ সূত্র জানায়, মহাসড়কটি নির্মাণ করা হচ্ছে মূলত শেরপুর-ময়মনসিংহ ব্রহ্মপুত্র নদের অববাহিকার অবহেলিত বিশাল চরাঞ্চলকে ঘিরে। এতে পিছিয়ে পড়া চরাঞ্চলবাসীর জীবন-জীবিকায় নতুন গতি আনবে। এই মহাসড়ক ঘিরে চরের বুকে স্থাপিত হবে নতুন নতুন ভারী ও মাঝারি শিল্পকারখানা। বাড়বে কর্মসংস্থান ও মাথাপিছু আয়। চরাঞ্চলের বিশাল উৎপাদিত কৃষিজ পণ্য সহজেই পৌঁছে যাবে ময়মনসিংহ-ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে। এই মহাসড়ককে ঘিরে পার্শ্ববর্তী কুড়িগ্রাম জেলাসহ বিশাল এই অঞ্চলের মানুষের যোগাযোগসহ জীবন ব্যবস্থায় গতি আসবে।
শেরপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, সীমান্তবর্তী এই জেলার সঙ্গে বিভাগীয় শহর ময়মনসিংহের দ্রুত যোগাযোগ ও অর্থনীতি-বাণিজ্যসহ সামগ্রিক উন্নয়নের জন্য মহাসড়কটি করা হচ্ছে। বড় বাজেটের দৃশ্যমান সড়ক উন্নয়ন প্রকল্প এই অঞ্চলে এটাই প্রথম। প্রকল্পটি এক হাজার ৪২ কোটি টাকা ব্যয়ে বাস্তবায়নের দায়িত্ব পালন করছে শেরপুর ও ময়মনসিংহ সড়ক ও জনপথ বিভাগ। কাজ সম্পন্ন হতে সময় লাগবে দুই বছরেরও বেশি। মহাসড়কের দৈর্ঘ্য হবে ৪৪.৯০৬ কিলোমিটার, প্রস্থ ৩৩.৭৮ ফুট। নির্মিত হবে ছোট-বড় অন্তত আটটি সেতু ও শতাধিক ছোট-মাঝারি কালভার্ট।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গুরুত্ব বিবেচনায় সড়কটির প্রথম উদ্যোগ নেয় বৃটিশ সরকার। শেরপুর থেকে চন্দ্রকোনার চরবসন্তি পর্যন্ত বিশাল এলাকাজুড়ে মহাসড়কের জন্য জমি অধিগ্রহণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। আদালতের নির্দেশে ১৯৫২/৫৩ সালে জমি অধিগ্রহণের কাজ শেষ হয়। বাংলাদেশ সরকার নতুন ওই যোগাযোগের বাস্তব রূপ দিতে মেগা পরিকল্পনা করে বছরচারেক আগে। আর কাজ শুরু হয় গত বছরের ২২ আগস্টে।
সেতু নির্মাণে বড় বাধা ছিল ব্রহ্মপুত্র। ৩৫৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ময়মনসিংহের পরানগঞ্জ-রহমতপুরের ব্রহ্মপুত্র নদ ও রেললাইনের ওপর দিয়ে নির্মাণ করা হচ্ছে ১৪৭১ মিটারের বিশাল দৃষ্টিনন্দন এই সেতু। কাজ শেষ করতে সড়ক ও জনপথ বিভাগ দিনরাত কাজ করে যাচ্ছে।
ভীমগঞ্জের বাসিন্দা ব্যবসায়ী বোরহান উদ্দিন বলেন, ‘এ মহাসড়ক হলে যাতাযাতের সময় অনেক কমে যাবে। এতে ব্যবসা-বাণিজ্যের গতি বাড়বে। আমাদের ছেলেমেয়েদের ময়মনসিংহ শহরের ভালো প্রতিষ্ঠানে পড়াতে পারবো।’
চন্দ্রকোনা বাজারের ব্যবসায়ী মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘মহাসড়কটি হলে এলাকার মানুষজন খুব অল্প সময়ে ময়মনসিংহ মেডিকেলে চিকিৎসার সুযোগ পাবেন। আমরা সহজেই আমাদের কৃষিপণ্য ময়মনসিংহ শহরে নিয়ে বাজারজাত করতে পারবো। এতে পণ্যের সঠিক দাম পাওয়া যাবে।’
নারায়ণখোলা বাজারের বাসিন্দা মোশারফ হোসেন। তিনি বলেন, ‘রাস্তাটি হলে আমাদের দুর্ভোগ অনেকাংশে কমে যাবে। ময়মনসিংহ সেতুর যানজটে অনেক সময় আটকে রোগীদের অনেক হয়রানি পোহাতে হয়। কখনো এ যানজটের ফলে গাড়িতেই রোগীর মৃত্যু হয়। বিকল্প সড়ক হলে আমাদের কষ্টটা লাঘব হবে।’এ বিষয়ে শেরপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শাকিরুল ইসলাম বলেন, খুবই দ্রুতগতিতে মহাসড়কের কাজ চলছে। এরইমধ্যে সড়কের ৩৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে শিক্ষানগরী ময়মনসিংহ কাছে চলে আসায় মানুষজন কম খরচে উচ্চশিক্ষা নিতে পারবেন। পাশাপাশি ব্রহ্মপুত্রের চর অঞ্চলের বিশাল জনগোষ্ঠীর ভাগ্য পরিবর্তন হবে।’##