নান্দাইলে মুক্তিযোদ্ধা বানানোর কারিগর আওয়ামী লীগ নেতার খোঁজ মিলে না

নান্দাইলে মুক্তিযোদ্ধা বানানোর কারিগর আওয়ামী লীগ নেতার খোঁজ মিলে না

BMTV Desk No Comments

মোঃ রফিকুল ইসলাম খোকন নান্দাইল (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধিঃ

ময়মনসিংহের নান্দাইলে মুক্তিযোদ্ধা বানানোর কথা বলে টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে এক আওয়ামী লীগ নেতার বিরুদ্ধে । ৩৬ জুলাইয়ের পর থেকে এই নেতাকে খোঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। বিগত আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকাকালে অল্প সময়ে মুক্তিযোদ্ধা বানানোর কথা বলে ১২ জনের কাছ থেকে ১০ হাজার থেকে সর্বোচ্চ ২০ হাজার টাকা করে হাতিয়ে নেন আওয়ামী লীগ নেতা। কিন্তু গত তিন বছরেও মুক্তিযোদ্ধা না হওয়ায় সেই টাকা এখন উদ্ধারে মরিয়া ওই ১২ জন। এখন অভিযুক্ত আওয়ামী লীগ নেতাকেও খোঁজ করে পাওয়া যাচ্ছে না। অভিযোগের প্রেক্ষিতে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ওই আওয়ামী লীগ নেতা হচ্ছেন উপজেলার নান্দাইল ইউনিয়নের রসুলপুর গ্রামের মৃত আব্দুর রশিদ খানের ছেলে মামুন খান ওরফে মামুনুর রশিদ খান।
তিনি স্থানীয় আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা ও ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক ধর্মবিষয়ক সম্পাদক ছিলেন। ৫ আগস্টের পর থেকে তিনি গা-ঢাকা দিয়েছেন। এর পরই ১২ জনকে মুক্তিযোদ্ধা বানানোর নাম করে এক লাখ ৪০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ প্রকাশ হয়।
মুক্তিযোদ্ধা হওয়ার আবেদনকারী ১২ জন হলেন আলাউদ্দিন আজাদ, ডাঃ আবুল কাশেম, সেলিম খান, শামছুল ইসলাম, আবু সাঈদ, বাদল চন্দ্র দাস, আবুল কাশেম, ওমর উদ্দিন, আব্দুল কাদির, হাফিজুর রহমান, আবু সাঈদ ও আব্দুল জলিল।
তাদের মধ্যে ইতিমধ্যে দুজন মারা গিয়েছেন। মুক্তিযোদ্ধা হতে আগ্রহী আলাউদ্দিন আজাদ জানান, তিনি ২০২২ সালের ১ আগস্ট আওয়ামী লীগ নেতা মামুন খানের কাছে ১২ জন একসঙ্গে এক লাখ ৪০ হাজার টাকা দেন। কথা ছিল অনলাইনে আবেদন করে ইন্টারভিউ কার্ড ইস্যু করা হবে। এর মধ্যে কয়েক মাস পর মামুন খান ঢাকার একটি ১২ তলা ভবনের ৬ তলায় নিয়ে মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের পরিচয়ে বেশ কয়েকজন লোককে এনে পরিচয় করান। সেই সঙ্গে ঢাকায় ভালোমানের হোটেলে আপ্যায়ন করেন। ওই সময় বলা হয় মুক্তিযোদ্ধা তালিকাভুক্ত হলে প্রত্যেককেই আরো এক লাখ টাকা করে দিতে হবে। কিন্তু এর পর থেকে আর কোনো কাজ হয়নি। কিছুদিন পর জানতে চাইলে আওয়ামী লীগ নেতা মামুন খান বলেছিলেন, তার এক আত্মীয় সচিব ও জাতীয় পার্টির চুন্নুর মাধ্যমে দ্রুতই মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করাবেন। ঐ সময় অনেকদিন দিন অতিবাহিত হলেও কোন কাজ না হওয়ায় কাজ অথবা টাকার জন্য তাগাদা দিলে নানা ধরনের হুমকি দেওয়া হতো।
মুক্তিযোদ্ধা হতে টাকা দেওয়া চণ্ডীপাশা ইউনিয়নের আবু সাঈদ বলেন, ‘আমি দিনমজুরি করে আয়-রোজগার করি। এর মধ্যে ধারদেনা করে ১২ হাজার টাকা দিই আওয়ামী লীগ নেতা মামুন খানকে। কিন্তু এ বিষয়ে কিছু না করায় টাকা ফেরত চাইলে তিনি দিতে অস্বীকার করেন। থানায় যাওয়ার হুমকি দিলে কিছু টাকা ফেরত দেন।’

পৌর সদরের বাসস্ট্যান্ডে যাত্রীবাহী বাসের টিকেট বিক্রেতা বাদল চন্দ্র দাস জানান, তিনি পৌর সদরের একটি বাসস্ট্যান্ডে যাত্রীবাহী বাসের টিকিট বিক্রেতা। এই অবস্থায় মুক্তিযোদ্ধা হওয়ার জন্য মামুন খানকে ২০ হাজার টাকা দিয়েছেন। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই করতে পারেননি। এখন টাকা পেতে তাকে খোঁজ করলেও পাওয়া যায় না।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত আওয়ামী লীগ নেতা প্রথমে টাকা নেওয়ার কথা অস্বীকার করলেও পরবর্তীতে আংশিক টাকা ফেরত দেয়ার কথা স্বীকার করেন ।এ বিষয়ে জানতে চাইলে নান্দাইল উপজেলার সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মাজহারুল হক ফকির বলেন, ‘আওয়ামী লীগ নেতা মামুনকে টাকা দেয়া ঠিক হয়নি। তিনি কি মুক্তিযোদ্ধা বানাতে পারবেন?’

এ বিষয়ে নান্দাইল মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খন্দকার জালাল উদ্দিন মাহমুদ অভিযোগ পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, একজন কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। ঘটনার সত্যতা পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।###

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *