তারাকান্দায় বৃদ্ধের চুল ও দাড়ি কাটার ঘটনা ভাইরাল হওয়ায় পর থানায় মামলা

তারাকান্দায় বৃদ্ধের চুল ও দাড়ি কাটার ঘটনা ভাইরাল হওয়ায় পর থানায় মামলা

BMTV Desk No Comments

স্টাফ রিপোর্টার, বিএমটিভি নিউজঃ

ময়মনসিংহের তারাকান্দায় বৃদ্ধ হালিম উদ্দিন আকন্দের (৭০) চুল ও দাড়ি কাটার ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়ায় পর থানায় মামলা হয়েছে। এতে চুল-দাড়ি কাটা ‘হিউম্যান সার্ভিস বাংলাদেশ’ নামক সংগঠনের দায়িত্বশীল ব্যক্তিবর্গ এবং স্থানীয় সহযোগী কয়েকজনকে আসামি করা হয়।শনিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) দুপুরে তারাকান্দা থানায় ভুক্তভোগীর ছেলে মো. শহীদ আকন্দ বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন।

তদন্তের স্বার্থে আসামিদের নাম ও পরিচয় এখন প্রকাশ করা হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. টিপু সুলতান। তিনি বলেন, ঘটনাটি প্রায় চার মাস আগের। তবে সম্প্রতি ওই ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়ায় দেশজুড়ে ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়। বিষয়টি জানার পর আমরা ভুক্তভোগী পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। তারা এ ঘটনার বিচার চেয়ে থানায় মামলা দায়ের করেছে। ইতোমধ্যে মামলার তদন্ত কার্যক্রম শুরু হয়েছে বলেও জানান ওসি।

এ ঘটনায় বিচার চেয়ে শনিবার থানায় হাজির হয়েছেন ভুক্তভোগী হালিম উদ্দিন আকন্দ। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন ছেলে মো. শহীদ আকন্দ, প্রতিবেশী নাতি আলীম উদ্দিন আকন্দ এবং ভাতিজা মো. ফারুক মিয়া। এ সময় ভুক্তভোগী হালিম উদ্দিন আকন্দ অভিযোগ করে বলেন, ‘ওইদিন (ঘটনার দিন) আমি বাজারে গেলে তারা আমাকে জোর করে ধরে আমার চুল ও দাড়ি কেটে দিয়েছে। বাজারে তখন লোক কম ছিল। আমি চেষ্টা করেও তাদের হাত থেকে রেহাই পাইনি। তখন আমি আল্লাহর কাছে বিচার দিয়েছি। এখনও আল্লাহার কাছে বিচার চাই। তবে পরিবারের কথায় এখন আমি থানায় অভিযোগ দিয়েছি, দেখি তারা কী বিচার করে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমার চুল-দাড়ি কাটার সময় বাইরের দুইজন লোকসহ প্রায় ৮ থেকে ৯ জন লোক ছিল। তাদের মধ্যে এলাকার নয়ন এবং মজনুও ছিল। তারা এখনো এলাকায় আছে। তারা আমাকে ভয় দেখাচ্ছে, আমার মান ইজ্জত মারছে। আমি বিচার চাই।’

এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, হালিম উদ্দিনের বাড়ি তারাকান্দা উপজেলার কোদালিয়া গ্রামে। গ্রামটি ময়মনসিংহ-নেত্রকোণা সড়কের পাশে। স্থানীয় বাসিন্দারা তাকে হালিম ফকির হিসেবেই চেনেন। হালিম উদ্দিন পাগল বা মানসিক রোগী নন। তিনি হজরত শাহজালাল (র.) ও শাহ্ পরানের (র.) ভক্ত। প্রায় ৩৭ বছর আগে ওনাদের মাজারে যাওয়ার পর থেকে তিনি বেশভূষায় বদলে যান। সেই থেকে তিনি চুল-দাড়ি কাটা বন্ধ করে দেন। দীর্ঘ ৩৭ বছর যাবৎ জট ছিল তার মাথায়।

সংসার জীবনে হালিম উদ্দিন পুত্র ও কন্যা সন্তানের জনক। এক সময় কৃষক ছিলেন। ধীরে ধীরে ফকিরি হালে চলে আসেন। টুকটাক কবিরাজিও করেন। এলাকায় স্বাভাবিক মানুষের মতোই তার আচরণ ও চলাফেরা। আছে হাট-বাজারেও যাতায়াত। নিজের মতো চলতেন। তাকে নিয়ে পরিবার বা এলাকাবাসীর কোনো অভিযোগ ছিল না। গত কোরবানির ঈদের কয়েক দিন আগে উপজেলার কাশিগঞ্জ বাজারে হঠাৎ করেই একদল লোক এসে তার দাড়ি ও চুল জোরপূর্বক কেটে দেন।

এ ঘটনার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিন্দার ঝড় বইছে। বিশেষ করে চুল কাটার সময় অসহায়ের মতো তিনি বলছিলেন, ‘আল্লাহ, তুই দেহিস’। তার এ বাক্যটিই এখন প্রতিবাদের ভাষা হয়ে উঠেছে।

ঘটনার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন ময়মনসিংহ জেলা বাউল সমিতির সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম আসলাম। তিনি বলেন, হালিম উদ্দিন কাদেরিয়া নকশবন্দিয়া অনুসারী। তাকে এমনভাবে হেনস্তা করা কোনোভাবেই কাম্য নয়। যারা এসব করে তাদের আইনের আওতায় আনা উচিত।

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *