প্রথম মানুষ আদম-হাওয়া (আ.) শয়তানের মতো অহংকার না করে লজ্জিত ও অনুতপ্ত হন

প্রথম মানুষ আদম-হাওয়া (আ.) শয়তানের মতো অহংকার না করে লজ্জিত ও অনুতপ্ত হন

BMTV Desk No Comments

ওমর ফারুক ফেরদৌস , আলেম ও লেখক

মানবজাতির আদি পিতা পৃথিবীর প্রথম মানুষ প্রথম নবী হজরত আদমকে (আ.) সৃষ্টি করে আল্লাহ তাআলা তাকে বিশেষভাবে সম্মানিত করেন। সব ফেরেশতাদের নির্দেশ দেন তাকে সম্মানসূচক সিজদা করতে। সব ফেরেশতারা আল্লাহর নির্দেশের আনুগত্য করে আদমকে (আ.) সিজদা করেন। কিন্তু শয়তান আল্লাহর নির্দেশ পালন করতে অস্বীকার করে বলে, আমি আদমের চেয়ে শ্রেষ্ঠ, আপনি আমাকে আগুন দিয়ে সৃষ্টি করেছেন, আদমকে সৃষ্টি করেছেন মাটি দিয়ে। ফলে শয়তানকে জান্নাত থেকে বের করে দেওয়া হয়।

কোরআনে এই ঘটনা বর্ণনা করে আল্লাহ তাআলা বলেন, আমি তোমাদের সৃষ্টি করেছি, এরপর আকার-অবয়ব, তৈরী করেছি। তারপর আমি ফেরেশতাদের বলেছি-আদমকে সিজদা করো। তখন সবাই সিজদা করেছে, কিন্তু ইবলিস সে সেজদাকারীদের অন্তর্ভূক্ত ছিল না। আল্লাহ বললেন, আমি যখন নির্দেশ দিয়েছি, তখন কিসে তোমাকে সিজদা করতে বারণ করল? সে বলল, আমি তার চাইতে শ্রেষ্ঠ। আপনি আমাকে আগুন দ্বারা সৃষ্টি করেছেন এবং তাকে সৃষ্টি করেছেন মাটির দ্বারা। আল্লাহ বললেন, তুমি এখান থেকে নেমে যাও। এখানে অহংকার করার কোনো অধিকার তোমার নাই। তাই বের হয়ে যাও। নিশ্চই হীনতমদের মাঝেই তোমার স্থান। (সুরা আরাফ: ১১-১৩)বিতাড়িত ও লাঞ্ছিত হয়ে শয়তান আদমকে (আ.) আল্লাহর রহমত ও সন্তুষ্টি থেকে দূরে সরিয়ে দেওয়ার উপায় খুঁজতে থাকে। আল্লাহ তাআলা আদম (আ.) ও তার স্ত্রী হাওয়াকে (আ.) পুরো জান্নাতে ঘুরে বেড়ানোর এবং সব ধরনের ফলফলাদি খাওয়ার অনুমতি দিয়েছিলেন। শুধু একটি গাছের কাছে যেতে নিষেধ করেছিলেন। শয়তান আদম-হাওয়াকে ওই গাছের ফল খাওয়ার কুমন্ত্রণা দেয়। সে তাদের বোঝায় ওই গাছের ফল খেলে তারা ফেরেশতা ও চিরজান্নাতি হয়ে যাবে। সে কসম করে বলে, তাদের কল্যাণকামনা থেকেই সে এই পরামর্শ দিচ্ছে।

আদম (আ.) ও হাওয়া (আ.) ধোঁকায় পড়ে যান এবং ওই ফল খান। ফলে আল্লাহ তাআলা তাদের ওপর অসন্তুষ্ট হন, তাদেরকে দুনিয়ায় নামিয়ে দেন।কিন্তু শয়তানের মতো তারা চিরবিতাড়িত হননি। শয়তানের সাথে তাদের পার্থক্য ছিল শয়তান ভুল করার পরও লজ্জিত হয়নি বরং অহংকার করে এবং নিজের ভুলের পক্ষে যুক্তি দেখায়। আদম-হাওয়া শয়তানের মতো অহংকার না করে লজ্জিত ও অনুতপ্ত হন।

দুনিয়ায় নামিয়ে দেওয়ার পর আল্লাহ তাআলা ক্ষমা প্রার্থনার জন্য কিছু সুন্দর বাক্য আদমের (আ.) অন্তরে ঢেলে দেন, তিনি সেগুলোর মাধ্যমে ক্ষমা প্রার্থনা করেন এবং আল্লাহ তাআলা তাকে ক্ষমা করে দেন। কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেছেন, আদম তার রবের পক্ষ থেকে কিছু বাণী পেল, ফলে আল্লাহ তার তওবা কবূল করলেন। নিশ্চয় তিনি তওবা কবুলকারী, অতি দয়ালু। (সুরা বাকারা: ৩৭)

এ আয়াতে আল্লাহ তাআলা যে ‘বাণীসমূহে’র কথা বলেছেন, তা এক বা একাধিক দোয়া হতে পারে। অনেকের মতে কোরআনে বর্ণিত এ দোয়াটি সেই বাণীসমূহের অন্যতম: বাংলা উচ্চারণ: রাব্বানা জালামনা আনফুসানা ওয়া ইন লাম তাগফির লানা ওয়া তারহামনা লানাকুনান্না মিনাল খাসিরিন।

বাংলা অর্থ: হে আমাদের পালনকর্তা! আমরা নিজেদের ওপর জুলম করেছি, যদি আপনি আমাদের ক্ষমা না করেন এবং আমাদের প্রতি অনুগ্রহ না করেন, তবে আমরা অবশ্যই অবশ্যই ধ্বংস হয়ে যাব। (সুরা আরাফ: ২৩)

আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে আরেকটি দোয়া বর্ণিত হয়েছে যে দোয়াটি তিনি করেছিলেন কাবায় পৌঁছে। নবীজি (সা.) বলেন, আল্লাহ তাআলা যখন আদমকে (আ.) পৃথিবীতে নামিয়ে দিলেন, তখন তিনি কাবার কাছে এসে দুই রাকাত নামাজ আদায় করলেন। তখন আল্লাহ তাআলা তার অন্তরে এই দোয়াটি ঢেলে দিলেন:বাংলা উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নাকা তা’লামু সারীরাতী ওয়া আলানিয়্যাতী ফাক্ববাল মা’যিরাতী ওয়া তা’লামু হাজাতী ফা’আত্বিনী সু’লী ওয়া তা’লামু মা ফি নাফসী ফাগ্ফিরলী যানবী। আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা ঈমানান ইউবাশিরু ক্বালবী, ওয়া ইয়াক্বীনান সাদিক্বান হাত্তা আ’লামা আন্নাহু লা ইউসীবুনী ইল্লা মা কাতাবতাহু লী ওয়া রিদ্বান বিমা কাসামতাহু লী।

বাংলা অর্থ: হে আল্লাহ! আপনি আমার গোপন ও প্রকাশ্য সব কিছু জানেন, তাই আমার ওজর গ্রহণ করুন। আপনি আমার প্রয়োজন জানেন, তাই আমাকে আমার প্রয়োজনীয় জিনিস দিন। আপনি জানেন আমার অন্তরে কী আছে, তাই আপনি আমার গুনাহ ক্ষমা করুন। হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে এমন ইমান চাই, যা আমার অন্তরে গভীরভাবে প্রবেশ করবে, এমন সত্যিকার ইয়াকিন চাই যার মাধ্যমে আমি জানব, আমার জন্য যা নির্ধারিত হয়েছে তা ছাড়া কিছুই আমার সঙ্গে ঘটবে না, আর চাই আপনি আমার জন্য যা নির্ধারণ করেছেন তা নিয়ে যেন সন্তুষ্ট থাকতে পারি।

নবীজি (সা.) বলেন, এরপর আল্লাহ তাআলা আদমের কাছে (আ.) ওহি পাঠালেন, হে আদম! আমি তোমার তওবা কবুল করেছি, তোমার গুনাহ মাফ করে দিয়েছি। যে কেউ এই দোয়া করবে, আমি তার গুনাহ ক্ষমা করব, তার প্রয়োজনীয় বিষয়গুলোতে তাকে যথেষ্ট করব, তার কাছ থেকে শয়তানকে দূরে রাখব, তার জন্য উত্তম লাভের ব্যবস্থা করব। দুনিয়ার সম্পদ ও মর্যাদা তার পেছনে ছুটবে যদি সে দুনিয়া নাও চায়। (তাবরানি ফিল আওসাত)   সুত্র  জাগোনিউজ২৪.কম

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *