স্টাফ রিপোর্টার, বিএমটিভি নিউজঃ
ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ৩রা নভেম্বরে যে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) নিয়ে অধ্যাদেশ জারি করা হয়েছে। আর তাতে আনা হয়েছে একগুচ্ছ পরিবর্তনও। একই সঙ্গে যোগ হয়েছে নতুন বিধানও।
এই সংশোধিত আরপিও ধরেই শিগগিরই দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালা চূড়ান্ত করবে নির্বাচন কমিশন।
নতুন আরপিও অনুযায়ী, আদালত ঘোষিত ফেরারি আসামি ভোট করতে পারবে না—এমন বিধান যোগ হয়েছে এবার। দেড় দশক পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংজ্ঞায় যেমন সশস্ত্র বাহিনী ফিরেছে, তেমনই ‘না’ ভোট ব্যবস্থা এবার এসেছে একক প্রার্থীর আসনে।
আচরণবিধি লঙ্ঘনে সর্বোচ্চ ছয় মাস দণ্ডের পাশাপাশি সর্বোচ্চ দেড় লাখ টাকা জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে। দলের ক্ষেত্রেও জরিমানার বিধান যুক্ত করা হয়েছে এতে।সমভোট পেলে হবে পুনঃভোট, জোটে করলেও ভোট করতে হবে নিজ দলের মার্কায়, জামানতের পরিমাণ বাড়িয়ে ৫০ হাজার টাকা পুনর্নির্ধারণ, দল আচরণবিধি লঙ্ঘন করলে সর্বোচ্চ দেড় লাখ টাকা জরিমানা, আইটি সাপোর্টেড পোস্টাল ভোটিং পদ্ধতি চালু করা, অনিয়মের কারণে পুরো আসনের ভোট বাতিলের বিধান, এআইয়ের অপব্যবহারকে নির্বাচনি অপরাধ হিসেবে গণ্য করা এবং হলফনামায় অসত্য তথ্য (ভোটে অযোগ্য এমন) দিলে নির্বাচিত হওয়ার পরও ইসি ব্যবস্থা নিতে পারবে বলে আরপিওতে বলা হয়েছে।
২ নম্বর অনুচ্ছেদে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংজ্ঞায় সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমান বাহিনীর নাম যুক্ত করা হয়েছে। ২০০১ ও ২০০৮ সালের ভোটে এমন বিধান ছিল। গত তিন নির্বাচনে বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তায় ছিল সশস্ত্র বাহিনী। এবার সংশোধন হওয়ায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা আরও দৃশ্যমান হতে পারে।
এছাড়া ভোটকেন্দ্র (পোলিং স্টেশন) প্রস্তুতের ক্ষমতা জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার হাতে রাখা হয়েছে। তারা তালিকা করে কমিশনের অনুমোদন নেবেন।
৯ নম্বর অনুচ্ছেদ পরিমার্জন করা হয়েছে; রিটার্নিং অফিসার কোনো ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করলে তা ইসিকে অবহিত করতে হবে।১২ নম্বর অনুচ্ছেদে যুক্ত করা হয়েছে—আদালত কাউকে ফেরারি বা পলাতক আসামি ঘোষণা করলে সংসদ সদস্য হওয়ার অযোগ্য হবেন। ফলে পলাতক আসমি প্রার্থী হতে পারবেন না এবার।
সংশ্লিষ্ট নির্বাচনি এলাকার কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি বা অন্য কোনো পদে থাকলেও প্রার্থী হওয়ার অযোগ্য হবেন।
কোনো প্রতিষ্ঠানের কাযনির্বাহী পদকে ‘লাভজনক’ পদ হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে আরপিওতে। ফলে প্রতিষ্ঠানের কাযনির্বাহী পদে থেকে ভোটে প্রার্থী হওয়ার সুযোগ থাকছে না।
হলফনামায় দেশে এবং বিদেশে আয়ের উৎস থাকলে তা জানাতে হবে; দাখিল করতে হবে সবশেষ বছরের রিটার্ন।
প্রার্থী হওয়ার অযোগ্য সংক্রান্ত হলনামায় অসত্য তথ্যের প্রমাণ পেলে ভোটের পরেও ইসির ব্যবস্থা নেয়ার ক্ষমতা যুক্ত করা হয়েছে।১৩ নম্বর অনুচ্ছেদে প্রার্থী হতে মনোনয়নপত্রের সঙ্গে দেয়া জামানতের পরিমাণ ৫০ হাজার টাকা করা হয়েছে। আগে এর পরিমাণ ছিল ২০ হাজার টাকা।
১৪ নম্বর অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, রিটার্নিং কর্মকর্তার আদেশে ক্ষুব্ধ হলে প্রার্থী বা ব্যাংকের পাশাপাশি আর্থিক প্রতিষ্ঠান বা কোনো সরকারি সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানও আপিল করার সুযোগ পাবে।
১৯ নম্বর অনুচ্ছেদে ‘না’ ভোটের বিধান যুক্ত করা হয়েছে। কোনো আসনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী যদি একজন থাকেন, তাহলে ব্যালট পেপারে ‘না’ ভোটের বিধান থাকবে। তবে দ্বিতীয়বার নির্বাচনের ক্ষেত্রেও শেষ পর্যন্ত একক প্রার্থী থাকলে তাকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ঘোষণা করা হবে।
২০ নম্বর সংশোধিত অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, নিবন্ধিত একাধিক রাজনৈতিক দল জোটগতভাবে নির্বাচন করলেও প্রার্থীকে নিজ দলের প্রতীক বা মার্কায় ভোট করতে হবে।
২১ নম্বর অনুচ্ছেদ পরিমার্জন করে বলা হয়েছে—নির্বাচনী এজেন্টকে অবশ্যই সংশ্লিষ্ট নির্বাচনি এলাকার ভোটার হতে হবে।
২৫ নম্বর অনুচ্ছেদে প্রিজাইডিং অফিসারের ক্ষমতা বাড়ানো হয়েছে। ভোটগ্রহণ বাধাগ্রস্ত বা বিঘ্নিত হওয়ার ক্ষেত্রে ভোট স্থগিতের পর তা নির্ধারিত সময়ে শুরু না করা গেলে বা ব্যালট বাক্স খোয়া বা ক্ষতিগ্রস্ত হলে প্রিজাইডিং অফিসার তা রিটার্নিং কর্মকর্তাকে জানাবেন। রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রে ভোটের নতুন দিন ঘোষণা করবে ইসি।
নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার না করার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসি, তার পরিপ্রেক্ষিতে ২৬ নম্বর অনুচ্ছেদের ‘ইভিএমে ভোট দেওয়ার বিধান’ বিলুপ্ত করা হয়েছে।
২৭ নম্বর অনুচ্ছেদে আইটি সাপোর্টেড পোস্টাল ভোটিংয়ের বিষয়টি যুক্ত করা হয়েছে। প্রবাসী, নির্বাচনি এলাকার বাইরে কর্মরত সরকারি চাকরিজীবী এবং কারাগারে বা হেফাজতে থাকা ব্যক্তি পোস্টাল ব্যালটের মাধ্যমে ভোট দিতে পারবেন।
২৯ নম্বর অনুচ্ছেদ পরিমার্জন করে ভোটকেন্দ্রে গণমাধ্যমকর্মীদের প্রবেশের সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে।
৩৬ নম্বর অনুচ্ছেদে ভোট গণনার সময় গণমাধ্যমকর্মীদের উপস্থিত থাকার বিধান যুক্ত করা হয়েছে।
৩৭ নম্বর অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, গণনার ফল যোগ করার আগে রিটার্নিং কর্মকর্তা ‘প্রয়োজন মনে করলে’ প্রিজাইডিং অফিসারের হাতে বাতিল হওয়া ভোট পরীক্ষা করতে পারবেন। তিনি যদি এমন ব্যালট পান—যা বাদ দেওয়া ঠিক হয়নি, সেটি সংশ্লিষ্ট প্রার্থীর ভোট হিসাবে গণ্য হবে।
৩৮ নম্বর অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, সমভোট পেলে লটারির পরিবর্তে পুনঃভোট করা যাবে। আগে সমভোট প্রাপ্ত প্রার্থীদের মধ্যে লটারি করে একজনকে নির্বাচিত করার বিধান ছিল।
নির্বাচনি ব্যয়ের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলকে যুক্ত করে ৪৪ নম্বর অনুচ্ছেদ পরিমার্জন করা হয়েছে। ভোটার প্রতি ব্যয় সর্বোচ্চ ১০ টাকা ঠিক করা হয়েছে। তবে মোট ব্যয়ের পরিমাণ ২৫ লাখ টাকার বেশি হওয়া যাবে না।
অনুদান হিসেবে পাওয়া অর্থের তালিকা বিস্তারিত ও সুস্পষ্ট করে ওয়েবসাইটে প্রকাশের বিধান যুক্ত করা হয়েছে।
উপ-পুলিশ মহাপরিদর্শক বা ডিআইজি পদমর্যাদা পর্যন্ত পুলিশ কর্মকর্তাদের বদলির তথ্য ইসিকে জানাতে হবে।
৭৩ নম্বর অনুচ্ছেদে মিথ্যা তথ্য, অপতথ্য, গুজব এবং এআইয়ের অপব্যবহার রোধে প্রার্থী ও দলের বিষয়ে অপরাধের বিধান যুক্ত করা হয়েছে।
৭৪, ৮১, ৮৭ ও ৮৯ নম্বর অনুচ্ছেদে ছোটখাট পরিমার্জন আনা হয়েছে।
দল নিবন্ধন ও আর্থিক অনুদানের বিষয় এবং নিবন্ধন স্থগিত হলে প্রতীক স্থগিতের বিষয় যুক্ত করা হয়েছে ৯০ নম্বর অনুচ্ছেদে।
৯১ নম্বর অনুচ্ছেদে অনিয়মের জন্য কেন্দ্রের ভোট বাতিলের পাশাপাশি প্রয়োজনে পুরো নির্বাচনি এলাকার ফল বাতিলের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে ইসিকে।