বৈষম্য বিরোধী আইন প্রণয়নের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর অঙ্গীকার চেয়েছেন অ্যাটর্নি জেনারেল

বৈষম্য বিরোধী আইন প্রণয়নের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর অঙ্গীকার চেয়েছেন অ্যাটর্নি জেনারেল

BMTV Desk No Comments

ঢাকা, ৮ নভেম্বর, ২০২৫ (বাসস):
অ্যাটর্নি জেনারেল (এজি) মো. আসাদুজ্জামান এক অনুষ্ঠানে বৈষম্য বিরোধী আইন প্রণয়নের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর অঙ্গীকার কামনা করেছেন।

তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলো যদি এই আইনটি প্রণয়নে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ না হয় তবে তারা আমাদের ভোট পাবে না। আমাদের একটি শক্তিশালী আইন প্রয়োজন, কারণ একটি অস্পষ্ট আইন কোনও প্রতিকার দিতে পারে না। আমাদের এই বিষয়ে আইন কমিশন এবং আইন মন্ত্রণালয়কে বাধ্য করতে হবে।’

আজ বিকেলে বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে বৈষম্য বিরোধী আইন প্রণয়নের উপর এক নাগরিক সংলাপে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখার সময় প্রধান রাষ্ট্রীয় আইন কর্মকর্তা এ কথা বলেন।

নাগরিক প্ল্যাটফর্ম এসডিজিস, বাংলাদেশ, বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট) ও সিটিজেনস ইনিশিয়েটিভ আয়োজিত এই সংলাপটি ইউএনডিপি এবং সুইস দূতাবাসের সহায়তায় অনুষ্ঠিত হয়।

এই মহৎ উদ্দেশ্য সাধনের জন্য আয়োজকদের প্রশংসা করে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, এই অনুষ্ঠানটি তার চিন্তাভাবনা, অনুভূতি, আশা এবং আকাঙ্ক্ষার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ।

বাংলাদেশের সংবিধানকে বিশ্বের অন্যতম সেরা সংবিধান হিসেবে আখ্যা দিয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান বলেন, তাঁর বিশ্বাসের মূল নিহিত রয়েছে মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত সংবিধানের উপর।

নাগরিক প্ল্যাটফর্মের আহ্বায়ক এবং সিপিডির বিশিষ্ট ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ব্লাস্টের নির্বাহী পরিচালক এবং সিনিয়র আইনবিদ ব্যারিস্টার সারা হোসেন।

সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন, এনসিপি’র যুগ্ম আহ্বায়ক খালিদ সাইফুল্লাহ, গণফোরামের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সুব্রত চৌধুরী, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ আল কাফি রতন, অর্থনীতিবিদ ডক্টর এস আর ওসমানী, ইউএনডিপি বাংলাদেশের সিনিয়র উপদেষ্টা ড্রাগান পপোভিচ এবং মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম সংলাপে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন।

গত বছর প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের একটি মন্তব্য স্মরণ করে ড. দেবপ্রিয় বলেন, ‘ক্ষমতা গ্রহণের পর যখন আমি তার সাথে দেখা করেছিলাম, তখন তিনি বলেছিলেন, এখনই সময় আপনার সমস্ত স্বপ্ন বাস্তবায়নের।’

তিনি বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি এটাই সময়। আমরা যদি ন্যায়বিচার চাই, তাহলে আমাদের নাগরিকদের সার্বিক সুরক্ষা দিতে হবে। আমাদের নাগরিকদের এই ধরনের সুরক্ষা দেওয়ার জন্য, এই আইনটি অপরিহার্য। আমাদের সকলের জন্য সার্বিক অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।’

অ্যাটর্নি জেনারেলের মতো, ব্যারিস্টার সারা হোসেনও বৈষম্য বিরোধী আইন প্রণয়নের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর কাছ থেকে অঙ্গীকার চান।

তিনি বলেন, ‘আমরা দাবি করছি যে এটি রাজনৈতিক দলগুলোর নির্বাচনী ইশতেহারে যুক্ত করা হোক। আমরা অন্তর্র্বর্তীকালীন সরকারের কাছ থেকেও তাদের অবশিষ্ট সময়ে মধ্যে এ ব্যাপারে একটি উদ্যোগ দেখতে চাই।’

সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এবং অ্যাটর্নি জেনারেলকে আইনটি প্রণয়নের আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘বৈষম্য অব্যাহত থাকলে আমরা একটি সভ্য রাষ্ট্র গঠন করতে পারব না।’

বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনকে তার দলের সূচনার ভিত্তি হিসেবে অভিহিত করে, ন্যাশনাল সিটিজেন পার্টি (এনসিপি) এর যুগ্ম আহ্বায়ক খালিদ সাইফুল্লাহ বলেন, তারা কর্মসূচিতে উত্থাপিত বেশিরভাগ প্রস্তাবকেই সমর্থন করেন।

তবে, তিনি এই আইনের সুবিধাগুলো সম্পূর্ণরূপে উপলব্ধি করার জন্য সকল নাগরিকের জন্য পৃথক তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ এবং পরিচয় নিশ্চিত করার গুরুত্বের উপর জোর দেন।

সামাজিক বৈষম্য মোকাবেলায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে সতর্ক করে অর্থনীতিবিদ ড. এস আর ওসমানী বলেন, যদি এটি করা না হয়, তাহলে গণতন্ত্রের ধ্বংসস্তূপ থেকে একনায়কতন্ত্রের দানবের উত্থানের ঝুঁকি থেকেই যাবে।

হিজড়া, চা শ্রমিক এবং হরিজনের মতো বিভিন্ন প্রান্তিক সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিরা অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন, এই বিষয়ে তাদের উদ্বেগ এবং পরামর্শ উত্থাপন করেন।

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *