You must need to login..!
Description
ঈশ্বরগঞ্জ (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি
৬৫ বছরের খাইরুন্নেছা নামের এক বৃদ্ধাকে সরকারি ঘর দিবে বলে বাড়ির জায়গা লিখে নিয়েছে স্থানীয় সুরুজ মিয়া নামের এক সাবেক মেম্বার। পরে সেই জায়গা দখল করতে গেলে বাঁধা দেওয়ায় বৃদ্ধাকে মারধর করে ওই মেম্বার। এমন ঘটনাটি ঘটেছে ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার সোহাগী ইউনিয়নের হাটুলিয়া গ্রামে। ইতিমধ্যে বৃদ্ধাকে মারধরের ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ পাওয়ায় সাবেক মেম্বারের বিচার দাবি জানাচ্ছে হাজারো জনতা। বিষয়টি নিয়ে সোমবার ১৮ জুলাই রাতে থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়। এঘটনায় মঙ্গলবার রাতে দুইজনকে গ্রেফতার করেছে ঈশ্বরগঞ্জ থানা পুলিশ।
জানা যায়, উপজেলার সোহাগী ইউনিয়নের হাটুলিয়া গ্রামের মৃত কিতাব আলীর স্ত্রী খাইরুন্নেছা (৬৫) তার দশ শতাংশ জায়গায় বসবাস করে আসছেন। তার বাড়ির পাশেই বসবাস করে সাবেক মেম্বার সুরুজ মিয়া। বৃদ্ধা খাইরুন্নেছার জায়গাটি নেওয়ার জন্য দীর্ঘদিন দরে বিভিন্ন ভাবে পায়তারা করতে থাকে সুরুজ। একপর্যায়ে বৃদ্ধাকে সরকারি ঘর দিবে বলে জানায় মেম্বার সুরুজ। সরকারি ঘরের পাওয়ার আশায় খাইরুন্নেছা জমির কাগজ, এনআইডি ও ছবি দেয় সুরুজকে। কাগজ পেয়ে সুরুজ মেম্বার তাকে ঘর দিবে বলে প্রতারণা করে ঈশ্বরগঞ্জ সাবরেজিস্ট্রার অফিসে নিয়ে খাইরুন্নেছার বাড়ির দশ শতাংশ জায়গা লিখে নেয়।
লিখে নেয়ার পর সুরুজ মিয়া খাইরুন্নেছাকে ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা দেয় এবং সরকারি ঘর আরো পরে দিবে বলে খাইরুন্নেছাকে বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়। কিছুদিন পর থেকে সুরুজ মিয়া এলাকার মানুষের কাছে বলাবলি শুরু করে খাইরুন্নেছার বাড়ি তিনি ক্রয় করেছেন। প্রতারণার বিষয়টি খাইরুন্নেছা ও তার ভাইয়ের সন্তানরা বুঝতে পেরে প্রতিবাদ শুরু করে এবং জায়গাটিতে দখল দিতে বাঁধা দেয় সুরুজকে।
এ বিষয়টি নিয়ে স্থানীয়ভাবে একটি সালিশ হলে সুরুজ মেম্বারকে ২ শতাংশ জায়গা নিয়ে বাকি ৮ শতাংশ জায়গা ফিরিয়ে দেওয়ার কথা বলা হয়। কিন্তু এমন সিদ্ধান্তে সুরুজ মেম্বার মেনে না নেওয়ায় সালিশ পন্ড হয়ে যায়। আর এই দিকে প্রতারক সুরুজ মেম্বার জায়গা দখল করতে বিভিন্ন পায়তারা শুরু করে। এরই জের ধরে গত শুক্রবার সকালে সুরুজ মিয়া তার দলবল নিয়ে বৃদ্ধা খাইরুন্নেছার জায়গায় গাছ লাগাতে আসে। এসময় বৃদ্ধা ও তার ভাইয়ের সন্তানরা গাছ লাগাতে বাঁধা দিলে তাদেরকে লাঠি দিয়ে বেধড়ক মারধর শুরু করে সুরুজ ও তার বাহীনি। এক পর্যায়ে সুরুজ মেম্বার বৃদ্ধা খাইরুন্নেছাকে মাটিতে ফেলে দিয়ে তার মাথার চুলের মুঠোয় ধরে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যায়। এসময় তাকে বাঁচাতে গিয়ে তার ভাইয়ের পাঁচ মেয়ে সন্তানদের মারধর করে মেম্বারের লোকজন। পরবর্তীতে স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নিয়ে যায়। পরে বিষয়টি নিয়ে বৃদ্ধার ভাতিজী শাহানা আক্তার বাদি হয়ে সোমবার রাতে ঈশ্বরগঞ্জ থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন। মঙ্গলবার রাতে অভিযান চালিয়ে সুরুজ মিয়ার ছেলে কাইয়ূম ও নাতি ফারুককে গ্রেফতার করেছে থানা পুলিশ। এঘটনার ভিডিও ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে প্রকাশ পাওয়ার পর থেকে সুরুজ সহ তার বাহীনির বিচার দাবী করছে গ্রামবাসী সহ হাজারো মানুষ।
ভুক্তভোগী খাইরুন্নেছা জানান, সুরুজ মেম্বার সরকারি ঘর দিবে বলে মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে তার বসতবাড়ির ১০ শতাংশ জায়গা লিখে নিয়ে যায়। সুরুজ মিয়া ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা দেয়ারর পর তিনি তাকে জিজ্ঞেস করেন এটা কিসের টাকা? তখন সুরুজ তাকে জানায়, বাড়ির সব জায়গা লিখে নিয়েছি এবং সরকারি ঘরের ব্যবস্থা করে দিচ্ছে। তখন তিনি বিষয়টি তার সাথে প্রতারনা হচ্ছে বুঝতে পেরে তিনি তার জায়গা ছাড়ে নাই। এরেই প্রক্ষিতে সুরুজ তার ববাহীনি ননিয়ে এসে তাকে ও তার ভাতিজিদেরকে মারধর করেছে, তিনি এর বিচার চান।
এদিকে সুরুজ মেম্বারের বাড়িতে গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি। তবে তার স্ত্রী রোকেয়া বেগম বলেন, আমরা আমাদের ক্রয়কৃত জমিতে গাছ লাগাতে গিয়েছিলাম। আর এমন সময় তারা এসে বাঁধা দেয়। এসময় দু’পক্ষের মাঝে একটু হাতাহাতি হয়ে যায়।
ঈশ্বরগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ পীরজাদা শেখ মোহাম্মদ মোস্তাছিনুর রহমান বলেন, এবিষয়ে একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।