বগুড়ায় করতোয়া নদীর সীমানা চিহ্নিত হওয়ায় দুই পাড়ের শত শত মানুষের মাঝে স্বস্তির নিঃশ্বাস

image

You must need to login..!

Description

স্টাফ রিপোর্টার, বগুড়া থেকে,  বগুড়া সদরের ঠেঙ্গামারা মৌজার করতোয়া নদীর সীমানা নির্ধারণে সরকারি যৌথ জরিপকার্য সম্পন্ন হয়েছে। গত ২৩ মার্চ বৃহস্পতিবার সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ জরিপ কার্য সম্পন্ন করেন। গত ২০ মার্চ নদীর জায়গা ভরাট করার অভিযোগে টিএমএসএস কে ১০ লাখ টাকা জরিমানা করার পর এ জরিপকার্য সম্পন্ন হলো। নিজস্ব জমি দাবি করে যেখানে দৃশ্যমান উচুঁ পিলার গেড়েছিল টিএমএসএস ঠিক সেখানেই নতুন করে সীমানা পিলার গেড়েছে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (বিডব্লিউবি)। এদিকে নদীর সীমানা চিহ্নিত হওয়ায় দুই পাড়ের শত শত মানুষের মাঝে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফিরে এসেছে। অন্যদিকে “নদীর এক ইঞ্চি জমিও দখল করেনি টিএমএসএস” বলে যে দাবি করেছিল সংস্থাটি তা সত্য বলে প্রমাণ হয়েছে বলছেন সচেতন নাগরিক এবং স্থানীয়  বাসিন্দারা।

ঘটনাস্থালে উপস্থিত আব্দুল গফুর নামের একজন কৃষক বলেন, “সরকারী মাপে প্রমাণ হলো টিএমএসএস নদীর কোন অংশ ভরাট করেনি।” ঘটনাস্থালের কাছাকাছি মমইন বিনোদন জগত পার্কে ভ্রমণে আসা বগুড়া সদরের বাসিন্দা সাবেক ব্যাংকার মো: জহির উদ্দিন বলেন, “সরকারী জরিপ এই সত্যকে প্রমাণ করে যে টিএমএসএস সর্বদা পরিবেশ রক্ষায় পরিবেশের প্রতি প্রতিশ্রæতিবদ্ধ এবং  তারা আইন লঙ্ঘন করেনি। প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে অভিযোগ যে মিথ্যা, ভিত্তিহীন এবং স্বার্থান্বেষী মহলের অপপ্রচার তা এখন স্পষ্ট।” বৃহস্পতিবার সকালে ঘটনা স্থলে গিয়ে দেখা যায়, প্রশাসনের কর্মকতা, সরকারি যৌথ জরিপকারী, দুই পাড়ের মানুষদের উপস্থিতি এবং আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সরব অবস্থানে পরিবেশ ছিল অনেকটাই যুদ্ধক্ষেত্র সাদৃশ্য। নদীর সীমানা পরিমাপের শুরুতেই হৈ হুল্লোড় করে টিএমএসএস কর্তৃক পুঁতিত সুউচ্চ সীমানা পিলার অপসারণ করে প্রশাসনের লোকজন। এসময় কিছু মানুষের মধ্যে দম্ভও দেখা যায় এই ভেবে যে আর কিছুক্ষণের মধ্যেই টিএমএসএস এর দাবি অসত্য বলে প্রতিষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। তবে পরিস্থিতি দুপুর গড়ালে তাদের ধারণা পাল্টে যায়। পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে চূড়ান্ত মাপ শেষে টিএমএসএস এর দাবি করা নিজস্ব জমি এবং পুঁতিত সীমানা পিলারই সরকারি যৌথ জরিপকারকরা করতোয়া নদীর সীমানা হিসেবে চিহ্নিত করেন। এসময় টিএমএসএস এর উপড়ে ফেলা সীমানা পিলারের স্থানেই তাদের নিজস্ব পিলার স্থাপন করে বিডবিøউডিবি। ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেছে, সরকারি পিলার গুলোতে লাল কালিতে ‘বিডবিøউডিবি’ লেখা যা টিএমএসএস এর পিলারের তুলনায় অনেক দূর্বল এবং ছোট। পাড়ে উপস্থিত স্থানীয় আফজাল মিয়া বলেন, “আর কয়েকদিন পরেই বর্ষা চলে আসবে। এতে পিলারগুলো ডুবে যাবে না হয় বানের পানিতে ভেসে যেতে পারে।”
এ ব্যাপারে টিএমএসএস এর নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপিকা ড. হোসনে আরা বেগম এর সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি ফোনে জানান, টিএমএসএস বিগত ২০১৩ সাল থেকে নদী পরিমাপের জন্য জেলা প্রশাসনের কাছে এ পর্যন্ত ১৭টি আবেদন করেছে। প্রশাসন থেকে সীমানা নির্দিষ্ট না করায় বিভিন্ন টিএমএসএস বিদ্বেষী মহল টিএমএসএস’র বিরুদ্ধে নদী ভরাট, নদী দখলের অপপ্রচার চালাচ্ছে। এসব কারণে সচেতন নাগরিকগণও ভুল বোঝাবুঝির স্বীকার হচ্ছেন। শাখারিয়া বনমালীপাড়ার কাঁঠালতলা ঘাট ঈদগাহ মাঠের ধারে নদীর সীমা এবং টিএমএসএস’র নিজস্ব জমির সীমা বিষয়ে টিএমএসএস’র বক্তব্যের প্রতি অনাস্থা, অবিশ্বাস জনিত কারণেই এত হৈ-হুল্লোড় হচ্ছে। বগুড়া সদর উপজেলার গোকুল থেকে শাজাহানপুর উপজেলার সুজাবাদ পর্যন্ত করতোয়া নদী পরিমাপ করে মজবুত সীমানা পিলার দেওয়ার জন্য বর্তমান জেলা প্রশাসক মহোদয় জোরালো নির্দেশ দিয়েছেন। এই নির্দেশ বাস্তবায়ন হলেই সাধারণ মানুষের ভুল বোঝাবুঝি বন্ধ হবে, পরশ্রীকাতরগণের ক্ষেত্র কমবে।
তিনি আরও জানান, টিএমএসএস’র মতো বহুধা কার্যক্রমেরত বেসরকারি সংস্থাকে সকলের সহায়তা করা উচিত। যেহেতু টিএমএসএস-ও বলছে নদী রক্ষা তাদের বাণিজ্যিক স্বার্থ, নৈতিক স্বার্থ, পরিবেশগত স্বার্থ। প্রশাসনিক ব্যক্তিবর্গের নিরপেক্ষ অভিভাবকের ভূমিকায় থাকলে এতো হৈ হুল্লোড় হতো না; প্রশাসন, আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর লোকজনের কর্মঘন্টা নষ্ট হতো না।
উল্লেখ্য, গত ২০ মার্চ নদীর জায়গা ভারাট করার অভিযোগে টিএমএসএস কে ১০ লাখ টাকা জরিমানা অনাদায়ে সংস্থার সিনিয়র সহকারী পরিচালক নজিবর রহমানকে ৩ মাসের কারাদণ্ড প্রদান করেন বগুড়া সদরের ইউএনও ফিরোজা পারভীন। পরে জাকিউল ইসলাম নামে অপর এক কর্মীকে কারাগারে প্রেরণ করেন। টিএমএসএস এর মতো ৪১ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টিকারী সংস্থার বিরুদ্ধে নদী দখলের অভিযোগ এনে এমন দণ্ড প্রদান ব্যাপক মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে।

প্রধান সম্পাদকঃ
মতিউল আলম

সম্পাদক ও প্রকাশকঃ
মাকসুদা আক্তার