স্টাফ রিপোর্টার, বিএমটিভি নিউজঃ
ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়ায় প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ন প্রকল্পের ঘর পাইয়ে দেয়ার কথা বলে ৪২ জন ভূমিহীন ও দুঃস্থদের নিকট হতে কয়েক লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযােগে প্রতারক চক্রের মূলহোতা মোঃ জামান মিয়া (৩৯)কে গ্রেফতার করেছে র্যাব-১৪। গতকাল রোববার রাত ১০টায় জেলার সদর থানার বাড়ার পাড় এলাকা হতে অভিযান চালিয়ে আসামী মোঃ জামান মিয়া (৩৯) কে গ্রেফতার করে র্যাব-১৪। আজ সোমবার দুপুরে ময়মনসিংহ নগরীরর র্যাব-১৪ প্রধান অফিসে উপ অধিনায়ক মেজর শিশির মাহমুদ তালুকদার এক প্রেস বিফ্রিংয়ে এ তথ্য জানান।
গ্রেফতারকৃত মোঃ জামান মিয়া (৩৯),ময়মনসিংহ সদর, বাড়ার পাড় গ্রামের মোঃ নুরুল ইসলামের পুত্র। ময়মনসিংহকে গ্রেফতার করে।
গ্রেফতারকৃত আসামীর নিকট হতে ০১) দুইটি কম্পিউটারে লেখা কাগজ ক। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, আশ্রয়ণ-২ প্রকল্প, তেজগাঁও, ঢাকা লেখা সম্বলিত ৪৪ জন ব্যক্তির নামের তালিকা খ। আশ্রয়ণের অধিকার, শেখ হাসিনার উপহার লেখাসহ ৪৪ জন ব্যক্তিরনামের তালিকা ০২) ৪৫ (পয়তাল্লিশ) টি জাতীয় পরিচয়পত্র এবং ০৩) ০১টি চেক উদ্ধারপূর্বক জব্দ করা হয়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ জানা যায় গ্রেফতারকৃত আসামী মোঃ জামান মিয়া দীর্ঘদিন যাবৎ গ্রামের নিরীহ মানুষের সরলতার সুযোগ নিয়ে
প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর পাইয়ে দেয়ার কথা বলে প্রলোভন দেখিয়ে প্রতারণামূলকভাবে অর্থ আত্মসাৎ করে আসছিলো। আসামী মোঃ জামান মিয়া প্রথম দিকে ০৬ বছর পূর্বে চুরখাই এলাকায় তদবির করে চেয়ারম্যানের নিকট থেকে সুমন নামের একজনকে একটি সরকারি ঘর বরাদ্দের ব্যবস্থা করে দেয়, এ সময় সুমনের নিকট থেকে তদবিরের জন্য ৩,০০০/- আদায় করে। এ ঘটনায় তার মধ্যে অসাধু উপায়ে হঠাৎ করে অনেক টাকা আয়ের নেশার সৃষ্টি হয়। পরবর্তিতে নিজ এলাকা ও আশেপাশের এলাকার বিভিন্ন লোকের নিকট থেকে সরকারি বিভিন্ন বরাদ্দ পাইয়ে দেয়ার কথা বলে প্রচুর অর্থ হাতিয়ে নেয়। তখন তার একজন আত্মীয় প্রতারণার বিষয়টি নিয়ে পুলিশের ভয় দেখালে কিছুদিন প্রতারণার কার্যক্রম থেকে নিজেকে সে দূরে রাখে। পরবর্তিতে ২০১৯ সালের শেষের দিকে নিজ এলাকা রেখে ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়ার পুটিজানা ইউনিয়নের ভূমিহীন ও দুঃস্থদেরকে প্রতারণার জন্য টার্গেট করে। প্রথম দিকে ভূমিহীন ও দুঃস্থদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রধানমন্ত্রীর তহবিল হতে আশ্রয়ন প্রকল্পের ঘর পাইয়ে দেয়ার প্রলোভন দেখাতে থাকে। আসামী মোঃ জামান মিয়া বলে আমাকে ৫,০০০/- টাকা দিলে আমি ঘর পাইয়ে দেবার ব্যবস্থা করব। প্রথমে পাকা ঘর পাইয়ে দেবার কথা বলে প্রত্যেকের নিকট থেকে ৫,০০০/- নেয় এবং ০৮ মাস সময় অপেক্ষা করতে বলে। এর কিছুদিন পর প্রত্যেকের নিকট থেকে আরো ১,০০০/- টাকা করে নেয়। সেই সময় ভুক্তভূগীদের বিশ্বাস ও আস্থা অর্জনের জন্য দুইটি কম্পিউটারে লেখা কাগজ গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, আশ্রয়ণ-২ প্রকল্প, তেজগাও, ঢাকা লেখা সম্বলিত ৪৪ জন ব্যক্তির নামের তালিকা প্রদান করে। আশ্রয়ণের অধিকার, শেখ হাসিনার উপহার লেখাসহ ৪৪ জন ব্যক্তির নামের তালিকা প্রদান করে। নামের তালিকা প্রদানের ১০ মাস পর নির্মাণ কাজের জন্য ইট, বালি এবং সিমেন্ট পরিবহণের জন্য খরচ বাবদ প্রত্যেকের নিকট থেকে আরো ১,০০০/- নেয়ায় ঐ এলাকায় ৪২ জন ভূমিহীন ও দুঃস্থদের নিকট থেকে মোট ২,৯৫,০০০/- হাতিয়ে নেয়। দীর্ঘদিন অপেক্ষা করার পর ভুক্তভূগীরা ঘর না পেয়ে অভিযুক্ত জামানের নিকট টাকা ফেরত চাইলে সে সময়ক্ষেপন করতে থাকে। তখন ভুক্তভূগীরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে খবর নিলে সমস্ত প্রতারণার বিষয়টি জানতে পারে। প্রাথমিকভাবে একজন সাধারন মানুষের জন্য ৭,০০০/- খুব কম টাকা মনে হলেও প্রকৃতপক্ষে একজন অসহায় দুঃস্থ গৃহহীন মানুষের জন্য এই টাকা যোগাড় করা অনেক কষ্টসাধ্য।
উক্ত বিষয়ে ধৃত আসামীর বিরুদ্ধে ময়মনসিংহ জেলার ফুলবাড়িয়া থানায় মামলা দায়ের কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।